তৌসিফ আহমেদ
প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০২:১৪ পিএম
প্রতীকী ছবি।
অফিস এমনই একটি জায়গা, যেখানে একজনের প্রত্যেকটি পদক্ষেপ তার ব্যক্তিত্ব ও পেশাদারিত্বের পরিচয় বহন করে। সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার ধরনের মাধ্যমেই ফুটে ওঠে একজনের ব্যক্তিত্ব। তবে কখনো কখনো এমন ভুল হতে পারে, যা অফিসে তাকে অনুপযুক্ত একজন কর্মীর ক্যাটাগরিতে ফেলতে পারে। অথচ ভুলগুলো হয়তো সে না জেনেই করে ফেলেছে। এ ধরনের ভুল এড়াতে অপেশাদার আচরণগুলো খেয়াল করুন এবং কীভাবে সেসব কাজ এড়িয়ে চলতে পারবেন, এ লেখায় তাই আলোচনা করা হয়েছে।
অফিসে দেরিতে আসা: পারিবারিক ব্যস্ততায় অথবা ট্রাফিক জ্যামের কারণে মাঝে মাঝে এমনটা হতেই পারে। কিন্তু এটা যদি প্রতিনিয়ত ঘটতে থাকে, তাহলে সেটা মোটেও পেশাদার আচরণ হতে পারে না। ধারাবাহিকভাবে অফিসে দেরি করে আসাটা প্রমাণ করে, অফিসের সময়ের চেয়ে নিজের সময়টাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এতে কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্য সহকর্মীদেরও কাজে অসুবিধা হতে পারে। তাই সঠিক সময়ে অফিসে আসার চেষ্টা করুন। দেরি হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হলে আগে থেকে জানিয়ে দিন।
ডেস্ক অগোছালো রাখা: কাজের ডেস্কটি সব সময় পরিপাটি থাকতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। তবে টেবিলের সর্বত্র সব সময় কাগজপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখাটা ভালো দেখায় না। টেবিল যতটা সম্ভব নিজেই গুছিয়ে রাখুন, এতে মনে হবে আপনি কাজকে গুরুত্ব দেন। এ ছাড়া অগোছালো ডেস্ক মানসিক প্রশান্তি ও মনোযোগ বিনষ্টেরও একটি বড় কারণ হতে পারে। তাই নিজের ডেস্কটি এমনভাবে রাখুন, যাতে সেখানে বসাটাও উপভোগ করা যায়।
নির্ধারিত পোশাক কোড না মানা: অনেক অফিসেরই নির্দিষ্ট পোশাক কোড আছে। সেটি মেনে চলা উচিত। আবার অনেক অফিসে নির্দিষ্ট কোনো পোশাক নীতি নেই। সে ক্ষেত্রেও এমন কোনো পোশাক পরা উচিত না, যা দৃষ্টিকটু ও অন্যকে অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। সে ক্ষেত্রে অফিসের পোশাক নির্বাচনে অন্য সহকর্মীদের দেখে ধারণা নিতে পারেন।
অযথা অজুহাত দেওয়া: যদি কোনো কাজ করতে ব্যর্থ হন বা কোনো ভুল করেন, তাহলে সরাসরি সেটি স্বীকার করে নিন। ভুল স্বীকার করা এবং সৎ থাকাটাই সর্বোত্তম পন্থা, যদিও এটা কিছুটা কঠিন মনে হতে পারে। হয়তো ভাবছেন অজুহাত দিয়ে নেতিবাচক ফলাফল ও অপর পক্ষের অসন্তুষ্টি এড়ানো যাবে, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উল্টোটাই হয়। অযথা অজুহাত দেওয়া অপেশাদার ও অদায়িত্বশীল আচরণের বহিঃপ্রকাশ।
সব ক্রেডিট নেওয়া: অফিসের বেশিরভাগ কাজই দলগতভাবে করতে হয়। তাই কোনো কাজে সফলতা আসলে সে কাজে সংশ্লিষ্ট সবারই প্রশংসা করা উচিত বা বসের কাছে সবার ক্রেডিটই দেওয়া উচিত। টিম লিডার হিসেবে শুধু নিজে ক্রেডিট নেবেন না। কোনো প্রকল্প নিয়ে কথা বলার সময় ‘আমি’র পরিবর্তে ‘আমরা’ ব্যবহার করুন। পুরো প্রকল্পে কার কার কাছ থেকে সহযোগিতা ও উপকার পেয়েছেন, সেগুলো সবার সামনে উল্লেখ করুন। এতে সহকর্মীরা কাজ করতে উৎসাহী হবেন।
কুৎসা রটানো: নিজের বিরুদ্ধে কটুকথা কেউই পছন্দ করেন না। অফিসে কারও বিরুদ্ধে অগোচরে কটুকথা বলা বা কুৎসা রটানো খুবই অপেশাদার ও অসৎ একটি কাজ। এতে বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয়। যতই মনে হোক না কেন যাকে বলছেন, তার কাছ থেকে কথাটি অন্য কারও কাছে ছড়াবে না, এটা কখনোই শতভাগ নিরাপদ নয়। কারও বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ বা ক্ষোভ থাকে, তাহলে তার পেছনে না বলে সরাসরি তাকেই বলুন।
দেরিতে উত্তর দেওয়া: নিয়মিত ইমেইল, ভয়েস মেসেজ এবং স্ল্যাক মেসেজের উত্তর দেরিতে দেওয়াটা অপেশাদার ও বিরক্তিকর একটি কাজ। আপনার উত্তরের ওপর অন্য কারও কাজ নির্ভর করতে পারে। তাই অফিসের কোনো ইমেইল বা স্ল্যাক মেসেজের জবাব যত দ্রুত সম্ভব দেওয়া উচিত। অনেকে অফিসের ইমেইল বা মেসেজের উত্তর দিতে দেরি করেন কিংবা পুরোপুরি ভুলেই যান। এমন অভ্যাস থাকলে তা ত্যাগ করা উচিত।
অভিযোগ করা: অভিযোগ করা মোটেই ইতিবাচক কিছু নয়। অফিসের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অভিযোগ করা খারাপ অভ্যাস। এ ছাড়াও অফিসে নিজের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে যদি অভিযোগ করতে থাকেন, সেটি আরও বিরক্তিকর। সহকর্মীরা হয়তো ভদ্রতা করে মুখের ওপর কিছু বলবে না, তবে তাদের বিরক্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। তাই এ ধরনের স্বভাব থাকলে তা বদলে ফেলুন।
কথা নয়, কাজ দেখান: অফিসে কথার চেয়ে কাজ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ; যা পারেন তা নিয়ে গর্ব করার পরিবর্তে তা করে দেখান। অনেকে এমন আছেন যারা কাজ না করে কথার ফুলঝুরি ছোটাতেই বেশি ব্যস্ত থাকেন। অনেকে নিজের কাজ বাদ দিয়ে সহকর্মীদের ডেস্কে ডেস্কে গিয়ে গল্প করতে থাকেন ও সময় অপচয় করেন। এমন অভ্যাস যদি থাকে, তবে তা আজই বাদ দিন।