ইসরায়েলি আগ্রাসনের লক্ষ্য ফিলিস্তিনি নারী-শিশু

স্বর্ণা চৌধুরী

প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০২৪, ১১:২২ এএম

প্রায় ৫ মাস ধরে চলা ইসরায়েলি আগ্রাসনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ফিলিস্তিনি নারী ও শিশু। ছবি: আল জাজিরা

প্রায় ৫ মাস ধরে চলা ইসরায়েলি আগ্রাসনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ফিলিস্তিনি নারী ও শিশু। ছবি: আল জাজিরা

২১ বছর বয়সী সারা গত অক্টোবর থেকে কোনো রাতেই ঠিকমতো ঘুমাননি। গত জুলাই মাসে তার বিয়ে হয়েছিল। উত্তর গাজায় সারাদের ঘর এখন ধ্বংসস্তূপ। তিনি চোখের সামনে অনেক নারীকে বিধবা হতে দেখেছেন, যার মধ্যে তার মা-ও রয়েছেন। ২০১৫ সালে ইসরায়েলি বাহিনীর এক বিমান হামলায় সারার বাবা নিহত হয়েছিলেন। সারার মতে, তার স্বামী এখনো বেঁচে আছে, এটাই বড় পাওয়া। তবে রাফায় আশ্রয় নেওয়া সারাদের পরিবার কার্যত প্রতি মুহূর্তেই মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে। আর এমন লড়াই যে তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল, তা সারা এবং তার মতো নতুন প্রজন্মের অনেকেই আগে থেকে অনুভব করছিলেন। 

প্রায় ৫ মাস ধরে চলা ইসরায়েলি আগ্রাসনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ফিলিস্তিনি নারী ও শিশু। যে কারণে গাজায় নিহতদের আর্ধেকেরও বেশি নারী ও শিশু। এতদিন এমন শঙ্কা সাংবাদিকসহ বিভিন্ন মহল থেকে উঠছিল। এবার জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ইসরায়েলের নারী-বিদ্বেষী অবস্থানটি স্পষ্ট করেছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের অফিস (ওএইচসিএইচআর) ১৯ ফেব্রুয়ারি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গাজায় ফিলিস্তিনি নারী ও কন্যাশিশুদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। তারা ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুদের সুস্পষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। 

ইসরায়েলি উগ্রপন্থি নেতাদের ভাষ্যে তাদের নারী-বিদ্বেষ স্পষ্ট হয়। নারীরাই ফিলিস্তিনের পরবর্তী প্রজন্মের যোদ্ধাদের জন্ম দিচ্ছেন। আর শিশুরাই আগামীদিনের যোদ্ধা। তাই তারা ওই নারী ও শিশুদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। বিচারবহির্ভূত হত্যার যেসব খবর জানতে পেরেছেন, তাতে মানবাধিকারকর্মীরা রীতিমতো হতবাক। নারীরা আশ্রয় চাওয়া বা পালিয়ে যাওয়ার সময় তাদের হত্যা করা হয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বা তাদের সহযোগী বাহিনীর হাতে নিহত হওয়ার সময় তাদের কয়েকজনের হাতে সাদা কাপড়ের টুকরা ছিল।

জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞরা গাজা ও পশ্চিম তীরে মানবাধিকার পর্যবেক্ষক, সাংবাদিক এবং মানবিক ত্রাণকর্মীসহ শত শত ফিলিস্তিনি নারী ও কন্যাশিশুকে নির্বিচারে আটকে রাখার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অনেক আটক নারীর সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হয়েছে। তাদের পিরিয়ডের সময় প্যাড, খাবার, এমনকি প্রয়োজনীয় ওষুধ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। নারীদের ব্যাপক মারধর করা হয়েছে বলে ওএইচসিএইচআর জানিয়েছে। গাজায় আটক ফিলিস্তিনি নারীদের খাবার ছাড়াই বৃষ্টি ও ঠান্ডায় খাঁচায় আটকে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞরা বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা বিশেষ করে এমন খবরে ব্যথিত যে, আটক ফিলিস্তিনি নারী ও মেয়েরা বিভিন্ন ধরনের যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে নারীদের নগ্ন করে ইসরায়েলি পুরুষ সেনা কর্মকর্তাদের দ্বারা তল্লাশি করা। অন্তত দুই ফিলিস্তিনি নারী বন্দিকে ধর্ষণ করা হয়েছে এবং অন্যদের ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।’

এমনকি অবমাননাকর পরিস্থিতিতে ফেলতে ইসরায়েলি সেনারা নারী বন্দিদের ছবি তুলে অনলাইনে আপলোড করে বলে জানা যায়। গাজায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী যেসব জায়গায় প্রবেশ করেছে, সেখানকার অসংখ্য ফিলিস্তিনি নারী ও শিশু নিখোঁজ হয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক কন্যাশিশুকে জোরপূর্বক ইসরায়েলে স্থানান্তর করে এবং ওই শিশুর মা-বাবা তার কোনো খোঁজ পায়নি। ওএইচসিএইচআর এসব অভিযোগের একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর তদন্ত এবং ইসরায়েলকে এতে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছে। বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, ‘এসব ঘটনা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার এবং মানবিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন এবং রোম সংবিধির অধীনে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আইনের অধীনে গুরুতর বিচারযোগ্য অপরাধ। ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের সম্পূর্ণ প্রতিকার ও ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। যারা এই অপরাধের জন্য দায়ী তাদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।’

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh