গল্পকথা পরিবারের ব্যতিক্রমী বইমেলা

এস.কে সাহেদ, লালমনিরহাট

প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২৪, ০৬:১৬ পিএম

ব্যতিক্রমী বইমেলা। ছবি: লালমনিরহাট প্রতিনিধি

ব্যতিক্রমী বইমেলা। ছবি: লালমনিরহাট প্রতিনিধি

বই পড়ার প্রতি আগ্রহী গড়ে তুলতে ব্যতিক্রমী এক বইমেলার আয়োজন করেছে লালমনিরহাটের ঐতিহ্যবাহী গল্পকথা পরিবার। শহরের ভোকেশনাল রোডের মৃধা বাড়িতে চলছে এ বইমেলা।

আজ শুক্রবার (১ মার্চ) থেকে শুরু হওয়া বই মেলা চলবে ১০দিন। মেলা প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।

জানা গেছে, স্থানীয় আঞ্চলিক ও বরেণ্য কবি সাহিত্যিকদের পরিচিত করতে তাদের বই আগামী প্রজন্মের হাতে তুলে দিতে ১০ দিন ব্যাপী এ বইমেলার আয়োজন করেছে গল্পকথা পরিবার। আর এ বইমেলা উদ্বোধনী নিনেও ছিল ব্যতিক্রম আয়োজন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কোন অতিথি ছিল না। পাঠক দর্শনার্থী আর মেলায় আগন্তুকরাই উদ্বোধক। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সকাল ১১টায় অটো উদ্বোধন হয়েছে বইমেলা। বইমেলায় স্থানীয় আঞ্চলিক ও বরেণ্য কবি সাহিত্যিকদের লেখা প্রায় ৩ হাজার বই স্থান পেয়েছে। আয়োজকরা জানান, এ আয়োজন শুধু ১০ দিনেই নয়। বিশেষ বিশেষ দিনগুলিতে থাকবে বই এ মেলার আয়োজন। 

এদিকে সাহিত্য সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে, আগামী প্রজন্মকে মোবাইল গেম আসক্তি থেকে সরিয়ে বই ও ঐতিহ্যকে লালন করতে ব্যতিক্রমী এ বই মেলার পাশাপাশি আড্ডার আয়োজন করেছে গল্পকথা পরিবার। সেখানে গ্রামীণ ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দিয়ে সাজানো হয়েছে পুড়ো মৃধাবাড়ি। সেখানে আগন্তুকরা ইট পাথরের শহরের মাঝে ফিরে পাবেন এক গ্রামীণ শান্ত পরিবেশ। বিগত দিনের হারানো গ্রামীণ সব আসবাব পত্রে সাজানো হয়েছে।

আড্ডা দিতে আসা আগন্তুকদের খাবারের জন্য একটি রেস্টুরেন্টও রয়েছে এখানে।  রেস্টুরেন্ট মূলত আড্ডার ফাঁকে খাবারের জন্য এবং গল্পকথা দেখভাল করার সাপোর্ট স্টাফদের পারিশ্রমিক বাবদ ব্যয় হয় রেস্টুরেন্টের অর্থ। এ রেস্টুরেন্টে আগাম মূল্য পরিশোধ করে নিজেকে নিয়ে পছন্দের স্থানে বসলে খাবারের সু ব্যবস্থা। খাবার রান্নায় পারদর্শী গ্রামীণ নারীরা তাদের খাবার রান্না করে এখানে প্রদর্শন করে বিক্রি করতে পারেন। গ্রামীণ নারীদের রান্নার কাজকে উৎসাহিত করতে, নারী উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যে এ সুযোগ দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এ রেস্টুরেন্টে পার্টটাইম কাজের সুযোগও রয়েছে। স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত দামে প্রতি ঘণ্টা হিসেবে কাজ করে মজুরী নিতে পারেন।

পুড়ো মৃধাবাড়িকে গ্রামীণ পরিবেশে সাজানো হয়েছে। হারাতে বসা গ্রামীণ সেই টং ও কুড়ো ঘর। রয়েছে বাঁশ বেতের তৈরি বেড়া। আপ্যায়ন করা হয় মাটির তৈরি সব তৈজসপত্রে। এখানে রয়েছে আঞ্চলিক ভাষা চর্চার ব্যবস্থা ও শান্ত পরিবেশে পছন্দের বই পড়ার সুযোগ। বই পড়ার জন্য লাইব্রেরীও রয়েছে এখানে। রয়েছে কবিতা আবৃতি ও আঞ্চলিক গান গজল পরিবেশনার ব্যবস্থাও। এসব পরিবেশনে কারও কোন অনুমতির প্রয়োজন নেই। ইচ্ছে হলেই ডায়াসের সামনে গিয়ে যে কেউ পরিবেশন করতে পারবেন। তবে তা হতে হতে পরিচ্ছন্ন অঞ্চলিকতা ও ঐতিহ্যকে ঠিক রেখে। সব মিলে গ্রামীণ এক মনোরম পরিবেশ। এখানে বসে মোবাইলে গেম খেলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। 

স্থানীয় কবি ও সমাজসেবক ফেরদৌসী বেগম জানান, বই পড়ে বা কিনে কেউ বিপথে যায়নি। বই আধুনিকতার নামে আমাদের প্রজন্ম খারাপ কাজে প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিপথগামী হওয়া থেকে রক্ষা করে। আগামী প্রজন্মকে মোবাইল গেম থেকে সরিয়ে বইয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে গল্পকথা বই মেলা অন্যতম ভূমিকা রাখবে। বর্তমান প্রজন্ম হারানোর দিনের অনেক ঐতিহ্য ভুলতে বসেছে। তাদের কাছে সেই ঐতিহ্যকে পরিচয় করিয়ে দিবে গল্পকথা পরিবার। গ্রামীণ পরিবেশে আড্ডার সাথে বই পড়ার সুযোগ থাকায় তিনি সকলকে সপরিবারে বইমেলায় আসার আহবান জানান।

বইমেলার আয়োজক সংস্কৃতিকর্মী মুনিম হোসেন পথিক জানান, আগামী প্রজন্মকে মোবাইল গেমিং আসক্তি থেকে সরিয়ে বইয়ের প্রতি আগ্রহী করতে গল্পকথা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। জার্মান প্রবাসী মইনুল হক মৃধার পরিত্যক্ত পৈত্রিক মৃধাবাড়িটি নিয়ে গল্পকথা গড়ে তোলা হয়। হারাতে বসা গ্রামীণ ঐতিহ্যের সাথে নতুন তথা আগামী প্রজন্মকে পরিচয় করিয়ে দিতে গ্রামীণ পরিবেশে এটি গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে আমাদের ছেলে মেয়েরা এসে গ্রামীণ ঐতিহ্যের সাথে পরিচিত হতে পারবে। আড্ডার সাথে লাইব্রেরীর বইও পড়তে পারবে।

স্থানীয় লেখক কবি ও সাহিত্যিকদের পরিচিত করতে ও তাদের লেখা বই পাঠকদের হাতে তুলে দিতে বইমেলার আয়োজন করা হয়েছে। বইমেলা প্রতিটি বিশেষ দিনে করা হবে। গ্রামীণ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে এবং বই পড়ায় আগ্রহ বাড়াতে অভিভাবকরা মেলায় গল্পকথা নিয়ে আসবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh