ছেঁউড়িয়ায় সাধু-ভক্ততে পরিপূর্ণ আখড়াবাড়ি

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০২৩, ০৫:০৩ পিএম

ছেঁউড়িয়ায় লালন উৎসব। ছবি: কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

ছেঁউড়িয়ায় লালন উৎসব। ছবি: কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের ১৩৩তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে তিনদিনের লালন উৎসব। উৎসবকে ঘিরে দেশ বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে জড়ো হয়েছেন অসংখ্য বাউল, সাধু ও লালন ভক্ত। একতারা, দোতারা, ঢোল, খমক, খঞ্জনি আর বাঁশির সুরে মুখরিত এখন লালন ধাম।

কুষ্টিয়ার কালিগঙ্গা নদীর তীরে লালন মাজারের আশে পাশের সব পথ দিয়ে আসা নানা জাত ও মতের মানুষের স্রোত মিশেছে আখড়াবাড়ির আঙিনায়। একতারা, দোতরা, ডুগি-তবলা, খমক, খঞ্জনি আর বাঁশির সুরে মুখরিত এখন সাঁইজির আখড়াবাড়ি। দরাজ গলাই লালনের গানে মেতে উঠেছেন বাউল সাধুরা।

মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি- এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে লালনের মাজারের আশপাশে ও মরা কালী নদীর তীর ধরে বাউলরা ছোট ছোট আস্তানা গেড়ে সাঁইজিকে স্মরণ করছেন তারই লেখা গান গেয়ে। বাউল-ফকিরদের সঙ্গে কণ্ঠ মেলাচ্ছেন ভক্তসহ দর্শনার্থীরাও।

তিন দিনব্যাপী লালন স্মরণোৎসবকে ঘিরে যেন মানুষের ঢল নামে লালনের আখড়া বাড়িতে। শহরের সব রাস্তা গিয়ে মেশে আখড়া বাড়িতে। বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের তিন দিনব্যাপী স্মরণোৎসবকে ঘিরে সাধু-ভক্তদের পাদচারণায় মুখরিত এখন লালনের আখড়াবাড়ি।

লালন সাঁইজি তার বাণীতে বলেছেন, ‘যে নিজেকে চিনেছে, সে তার রবকে চিনেছে’ তাই স্রষ্টার সান্নিধ্য পেতে হলে নিজেকে চিনতে ও জানতে হবে, হতে হবে সহজ মানুষ, ভজতে হবে মানবকে। তবেই মিলবে স্রষ্টার দেখা। আর এজন্য প্রয়োজন সহজ মানুষের সান্নিধ্য। আবার ফকির লালন সাঁইজি নিজেকে দীনহীন কাঙ্গাল ভেবে মানুষকেই সবার ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছেন। তাইতো স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ করতে হলে সৃষ্টির সেরা মানবকে সাধন প্রয়োজন আর এমনটাই মনে করেন সাঁইজির ধামে আসা প্রবীণ সাধু মহরম শাহসহ ভক্তবৃন্দ। সাঁইজির টানে বিনা আমন্ত্রণে দেশ-বিদেশ থেকে লালন উৎসবে যোগ দিয়েছেন অসংখ্য সাধু. লালন ভক্ত ও অনুসারীরা।


মাজারে এসে তারা বিমোহিত। লালনের গান এ উৎসবের মূল প্রাণ। তাই গানেই বুদ হয়ে থাকেন সবাই। রাত শেষ হলেও যেন শেষ হতে চাই না সাঁইজির বাণী। যেন অপার হয়ে বসে থাকা পারে যাওয়ার আসায়। মঙ্গলবার বিকেলে অধিবাসের মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে সাধুসঙ্গ অনুষ্ঠান। বুধবার সকালে বাল্যসেবা এবং দুপুরে পূর্ণসেবা গ্রহণের মধ্যদিয়ে লালন সাঁইজির তিরোধান দিবসের সাধুসঙ্গ অনুষ্ঠান শেষ হবে। তবে মাজার প্রাঙ্গণে সাধুরা রয়ে যাবেন আরো কয়েকদিন। এছাড়াও তিনদিনের লালন উৎসব আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হবে আজ বৃহস্পতিবার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দার্শনিকে মাস্টার্স করা লালন গবেষক ফকির হৃদয় সাঁই বলেন, সাঁইজির রীতি অনুসারে রাতের বেলা অধিবাসের মধ্য দিয়ে সঙ্গ শুরু হয়। পরের দিন ‘পুণ্যসেবা’র মধ্য দিয়ে সাধুসঙ্গ শেষ করে আখড়াবাড়ি ত্যাগ করে থাকে বেশির ভাগ সাধু। প্রকৃত সাধুসঙ্গের অধিবাস শেষ হলেও লালন একাডেমি আয়োজিত মূল মঞ্চে লালনগীতি ও লালনমেলা চলে আরো চার দিন।’

বাউল সুফি সাজেদুল ইসলাম ডালিম বলেন, ‘মানব ধর্মই বড় ধর্ম। একসাথে এভাবে সাধুসঙ্গ করলে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। সাধু-গুরুর কৃপা ছাড়া মানুষ মুক্তি পেতে পারে না। তার কৃপায় মানুষ সঠিক পথ দেখে।’

কুষ্টিয়া লালন একাডেমির আয়োজনে এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রতিদিন সন্ধ্যায় লালন মঞ্চে আলোচনা শেষে লালন একাডেমির পরিবেশনায় থাকবে লালন সঙ্গীতানুষ্ঠান এবং তা চলবে গভীর রাত পর্যন্ত।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh