‘চুরি করা বইগুলো আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ বই’

শোয়াইব আহম্মেদ

প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০২:৩২ পিএম

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

পৃথিবীতে অসংখ্য চুরি হয়; কিন্তু বই চুরিও যে একটা বড় চুরি এটা অনেকেরই জানা নয়। বই চুরি করতে করতে কেউ কেউ অতিবিখ্যাত বনে যান এ কথা অনেকেরই অজানা। এত দক্ষতা আর নিপুণতার সঙ্গে বই চুরি করেন তারা যে, এটি একটি মহৎ শিল্পে পরিণত হয়েছে বইপ্রেমীদের কাছে। খ্যাতিমানদের বই চুরির গল্প তো আরও মজার। এখানে বই চুরি করে খ্যাতি অর্জন করেছেন এমন কয়েকজন বই চোরের গল্প বলছেন শোয়াইব আহম্মেদ...

ওমর খৈয়ামের কাছে ‘বই হচ্ছে অনন্ত যৌবনা, যদি তেমন বই হয়’। প্রমথ চৌধুরী বলেছেন ‘বই পড়ে সত্যিকারের জ্ঞান আহরণ করা যায়’। আর সৈয়দ মুজতবা আলীর মতে ‘বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না’। আবার ব্রিটিশ লেখক সিডনি স্মিথ বলেছেন, ‘বইয়ের মতো সুন্দর নাকি বাড়ির কোনো আসবাবপত্রও না’। মাত্র পাঁচশ বছর আগে জোহান্স গুটেনবার্গ টাইপের প্রচলন শুরু হওয়ার পর পরই পৃথিবীর জ্ঞানের ভাণ্ডারে যোগ হলো বইয়ের অস্তিত্ব। তার আগে তালপাতা আর প্যাপিরাস গাছের পাতায় লেখা হতো। শুরুর সময় থেকেই পৃথিবীর বিখ্যাত-কুখ্যাত বই চোরদের কা-কীর্তির কাহিনি ভূরি ভূরি। কিছু বছর আগে জানা যায় স্টেফান ব্লুমবার্গ নামে একজন মার্কিনির কথা। যে ত্রিশ বছরে সাড়ে তেইশ হাজারের ওপর বই চুরি করেছিল; কিন্তু এসব বই বিক্রিতে তার মন ছিল না। সে বই পড়ত ও জমাত। বিভিন্ন গ্রন্থাগার থেকে বছরের পর বছর এত বিপুলসংখ্যক বই নিজের সংগ্রহে আনার পেছনে তার যুক্তি ছিল, বইগুলোকে সে ধ্বংস হওয়া থেকে রক্ষা করেছে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিখ্যাত লেখকদের বই চুরির ঘটনাও নেহাতই কম নয়। ‘স্যাভেজ ডিটেকটিভ’, ‘অ্যামুলেট ও লাস্ট ইভিনিং অন আর্থ’ বইয়ের জন্য বিখ্যাত চিলিয়ান কবি ও কথাসাহিত্যিক রবের্তো বোলাইয়োঁ তার মধ্যে অন্যতম। যার বিখ্যাত উক্তি ‘চুরি করা বইগুলো আমার জীবনের শেষ্ঠ বই’। 

রবের্তো বোলাইয়োঁর বয়স যখন ষোলো তখন তিনি মেক্সিকো সিটির বিভিন্ন দোকান থেকে বই চুরি করা শুরু করেন। যার বেশিরভাগ চুরি করেছেন মেক্সিকোর আলামেদা এলাকার বিখ্যাত বইয়ের দোকান ‘গ্লাস বুকস্টোর’ থেকে। নামের সঙ্গে মিল রেখে এই দোকানের দেয়াল, এমনকি সিলিংও ছিল কাচের তৈরি। লোহার থাম ও কাচ দিয়ে বানানো বিশাল এই বইয়ের দোকান বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে, এখান থেকে বই চুরি করা একেবারে অসম্ভব; কিন্তু বোলাইয়োঁর লোভের কাছে সিলিং আর দেয়াল হার মানল। বয়স ষোলো থেকে উনিশ পর্যন্ত অর্থাৎ বিশ বছর বয়সে চিলি চলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এই দোকান থেকে বই চুরি করেন। 

প্রথম যে বইটি চুরি করেন তা ছিল, বাইবেলের পৃষ্ঠার মতো ফিনফিনে পাতলা পাতার পিয়েরে লুইসের (ঊনবিংশ শতকের যৌনতাশ্রয়ী কবি) একটা বই। আফ্রোদিতি নাকি সংস্ অব বিলিতিস, সে কথা আর মনে রাখতে পারেননি নিজেই। এরপর একের পর এক চুরি করতে থাকেন ম্যাক্স বিয়ারবোম (দ্য হ্যাপি হিপোক্রিট), চ্যাম্পফ্লেউরি, স্যামুয়েল পেপিস, আলফোনসে দদে এবং রুলফো ও অ্যারিওলাসহ তৎকালীন বেশ কিছু মেক্সিকান লেখকের বই। মেক্সিকোতে যেসব বই চুরি করেছিলেন, তার অনেকগুলোই ছিল কবিতার বই। আমাদো নেরভো, আলফানসো রেইয়েস, রেনাতো লেদাক, গিলবার্তো ওয়েন, হেরুতা ও তাবলাদা এবং ভ্যাসেল লিন্ডসের লেখা জেনারেল উইলিয়াম বুথ এন্টারস্ ইন টু দ্য হেভেনসহ বহু মার্কিন কবির কবিতার বই চুরি করা বইয়ের তালিকায় ছিল।

এভাবে চলতে চলতে রবের্তো বোলাইয়োঁ একসময় বইচোর থেকে ‘বই হাইজ্যাকার’-এ পরিণত হয়ে গেলেন। বই হাইজ্যাকার হিসেবে ‘সাফল্যজনক’ ক্যারিয়ার শেষ হলো একদিন ধরা পড়ে। আলামেদা থেকে বেশ দূরে আভেনিদা হুয়ারেজ এলাকায় একটা দোকানে বই চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েন। দোকানটির তাকে সারি সারি বুয়েনস আয়ারস ও বার্সেলোনা থেকে আনা অজস্র বই সাজানো থাকত। এ ছাড়া গাদা গাদা বই পাশে পড়ে ছিল। ভাগ্য ভালো, ঘটনাটা গ্লাস বুকস্টোরে ঘটেনি। ধরা পড়ার পর দোকান মালিক চরম অপমান করলেন এবং দেশছাড়া করার, এমনকি দোকানে আটকে বেদম পেটানোর হুমকিও দিলেন। সেদিন সঙ্গে থাকা বেশকিছু বই, যেগুলো তাদের দোকান থেকে চুরি করেননি, সেগুলোও রেখে দিলেন। এর মধ্যে লেখকের প্রিয় বই দ্য ফলও ছিল। ধরা পড়ার ঘটনার কিছুদিন বাদেই তিনি চিলিতে ফেরত যান এবং এর কয়েক মাসের মধ্যে সেখানে অভ্যুত্থান হয়। এই সময়টাতে অত্যন্ত নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করতে থাকেন রবের্তো বোলাইয়োঁ।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh