অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:১২ পিএম
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের নারীরা ভোট দেন না। ছবি- সংগৃহীত
স্বাধীনতার পর থেকে জাতীয় কিংবা স্থানীয় কোনো নির্বাচনে ভোট দেন না নারীরা। নিত্যপ্রয়োজনীয় সব ধরনের কাজে ঘর থেকে বের হলেও নির্বাচনের দিন তাদের সময় কাটে ঘরে বসে। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এই ইউনিয়নের নারীরা ভোট দেবেন কিনা তা নিয়ে রয়েছে সংশয়।
শুনতে অবাক লাগলেও চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের নারীরা ৫২ বছর ধরে ভোটকেন্দ্রে যান না।
স্থানীয়রা জানান, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নে কলেরাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হন অসংখ্য মানুষ। অসুস্থতা থেকে মুক্তির জন্য এলাকাবাসী দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। এজন্য সেসমসয় তারা জৈনপুরের পীর মাওলানা মওদুদ হাসানের কাছে যান।
কথিত আছে, ওই পীর নারীদের ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করেন। বলেন, এতে মিলবে সুস্থতা। এরপর ঘর থেকে রাস্তাঘাটে বের হওয়া বন্ধ করে দেন স্থানীয় নারীরা। এমনকি পীরের আদেশ মেনে ইউনিয়নের নারী ভোটাররা কোনো নির্বাচনেই ভোট কেন্দ্রে যান না।
রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. শরীফ হোসেন বলেন, নারীদের অনেকেই আছেন ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেন না। আধুনিক যুগে এসেও কুসংস্কারের কারণে নারীরা ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। নারীর অধিকার আদায়ে পুরুষদের এগিয়ে আসা উচিত। আমি চাইব আমার ইউনিয়নের মা-বোনেরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিক।
সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়ন প্রায় ২৫ হাজার ভোটার রয়েছেন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১২ হাজার ১১৪ জন। ভোটকেন্দ্রে নারী ভোটারদের উপস্থিতি বাড়াতে ইউনিয়ন পরিষদসহ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত প্রচারণা ও বিশেষ উঠান বৈঠক করা হচ্ছে।
ভোটকেন্দ্রে নারীদের যাওয়া নিষেধ রয়েছে কিনা- জানতে চাইলে ফরিদগঞ্জ মজিদিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি আনোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, আল্লাহ রাব্বুল পবিত্র কোরআনেই ঘোষণা করেছেন, আমরা যেন আমাদের পবিত্র আমানত যথাস্থানে প্রয়োগ করি। আর এই আয়াতের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছেন সকল আলেম-ওলামা। তারা মনে করছেন, এই আয়াত দ্বারা ভোটাধিকার প্রয়োগের বিষয়টা ইঙ্গিতপূর্ণ। ভোট প্রদান করা যেহেতু নাগরিক অধিকার, সেহেতু নারীদেরও ভোট প্রদান করা জায়েজ বলে মনে করছেন ওলামাগণ।
তিনি বলেন, ইসলাম ধর্মে পর্দা ও হিজাব পালনের কথা বলা হলেও ঘরের বাইরে বের হয়ে তার নাগরিক অধিকার হারানোর কথা বলা হয়নি। দেশের সাংবিধানিক অধিকার আদায় করার অধিকার রয়েছে সকল জনগণের। নারীও সেই জনগণের অন্যতম একটি অংশ।
সম্প্রতি রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের গৃদকালিন্দিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে নারীদের নিয়ে একটি বিশেষ উঠান বৈঠকের আয়োজন করে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, জাতীয় মহিলা সংস্থা ও উপজেলা তথ্যকেন্দ্র।
সেখানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) সদস্য মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারী, জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান, জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বিপিএম-পিপিএম, জেলা নিার্বচন কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদ, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) জি এস তছলিম আহমেদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌলি মন্ডল, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আজিজুন্নাহার, থানা অফিসার ইনচার্জ মো. সাইদুল ইসলাম প্রমুখ।
ওই বৈঠকে উপস্থিত নারীরা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেবেন বলে অঙ্গীকার করেন।