শোয়াইব আহম্মেদ
প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০১ পিএম
হেলেন কেলার। ছবি: ইন্টারনেট
কেবল মনের বল এবং কর্মোদ্যমের মাধ্যমে যাঁরা নিজের জীবনকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, মহিমান্বিত করেছেন, তাদের অন্যতম একজন মহীয়সী নারী হেলেন কেলার। জন্মগ্রহণের সময় আর দশটি স্বাভাবিক শিশুর মতো জন্মগ্রহণ করলেও মাত্র উনিশ মাস বয়সে তিনি হয়ে যান বধির, বোবা এবং অন্ধ। জীবনের সুদীর্ঘ নয়টি বছর তিনি ছিলেন বাকশক্তিহীন। অথচ পরবর্তী জীবনে এই মহীয়সী নারীই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি রাজ্যে বক্তৃতা দিয়ে ফিরেছেন এবং ভ্রমণ করেছেন ইউরোপের প্রায় সবগুলো দেশে। হেলেন কেলারের প্রথম কথা বলার সেই স্মরণীয় স্মৃতির কথা জানাচ্ছেন শোয়াইব আহম্মেদ...
হেলেন কেলারের বাল্যজীবন ছিল খুবই দুঃখের। বোবা, কালা আর অন্ধত্বের অভিশাপ নিয়ে তিনি বড় হয়েছেন অবোধ বন্যপ্রাণীর মতো। যা কিছু তার খারাপ লাগত, রাগে-ক্ষোভে তা ভেঙে চুরমার করতেন। ছোটবেলায় তিনি দুহাতে মুখে খাবার গুঁজে দিতেন বিশ্রীভাবে। এসবে অসহ্য হয়ে হেলেনের মা-বাবা তাদের মেয়েকে অন্ধদের কোনো এক প্রতিষ্ঠানে পাঠানোর কথা ভাবতে থাকেন। হেলেন কেলারের যখন সাত বছর বয়স, তখন এক মজার ঘটনা ঘটে। হেলেনের মা ক্যাথেরিন কেলার বিখ্যাত লেখক চার্লস ডিকেন্সের ‘আমেরিকান নোটস’ পড়ছিলেন। তার থেকেই তিনি জানতে পারেন, বস্টন শহরে পারকিন্স ইনস্টিটিউট নামে একটি হাসপাতালে মূক বধির আর অন্ধ ছেলেমেয়েদের চিকিৎসা এবং সেবাশুশ্রুষা করা হয়। তারা হেলেনকে সেখানে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। এই প্রতিষ্ঠানেই হয় হেলেন কেলারের নবজন্ম। তখন পারকিনস ইনস্টিটিউটের প্রধান ছিলেন মাইকেল অ্যানাগনোস। এই ইনস্টিটিউটেই হেলেন কেলারকে ভর্তি করা হয় এবং তার দেখাশোনার দায়িত্ব পড়ে মিস অ্যান সুলিভানের ওপর। তিনি ভর্তি হন ১৮৮৭ সালের ৩ মার্চ। প্রথম যখন হেলেনকে এখানে এনে সুলিভানের হাতে তুলে দেওয়া হয় তখন হেলেন ছিলেন একেবারেই উন্মাদ এবং মানবাকৃতির একটি জন্তুবিশেষ। মাত্র বছরখানেকের চেষ্টার ফলেই হেলেন কথা বলতে শেখেন এবং ব্রেইল পদ্ধতিতে প্রথমে ইংরেজি, তারপর ল্যাটিন, গ্রিক, ফ্রেঞ্চ এবং জার্মান ভাষা শিখে নেন। ১৮৯০ সালের ২৬ মার্চ ছিল হেলেন কেলারের জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় দিন।
এদিনই তিনি কারও সাহায্য ছাড়াই ‘ইট ইজ ভেরি হট’- চার শব্দের এই বাক্যটি উচ্চারণ করেন। শুধু ভাষা শেখা নয়, তিনি আঙুল দিয়ে স্পর্শ করে করেই বাক্য বিনিময় করতেও শেখেন। তিনি শুধু অনুভূতি দ্বারাই তার চারপাশে কে আছে, তার নাম-পরিচয় পর্যন্ত বলে দিতে পারতেন। তখন হেলেনের বয়স দশ বছর। এই সময়েই নরওয়ের একটি মূক ও বধির মেয়েকে হাসপাতালের ডাক্তাররা কথা বলাতে সক্ষম হন। এটা দেখে হেলেন নিজেও দাবি পেশ করে বসেন, তাকেও যেন কথা বলানোর চেষ্টা করা হয়।
তারপর তা-ই করা হয় এবং বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, সুলিভান মাত্র ১১টি লেসনের মাধ্যমেই হেলেনকে কথা বলাতে সক্ষম হন। হেলেন অসম্ভব দক্ষতায় প্রতিটি লেসন আয়ত্ত করেন এবং কথা বলে ওঠেন। তিনি সহসাই ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে বলে ওঠেন, ‘আমি এখন আর বোবা নই।’ এর মাত্র মিনিট কয়েক পরই আনন্দিতা হেলেন সুলিভানের হাত স্পর্শ করে দ্বিতীয় বার উচ্চারণ করেন, ‘টিচার।’ অর্থাৎ সুলিভান হলেন হেলেনের শিক্ষিকা। অশেষ দরদ আর স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে সেবাশুশ্রুষা করে শিক্ষিকা সুলিভান হেলেনের জীবনে আশ্চর্য পরিবর্তন ঘটান। তারই চেষ্টায় হেলেন কেলার যেদিন প্রথম কথা বলতে শিখেছিলেন, সেদিন তার যে আনন্দানুভূতি হয়েছিল, সে কথা হেলেন পরবর্তী সময়ে তার স্মৃতিকথায় লিখেছেন।