নেশা যখন সোশ্যাল মিডিয়া

তৌসিফ আহমেদ

প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৩, ১১:৩৯ এএম

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

তথ্য ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ মানব সভ্যতার জন্য যে আশীর্বাদস্বরূপ- এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে এর অপকারী দিককে উপেক্ষা করা যাবে না। এর অপকারী দিকের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্তি। এটা বললে অত্যুক্তি হবে না যে- বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষই যেন বুঁদ হয়ে আছে সোশ্যাল মিডিয়ায় নেশায়। এ নেশা কোনো সিনথেটিক ড্রাগের চেয়ে কম ক্ষতিকর নয়। অথচ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যক্তিগত ও কর্মজীবনে এমনভাবে জড়িয়ে গেছে যে একে পুরোপুরি বাতিল করা সম্ভব নয়। তবে এ নেশার প্রভাব কম করার পদ্ধতি আছে। পদ্ধতিটিকে বলা হচ্ছে ‘সোশ্যাল মিডিয়া ডিটক্স’; যাকে সোজা বাংলায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে বিরতিও বলা চলে।

কার জন্য প্রযোজ্য: সোশ্যাল মিডিয়া ডিটক্স তখনই দরকার, যখন কোনো ব্যক্তি খুব বেশিমাত্রায় আসক্ত হয়ে পড়ে। সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্ত ব্যক্তির মধ্যে বিশেষ কিছু লক্ষণ স্পষ্টভাবে দেখা যায়। তিনি যখনই কর্মব্যস্ততার মাঝে একটু সময় পান, তখন অজান্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢুকে পড়েন, আর অনেকটা সময় সেখানে কাটিয়ে দেন। যখন পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান তখনো পরিবারের সদস্যদের চাইতে মোবাইলেই সঙ্গ বেশি উপভোগ্য মনে হয় তার কাছে। এসব ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্যদের সঙ্গে নিজের জীবনের তুলনা করে হীনমন্যতায় ভোগেন। এমন লক্ষণ কারও মধ্যে যদি দেখা যায়, তাহলে বুঝবেন জরুরি ভিত্তিতে তার সোশ্যাল মিডিয়া ডিটক্সের প্রয়োজন।

কিছু পদ্ধতি মেনে চললে সোশ্যাল মিডিয়া ডিটক্স বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে বিরতি নেওয়া সম্ভব। কী সে পদ্ধতি, সেসব নিয়েই এ আলোচনা। 
মোবাইল থেকে অ্যাপগুলো সরিয়ে ফেলুন: যেসব অ্যাপ সময় নষ্ট করছে সেগুলো চিহ্নিত করে মোবাইল থেকে মুছে ফেলুন। কেননা মুছে না ফেললে  সেগুলো থেকে দূরে সরে থাকা কষ্টসাধ্য ব্যাপার হবে। এখন প্রায় সব স্মার্টফোনে ‘ডিজিটাল ওয়েলবিয়িং’ নামক ফিচার থাকে, যার মাধ্যমেও চাইলে যে কেউ অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ থেকে বিরত রাখতে পারেন। 

কিছু পোস্ট করার আগে ভাবুন: সবকিছুকেই সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট বা শেয়ার করার আগে ভাবুন। মনে রাখবেন, সব ছবি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করাটা জরুরি নয়। সবকিছুতে নিজেকে বাস্তব থেকে ভার্চুয়ালে নেওয়া থেকে বিরত থাকুন। অন্যদের পর্যবেক্ষণ করুন। পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে মনোযোগ দিন।

ট্রেন্ডের পেছনে ছুটবেন না: মনে রাখবেন যা কিছু নতুন তার সবটুকুই কিন্তু ভালো নয়। তাই ট্রেন্ডে গা ভাসাবেন না। নতুন কোনো যোগাযোগ মাধ্যম বা নতুন কোনো ট্রেন্ডে যুক্ত হওয়ার আগে সচেতন হোন। 

যোগব্যায়ামের অভ্যাস গড়ুন: সকালে ঘুম থেকে উঠে মোবাইল স্ক্রল না করে এমন কিছু করুন যা মনন ও স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাবে, এবং সেই সঙ্গে মনোযোগ দৃঢ় করবে। আর এ কারণেই যোগব্যায়ামের বিকল্প নেই। 

উৎপাদনশীল কাজে সময় দেওয়া: এক জরিপে দেখা গেছে মানুষ গড়ে ২ ঘণ্টা ২৭ মিনিট সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যয় করছে। এই সময়টা নতুন কোনো উৎপাদনশীল কাজে ব্যয় করতে পারেন। বই পড়া, ছবি আঁকা, বাগান করা, শরীরচর্চা অথবা কোনো বিষয়ে দক্ষতা অর্জন ইত্যাদি কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পারেন। কিছুদিন এমনভাবে জীবনযাপন করলে মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের অভূতপূর্ব উন্নতি উপলব্ধি করতে পারবেন। 

উপরের বিষয়গুলো যদি মেনে চললে সহজেই যে কেউ সোশ্যাল মিডিয়া ডিটক্স করতে সক্ষম হবে এবং এতে কর্মস্পৃহা বাড়বে। মনে রাখবেন, হেরোইনের নেশার মতোই সর্বনাশা ডিজিটাল সংস্কৃতির এই নতুন নেশা। তাই এখনই সময়- সচেতন হোন; নিজেকে সুস্থ, সুন্দর ও কর্মক্ষম রাখুন।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh