আফরোজা চৈতী
প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:১৪ পিএম | আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:৩৯ পিএম
প্রতীকী ছবি।
সম্পর্ক একটি মধুর বিষয়। তবে বয়স যখন যৌবনের চৌকাঠ অতিক্রম করে প্রৌঢ়ত্বের দিকে ঢলে, তখন যেন ফিরে আসে সেই কৈশোরের মতো সংশয়, মানিয়ে নিতে না পারার কষ্ট, পিছিয়ে পড়ার ভয়। এই সময়ে শরীরে যৌন হরমোন কমতে থাকে, এতে অনেক সময় গ্রাস করে হতাশা, মন খারাপ, অবসাদ। মনে হয় কিছুই হলো না জীবনে, বয়স চলে যাচ্ছে, কেউ পাত্তা দিচ্ছে না। তখন অসহ্য লাগতে থাকে সংসারের দৈনন্দিন কাজকর্ম, মেজাজ হয়ে যায় খিটখিটে, চলে আসে একঘেয়েমি, একাকিত্ব। মনস্তত্ত্বের পরিভাষায় এই সমস্যাটাই হলো-মিডলাইফ ক্রাইসিস বা মাঝ বয়সের টানাপড়েন।
নারী-পুরুষ যে কেউ মিডলাইফ ক্রাইসিসের শিকার হতে পারেন। সাধারণত এক-দেড় বছরের মধ্যে এই অনুভূতিটা কেটে যায়। তবে অনেক সময় কাটে না। আরও সমস্যা হয় যখন স্বামী বা স্ত্রীর কোনো একজন এই সমস্যায় ভুগতে শুরু করেন। একাকিত্ব কাটাতে কেউ একের পর এক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন, কেউ সাজগোজ, কেউ ডুবে যান নেশায়। সময়মতো এই জটিলতা সামাল দিতে না পারলে দেখা দিতে পারে নানান অসুস্থতাও। তাই শুরু থেকেই সাবধান হওয়া জরুরি।
দুজনকেই দুজনের আবেগীয় চ্যালেঞ্জ ও বাস্তবতা বুঝতে হবে। মিডলাইফ ক্রাইসিসে ভোগা সেই সব দম্পতির জন্য রইল কিছু টিপস...
নীরবতা ভাঙুন: অনেক আধ্যাত্মিক গুরু নীরবতার দোহাই দিয়ে সম্পর্কগুলোকে ভুল পথে ঠেলে দেন। এটা বড় ভুল একটি ধারণা যে নীরব হয়ে সরে এসে ভাববেন সে সবকিছু বুঝে নেবে। সে আপনার মনের ভেতরে ঢুকে সারাক্ষণ বসে থাকতে পারবে না, তারও নিজের আবেগীয় মানসিক চ্যালেঞ্জের জায়গা থাকতে পারে। তাই স্বার্থপরের মতো নিজের কথা ভাববেন না শুধু। কথা বলুন সঙ্গীর সঙ্গে, সরাসরি তাকে জানান অনুভূতির কথা।
সম্পর্কে অন্য কারও নাক গলানো: সম্পর্কে টানাপড়েন বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গেলে অনেকেই বাবা বা শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে তাদের সম্পর্কের ভেতরে নাক গলাতে দেন। এটা কখনো করবেন না। মনে রাখবেন সংসার দুজনের। বাবা-মা অথবা ভাইবোনের না। তবে সমস্যার বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলে পরামর্শ নিতে পারেন। আবার কোনো বন্ধু, যিনি দুজনেরই অনেক আপন ও বহুদিনের একটি সুন্দর সহজাত সম্পর্ক আছে তাকে সমস্যার কথা খুলে বলতে পারেন।
সঙ্গীর কথা শুনুন: একতরফা অভিমান বা ভুল ধারণা নিয়ে দূরে না থেকে সঙ্গীর কথা শুনুন, তাকে গুরুত্ব দিন। এমনও যেন না হয় যে শিক্ষা দেবেন বলে তাকে অপমান বা হেয় করছেন। তবে সবকিছু মনের মতো হবে না। কাল্পনিক কোনো চাহিদার ভার জীবনসঙ্গীর কাঁধে দেবেন না। বরং যখন যেটুকু যেভাবে পাচ্ছেন তার জন্য শুকরিয়া আদায় করুন।
ধৈর্য ধরুন ও প্রার্থনা করুন: মাঝ বয়সের টালমাটালও একদিন কেটে যাবে। তাই শান্ত হয়ে ধৈর্য ধরে থাকা ছাড়া উপায় নেই। নিজের পছন্দের কাজগুলো করুন, মাথা ঠান্ডা রাখুন। প্রয়োজনে মনোবিদের সহায়তা নিন। আর যে ধর্মেরই হোন, কিছু সময় রাখুন প্রার্থনার জন্য।
ইতিবাচক থাকুন: নিজের আবেগীয় চ্যালেঞ্জগুলোকে মোকাবিলা করতে শিখুন একা একাই। আত্মনির্ভরশীলতা মানুষকে অনেক বেশি সুন্দর করে। যে কাজগুলো একসময় করতে ভালো লাগত, সে সব নতুন করে শুরু করুন।