বাঘাইছড়িতে ইউপিডিএফ কর্মী খুন: বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ

রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৬:১১ পিএম

বিক্ষোভ মিছিল। ছবি: রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি

বিক্ষোভ মিছিল। ছবি: রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি

রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার বঙ্গলতলীতে ইউপিডিএফ কর্মী নিপন চাকমাকে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। 

আজ রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ইউপিডিএফ বাঘাইছড়ি ইউনিট এই কর্মসূচি পালন করে। সকাল ১০টায় ইউপিডিএফ কর্মী নিপন চাকমার মরদেহ কফিনে করে বঙ্গলতলী নুয়ো দোকান এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করা হয়। মিছিলটি পরে বটতলা এলাকায় গিয়ে শেষ হয় এবং সেখানেই প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। 

সমাবেশে সোহেল চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফের বাঘাইছড়ি ইউনিটের সংগঠক আর্জেন্ট চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের বাঘাইছড়ি উপজেলা সভাপতি বিরো চাকমা। 

ইউপিডিএফ সংগঠক আর্জেন্ট চাকমা বলেন, “শনিবার বঙ্গলতলীতে ‘ঠ্যাঙাড়ে নব্যমুখোশ-রাজাকাররা’ নিপন চাকমাকে গুলি করে হত্যা করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে একের পর এক হত্যাকাণ্ড চলছে। নিপন চাকমা জনগণের স্বার্থে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাই জনগণকেই তার হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।” তিনি অবিলম্বে নিপন চাকমার খুনিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের বাঘাইছড়ি উপজেলা সভাপতি বিরো চাকমা বলেন, “পাহাড়িরা আজ শাসকগোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের শিকার। বঙ্গলতলীতে সহযোদ্ধা নিপন চাকমাকে হত্যা সেই ষড়যন্ত্রেরই অংশ। শনিবার রাত সাড়ে ৯টার সময় রাতের আঁধারে নব্যমুখোশ-রাজাকার সন্ত্রাসীরা সহযোদ্ধা নিপন চাকমাকে কাপুরুষের মতো গুলি করে হত্যা করেছে।”

এদিকে, ইউপিডিএফ কর্মী খুনের ঘটনায় রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বাঘাইছড়ি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আধাবেলা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করে ইউপিডিএফ। উপজেলার বঙ্গলতলী, সাজেক ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় ইউপিডিএফের নেতা-কর্মীরা সড়কে আগুন জ্বালিয়ে ও গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করে রাখে। 

প্রসঙ্গত, শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টায় উপজেলার বঙ্গলতলী ইউনিয়নের বঙ্গলতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ইউপিডিএফ কর্মী নিপন চাকমাকে (৩৫) গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রসিত খীসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ শ্যামল কান্তি চাকমার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফকে (গণতান্ত্রিক) দায়ী করলেও সংগঠনটি হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) এর কেন্দ্রীয় সভাপতি শ্যামল কান্তি চাকমা বলেন, ‘ইউপিডিএফের এটা মনগড়া অভিযোগ করছে। এই মনগড়া অভিযোগের পেছনে তাদের রাজনৈদিক উদ্দেশ্য রয়েছে। ওই এলাকায় আমাদের পার্টির কার্যক্রমও নেই।’

বাঘাইছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইশতিয়াক আহমেদ জানান, ‘ঘটনাস্থল থেকে দুই কিলোমিটার দূরের বটতলা এলাকা থেকে রবিবার দুপুরে নিহত ইউপিডিএফ কর্মীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির ময়নাতদন্তের জন্য খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে।’

৩ মাসের মাথায় ইউপিডিএফের ৯ জন খুন:

এর আগে, গত বছরের ১১ ডিসেম্বর খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার লোগাং ইউনিয়নের অনিলপাড়ায় গুলি করে ইউপিডিএফের চার নেতাকে হত্যা করা হয়। ওই সময় প্রতিপক্ষের গুলিতে মারা যান ইউপিডিএফের সহযোগী সংগঠন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিপুল চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সুনীল ত্রিপুরা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সহসভাপতি লিটন চাকমা ও ইউপিডিএফ সদস্য রুহিন ত্রিপুরা।

পানছড়ির চার খুনের দেড় মাসের মাথায় গত ২৪ জানুয়ারি জেলার মহালছড়ি উপজেলায় আরও দুজনকে হত্যা করা হয়। তখন মারা যান ইউপিডিএফ সদস্য রবি কুমার চাকমা ও শান্ত চাকমা ওরফে বিমল। ৪ ফেব্রুয়ারি রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় আরও দুজন খুন হলেন। নিহত হলেন ইউপিডিএফ সদস্য দীপায়ন চাকমা ও আশুক্য চাকমা ওরফে আশীষ (৪৫)। সর্বশেষ শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে একই উপজেলায় ঘাতকের বুলেটে খুন হলেন ইউপিডিএফের আরেক কর্মী। এ নিয়ে তিন মাসের মধ্যেই খাগড়াছড়িতে ৬ ও রাঙ্গামাটিতে ইউপিডিএফের ৯ নেতাকর্মী প্রাণ হারালেন।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh