দিনমজুর গড়ে তুলেছেন সাড়ে ৩ হাজার বইয়ের লাইব্রেরি

ফয়সাল শামীম, কুড়িগ্রাম

প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০২৪, ০৩:১৮ পিএম

দিনমজুরের গড়ে তোলা লাইব্রেরি। ছবি: কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

দিনমজুরের গড়ে তোলা লাইব্রেরি। ছবি: কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

কুড়িগ্রাম শহর থেকে উলিপুরের সাতভিটা গ্রামের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। গ্রামের মেঠোপথ ধরে এগিয়ে গেলেই চোখে পড়ে গ্রন্থনীড়ের আধপাকা ঘরটা। হালকা নীল রঙের দেয়াল। সামনে লোহার গ্রিল। গ্রন্থনীড়ের তিন দিকেই আবাদি জমি। ঝকঝকে চকচকে মেঝে। ঘরটার ভেতরে বড় একটি টেবিল। পাশে চেয়ার ও বেঞ্চ। দুটি কাঠের আলমারিতে থরে থরে সাজানো বই। কিছু বই পড়ে আছে মাটিতে। মনোযোগী কয়েকজন পাঠক মন দিয়ে পড়ছিলেন বই। আর বসে থেকে সব তদারকি করছিলেন সাতভিটা গ্রন্থনীড় প্রতিষ্ঠাতা জয়নাল মিয়া।

মাত্র পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন জয়নাল আবেদীন। দরিদ্র পরিবারে জন্ম তার। ছোট থেকেই বাবার সঙ্গে জমিতে কাজ করতেন। পূর্বপুরুষদের মতোই একসময় দিনমজুরি শুরু করেন। ২০১১ সালের এক দিন গাজিপুরে ইটভাটায় কাজ শেষে ঘোরাঘুরি করছিলেন জয়নাল। ফুটপাতে বইয়ের দোকান দেখে থামেন। বইগুলোর নাম জয়নালের ভালো লাগে। সেখান থেকে দুটি বই কেনেন তিনি। অবসরে বই দুটি পড়েন। 

ছোটবেলায় স্কুলের বই পড়তে নীরস লাগত আর এই বইগুলো পড়তে আনন্দ লাগছে। তারপর আবার তিনি বই কেনেন। এভাবে দিন দিন বইয়ের নেশা পেয়ে বসে তাকে। জয়নাল পাঠাগার করবে এ কথা শুনে এলাকায় লোকজন কেউ বলতে থাকে ‘পাগলামি’, কেউ বলে ‘গরিবের ঘোড়ারোগ!’ মন খারাপ হলেও থেমে থাকেনি জয়নাল। ২০১১ সালের ১৫ নভেম্বর পাঠাগারের উদ্বোধন করেন তিনি। এভাবেই তিনি কুড়িগ্রামে গড়ে তুলেছেন সাড়ে তিন হাজার বইয়ের সাতভিটা গ্রন্থনীড়।

পাঠাগারে আসা পাঠক হযরত আলী বলেন, পাঠাগারে এসে বই পড়ে জ্ঞান অর্জন হচ্ছে। তিনি এটাও জানান, পাঠাগারের বই নিয়ে গিয়ে তিনি বাড়িতেও বই পড়তে পারছেন।

পাঠাগারে নিয়মিত আসা কিশোর সাদমান বলেন, অবসর সময়ে পাঠাগারে এসে বই পড়ে তার সময় খুব ভালো কাটে।

পাঠাগারে নিয়মিত আসা কিশোরী মুন্নি আক্তার বলেন, পাঠাগারেটিতে এসে খুব ভাল লাগে। পাঠাগারের পরিবেশ খুব সুন্দর ও মনোরম।

জয়নাল আবেদীন, প্রতিষ্ঠাতা সাতভিটা গ্রন্থনীড়, তিনি বলেন, বই দিয়ে মানুষকে আলোর পথে টানার জোড় চেষ্টা আমি চালিয়ে যাবো। তবে পাঠাগারের জন্য একটি ওয়াশরুমের দাবি করে তিনি বলেন, একটি ওয়াশরুম না থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে পাঠাগার দেখতে আসা মানুষদের খুব সমস্যা হয়।

এ বিষয়ে কথা হলে, খালিদ হোসেন, লাইব্রেরী ইনচার্জ (ভারপ্রাপ্ত) জেলা সরকারী গণ গ্রন্থাগার, কুড়িগ্রাম বলেন, আমরা জয়নাল সাহেবকে যথাযথ সাহায্য করছি। তিনি আবার আমাদের কাছে আসলে আমরা আবার তাকে সহযোগিতা করব।

জয়নাল আবেদীন বই দিয়ে মানুষকে আলোকিত করার চেষ্টায় সফল হউক। বইয়ের আলো ছড়িয়ে পড়ুক গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে এমনটাই আশা সুশিল সমাজের।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh