শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০৪:০৬ পিএম
নৌকা বাড়ি নির্মাণের কাজ চলছে। ছবি: শেরপুর প্রতিনিধি
জীবন জীবিকার পাশাপাশি মানুষের কত কিছুই না শখ থাকে। তাই সাধ্যের সাথে তাল মিলিয়ে অনেকেই তার শখ পূরণ করে থাকেন। কেউবা বিলাসবহুল বাড়ি অথবা নির্জন পাহাড়ি এলাকায় বাংলো বাড়ি করার শখ মিটায় অনেক মানুষ। তবে এক্ষেত্রে বৃত্তের যোগ থাকতে হয়। কথায় আছে ‘শখের তোলা ৮০ টাকা’। তারপরেও সমাজের অনেকেরই শখ রয়েছে। তারা সাধ্যের মধ্যেই তাদের শখ বা স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করে।
শেরপুর এমনই একজন বিত্তহীন মানুষ রয়েছেন যিনি তার সাধ্যের মধ্যে থেকে তার সে শখ পূরণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তার নাম আহসান আলী। তিনি ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধু তথা নৌকা ভক্ত। পেশায় ক্ষুদ্র কৃষক। তবে এর পাশাপাশি রাজমিস্ত্রির কাজও করে থাকেন তিনি। তিনি অনেকদিন থেকেই একটি নৌকা বাড়ি বানাবেন বলে মনে মনে স্বপ্ন এঁকেছিলেন। আজ তার সে স্বপ্ন পূরণে কাজ শুরু করেছেন। তৈরি করছেন নৌকা বাড়ি। নিজের টাকা এবং শ্রমের বিনিময়ে ৮ শতক জমির উপর তিনি তার স্বপ্ন পূরণে হাত দিয়েছেন।
জানা গেছে, শেরপুর পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের শেষ সীমানা কসবা কাঠগড় গ্রাম। এখানে বাস করে আহসান আলী নামে এক ক্ষুদ্র কৃষক ও রাজমিস্ত্রি। ৫ শতক জমির মধ্যে মা-বাবা, ভাই-বোন ও স্ত্রী-পুত্র-কন্যা নিয়ে ঘিঞ্জি অবস্থায় বসবাস করেন তিনি। তার বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে মৃগী নদী। নদীর ওপারে বেশ কিছু জমি রয়েছে তার। সেখানে বছর জুড়ে ধান পাট সহ বিভিন্ন সবজির আবাদ করে থাকেন। নদী পার হতে নৌকা অথবা বাঁশের সাঁকোই ভরসা। এবার তিনি তার ৮ শতক জমির উপর নৌকা বাড়ি তৈরি কাজ শুরু করেছেন। গত ১০ দিন আগে নৌকা আকৃতির আদলে ভিত উদ্বোধন করেছেন। তার কৃষি কাজের পাশাপাশি তিনি নিজেই রাজমিস্ত্রি হিসেবে এ পুরো বাড়ি তৈরি করবেন বলে জানিয়েছেন। ওই নৌকা বাড়ির ডিজাইনও তিনি নিজেই করেছেন। এ বাড়িতে তিনটি কক্ষ থাকবে। একটিতে স্ত্রী আর তিনি এবং অন্যটিতে পুত্রকন্যারা এবং অপরটিতে থাকবেন রান্নাঘর এমনটাই পরিকল্পনা তার। বাড়ি তৈরিতে নদীর ওপার থেকে নিজেই ইট, বালু, পানি এবং সিমেন্ট নিয়ে এসে তার নৌকা বাড়ি তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে তার নৌকা বাড়িটি যেখানে তৈরি করা হচ্ছে সেটি সদর উপজেলা লছমনপুর ইউনিয়নের লসমানপুর গ্রামের মধ্যে পড়েছে। সেখানে প্রায় ২ থেকে ৩ শত একর জমির চাষাবাদ করে থাকেন ওই কসবা গ্রামের মানুষ। আহসান আলীর বাড়ি তৈরি কাজ শুরু করা দেখে আশপাশের কৃষকরা বেশ কৌতূহল নিয়ে তার বাড়ি তৈরির কাজ দেখতে আসছেন। এছাড়া আশপাশের অনেক মানুষ এ গ্রামে বেড়াতে এসে যখন জানতে পারে এখানে একটি নৌকা বাড়ি হচ্ছে তখন তার ওই নৌকা বাড়ি তৈরি দেখতেও আসছে অনেকেই।
আহসান আলী যেহেতু তার নিজের টাকায় এবং একাই এই বাড়িটির নির্মাণ করবে তাই সে আগামী ১ বছরের মধ্যে আস্তে ধীরে এ কাজটি সম্পন্ন করতে চাচ্ছে। কারণ তার আর্থিক অবস্থা খুব বেশি ভালো না। তাই তিনি তার আয়ের জমানো টাকা দিয়ে আস্তে আস্তে এই বাড়ি কাজটি করবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে কোন সরকারি বা নৌকা ভক্ত কারো সহযোগিতা পেলে বাড়ির কাজ দ্রুত শেষ করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।