পারিশ্রমিকের দৈন্য হকিতে

মোয়াজ্জেম হোসেন রাসেল

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৪, ১২:০৫ পিএম

বাংলাদেশ হকি দল। ফাইল ছবি

বাংলাদেশ হকি দল। ফাইল ছবি

দেশের তৃতীয় জনপ্রিয় খেলা হলেও হকি নিয়ে হতাশার যেন শেষ নেই। এক মৌসুম সবকিছু ভালোভাবে চললেও পরের মৌসুমেই খেলা অনিয়মিত হয়ে পড়ে। পাশাপাশি পারিশ্রমিকের দৈন্য খেলাটি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করছে নতুন খেলোয়াড়দের। সময়ের হিসেবে দীর্ঘ ২৭ মাস পর ক্লাব কাপ হকি দিয়ে ঘরোয়া হকি আবার শুরু হয়েছে। হকির টার্ফ খেলোয়াড়দের পদচারণায় মুখর থাকলেও উল্টোপৃষ্ঠায় চলছে হতাশার মন খারাপের গল্প। 

প্রিমিয়ার ডিভিশনের খেলা শুরুর আগে প্রস্তুতিমূলক টুর্মামেন্ট হিসেবে চলছে এই টুর্নামেন্ট। একটি মাত্র হকি টার্ফ থাকলেও বছরের বেশিরভাগ সময়েই খালি পড়ে থাকে। কিছুদিন আগে শেষ হওয়া দলবদলে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পেয়েছেন মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম। ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব থেকে আবাহনী লিমিটেডে যোগ দিয়ে এই মৌসুমের জন্য সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পারিশ্রমিক পেয়েছেন এই পেলান্টি কর্নার স্পেশালিস্ট। এই যদি হয় একজন দেশসেরা খেলোয়াড়ের পারিশ্রমিক, তাহলে যারা নতুন ও কিছুটা কম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় তাদের অবস্থান কী হতে পারে সেটা সহজেই অনুমেয়। হকিতে হরহামেশাই এক লাখ টাকার নিচের পারিশ্রমিক পাওয়ার কথা শোনা যায়। যা এবারও অনেকে পেয়েছেন।

যে টাকা একজন হকি খেলোয়াড় পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন সেটা ফুটবল কিংবা ক্রিকেটে ‘খ্যাপ’ খেলেই আয় করে থাকেন। হকিতে পরিচিত দল সোনালী ব্যাংক ও আজাদ স্পোর্টিং ক্লাব এবারের দলবদলে অংশ না নেওয়ায় খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক আরও কমে গেছে। জাতীয় দলের খেলোয়াড়রা গড়ে ৪/৫ লাখ টাকা পারিশ্রমিক পেয়েছেন। 

পাশাপাশি হকির দৈন্যও প্রকাশ পাচ্ছে। খেলাটির কঙ্কালসার অবস্থাও এখন অনেকটা সমানে চলে এসেছে। এর বাইরে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে অনিয়মিত লিগ খেলা। সে কারণেই বর্তমান প্রজন্মের খুব কম অংশই রয়েছেন যারা হকি খেলোয়াড় হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চান। এখনো হকি টিকে আছে সার্ভিসেস দলের কারণে। বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) থেকে উঠে আসা খেলোয়াড়দের চাকরি দিয়ে খেলাটাতে বাঁচিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশের মতো দলগুলো। 

হকির নিজস্ব স্টেডিয়াম থাকা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক পরিম-লে নেই বড় কোনো সাফল্য। লিগও হয় না নিয়মিত। ধারাবাহিকতা না থাকায় গত কয়েক বছরে অনেক প্রতিভা হারিয়ে গেছে। সে কারণে এবার মৌসুম শুরু হয়ে নিয়মিত হবে হকি- এই প্রত্যাশা করছেন সবাই। সময়ের হিসেবে ২০১৪, ২০১৬, ২০১৮, ২০২১ ও ২০২৪, গত এক দশকে এই কয়েক বছরই ঘরোয়া আসর আয়োজন করতে পেরেছে হকি ফেডারেশন। প্রতিবছর খেলা না হওয়াই যেন অনেকটাই নিয়ম হয়ে গেছে হকিতে! এক মৌসুম খেলা মাঠে গড়ালে পরের বছর নানা ছুতোয় বিশ্রাম পান খেলোয়াড়রা, কখনো কখনো সেই বিশ্রাম ২/৩ বছরে গিয়েও ঠেকেছে। সেই ‘নিয়ম’ ধরে রেখে টার্ফে ফিরছে হকি। হকি লিগকে তাই অনেক খেলোয়াড় ইদানীং ‘অলিম্পিক’ নামে ডাকছেন! অলিম্পিকের জন্য যেমন চার বছর অপেক্ষায় থাকতে হয়, তেমনি অবস্থা হকিতেও। হকি বাঁচিয়ে রাখতে নিয়মিত ঘরোয়া আসর আয়োজনের পাশাপাশি আন্তজার্তিক টুর্নামেন্ট আয়োজনও জরুরি বলে মনে করছেন খেলাটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh