প্রশ্ন ফাঁস করে ডাক্তার: জালিয়াত চক্রের ৯ জন গ্রেপ্তার

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:৩৭ পিএম

আটক প্রশ্নফাঁস চক্রের সদস্যরা। ছবি- সিআইডি

আটক প্রশ্নফাঁস চক্রের সদস্যরা। ছবি- সিআইডি

মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৫ চিকিৎসকসহ নয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

গত সোমবার থেকে বুধবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। 

গ্রেপ্তার চিকিৎসকরা হলেন ডা. ফয়সাল আহমেদ রাসেল, ডা. মো. সোহানুর রহমান সোহান, ডা. তৌফিকুল হাসান রকি, ডা. ফয়সাল আলম বাদশা ও ডা. ইবরার আলম। 

সিআইডি বলছে, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলার অব্যাহত অভিযানের অংশ হিসেবে দিনাজপুর, নীলফামারী, ঢাকা জেলায় অভিযান চালিয়ে চক্রের গুরুত্বপূর্ণ হোতা দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ৩ নম্বর সিংড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন, নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বিটস কোচিংয়ের পরিচালক আবদুল হাফিজ, মো. রায়হানুল ইসলাম সোহান, বকুল রায় শ্রাবণ ও ৫ চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরা সবাই মেডিকেল প্রশ্নফাঁসের সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। 

আসামিদের কাছ থেকে চক্রের অন্যান্য সদস্য ও অসাধু উপায়ে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়া অসংখ্য শিক্ষার্থীর নাম পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে সিআইডি। 

সংস্থাটি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, এর আগে এ চক্রের মাস্টারমাইন্ড জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া মুন্নুর কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া গোপন ডায়েরি থেকে সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা চক্রের সদস্যদের সন্ধান পাওয়া যায়। 

সিআইডি বলছে, গ্রেপ্তার ইউপি চেয়ারম্যান সাজ্জাদ ২০১৭ সালের মেডিকেল প্রশ্নফাঁসের অন্য আরেকটি মামলারও এজাহারভুক্ত আসামি। সাজ্জাদ উত্তরবঙ্গের অসংখ্য শিক্ষার্থীকে অনৈতিক উপায়ে মেডিকেলে ভর্তি করিয়ে কোটি টাকার বেশি আয় করেছেন। পূর্বে গ্রেপ্তারকৃত একাধিক আসামি সাজ্জাদের নাম বলেছে এবং জসীমের গোপন ডায়রিতেও তার নাম ও ফোন নাম্বার পাওয়া গেছে।

১৬ বছরে ১০ বার মেডিকেলের প্রশ্নফাঁস, ডাক্তারসহ গ্রেপ্তার ১২১৬ বছরে ১০ বার মেডিকেলের প্রশ্নফাঁস, ডাক্তারসহ গ্রেপ্তার ১২

সৈয়দপুর উপজেলার বিটস কোচিং সেন্টারের পরিচালক আবদুল হাফিজ একটি বেসরকারি হাসপাতালেরও মালিক। তিনি আগে গ্রেপ্তার ডা. জিল্লুর হাসান রনির মাধ্যমে প্রশ্ন পেয়ে দীর্ঘদিন ধরে তার কোচিংয়ের শিক্ষার্থীদের অনৈতিক উপায়ে মেডিকেলে ভর্তি করিয়েছেন বলে অভিযোগ সিআইডির। এই শিক্ষার্থীদের অনেকেই বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছে। 

গ্রেপ্তার ডা. সোহানুর রহমান সোহান আবদুল হাফিজের কাছ থেকে ২০১৩ সালে প্রশ্ন পেয়ে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল ভর্তি হন। পরবর্তীতে বিসিএস স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে পার্বতীপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগ দেন। 

ডা. ফয়সাল আহমেদ রাসেল ইউপি চেয়ারম্যান সাজ্জাদের মাধ্যমে ২০১০ সালে মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন পেয়ে জাতীয় মেধায় ১১তম স্থান লাভ করেন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। এরপর যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে দিনাজপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ে সার্ভেইল্যান্স মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে তিনি নিজেও প্রশ্নফাঁস ব্যবসার জড়ান বলে জানিয়েছে সিআইডি। 

গ্রেপ্তার ডা. তৌফিকুল ইসলাম রকি আগে গ্রেপ্তার ডা. জিল্লুর হাসান রনির গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী ছিলেন। তারা দুজনই রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করেছেন। রকি বিটস কোচিংয়েও ক্লাস নিতেন। রকি, হাপ্পু ও রনি মিলে অনৈতিক উপায়ে বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে দেশের বিভিন্ন মেডিকেলে ভর্তি করিয়েছেন বলে জানিয়েছে সিআইডি। 

রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করা ডা. ইবরার আলমও ডা. জিল্লুর হাসান রনির সহযোগী ছিলেন বলে জানায় সিআইডি। তিনি ২০১৩ ও ২০১৫ সালের ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতে ডা. রনির মাধ্যমে প্রশ্ন পেয়ে বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে অর্থের বিনিময়ে তা সরবরাহ করেছিলেন। এদের অনেকেই বিভিন্ন মেডিকেলে ভর্তি হয়।   

গ্রেপ্তারকৃত আসামি রায়হানুল ইসলাম সোহান ও বকুল রায় শ্রাবণ দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার বাসিন্দা। রায়হানুল ২০১৫ সালে তার এক মামার মাধ্যমে মেডিকেলের ফাঁসকৃত প্রশ্ন পায় এবং বকুলকে তা সরবরাহ করে। বকুল তার ৪ ভর্তিচ্ছু ছোট ভাইয়ের কাছে সেই প্রশ্ন বিক্রি করে। পরে ৪ জনই দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে চান্স পায়।  

গ্রেপ্তারকৃত ডা. সাইফুল আলম বাদশা ২০১০ সালে সাজ্জাদ হোসেনের মাধ্যমে প্রশ্ন পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। এরপর নিজেও প্রশ্নফাঁস ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। ২০১৩ এবং ২০১৫ সালে তিনি একাধিক শিক্ষার্থীকে প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে মেডিকেল ভর্তি করিয়েছেন বলে অভিযোগ সিআইডির। 

এর আগে গত ১৩ আগস্ট দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মেডিকেল প্রশ্নফাঁস চক্রের ১২ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। একই বছরের সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করা হয় আরও ৬ জনকে। 

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh