ইফতারে খেজুরের বিকল্প নয় বরই

মাহফুজ আদনান

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৪, ১০:১৪ এএম

খেজুর ও বরই। ফাইল ছবি

খেজুর ও বরই। ফাইল ছবি

ইফতারে খেজুরের পরিবর্তে বরই খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া নিয়ে নানা আলোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। প্রশ্ন উঠেছে ইফতারিতে বরই কি খেজুরের বিকল্প হতে পারে? দেশি ফল বরইয়ের পুষ্টিগুণ ও ইফতারির তালিকায় সেটিকে রাখা নিয়ে কোনো সমস্যা দেখছেন না পুষ্টিবিদ ও ইসলামিক আলোচকরা। তবে তারা বলছেন, খেজুরের সঙ্গে যে ধর্মীয় আবেগ ও পুষ্টিগুণের বিষয়গুলো রয়েছে, তা কখনোই বরই দিয়ে পূরণ করা সম্ভব না। তাদের অনেকেই খেজুর ও বরইয়ের মধ্যে একটিকে অপরটির বিকল্প হিসেবেও মনে করেন না। জেনে নিই খেজুর ও বরইয়ের পুষ্টিগুণ বিষয়ে...

খেজুর: খেজুর অত্যন্ত সুস্বাদু একটি ফল। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, আয়রন, ভিটামিন এবং ম্যাগনেসিয়ামসহ নানা পুষ্টিগুণ।

১. খেজুর নানা ভিটামিনে পরিপূর্ণ থাকায় এটি মস্তিষ্কের চিন্তাভাবনার গতি বৃদ্ধি রাখে, সঙ্গে স্নায়ুতন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ছাত্রছাত্রী যারা নিয়মিত খেজুর খায় তাদের দক্ষতা অন্যদের তুলনায় ভালো থাকে। 

২. প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি থাকার কারণে খেজুর খুব দ্রুত শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। বয়স বৃদ্ধির কারণে ঝিমুনি ভাব দেখা দিলে প্রতিদিন তিনটি খেজুর খান। 

৩. যকৃতের সংক্রমণে খেজুর উপকারী। এ ছাড়া গলাব্যথা, বিভিন্ন ধরনের জ্বর, সর্দি এবং ঠান্ডায় খেজুর উপকারী। খেজুর অ্যালকোহলজনিত বিষক্রিয়ায় বেশ উপকারী। ভেজানো খেজুর খেলে বিষক্রিয়া দ্রুত কাজ করে। এ ছাড়া নিয়মিত খেজুর খাওয়ার অভ্যাসে বৃদ্ধি পায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও।

৪. খেজুরে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিনবি১, বি২, বি৩ এবং বি৫। এ ছাড়া ভিটামিন এ১ এবং সিসহ নানা ভিটামিনের পাওয়ার হাউস বলা যায় খেজুরকে। এটি দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে, রাতকানা রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। 

৫. খেজুরে রয়েছে পটাশিয়াম, যা হৃদ্রোগ প্রতিরোধ করে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, খেজুর ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমায় (এলডিএল) এবং ভালো কোলেস্টেরলের (এইচডিএল) পরিমাণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

৭. খেজুরে থাকা প্রচুর পরিমাণে আয়রন শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে। রক্তাল্পতা দেখা দিলে বা হিমোগ্লোবিনের কমতি হলে খেজুর খাওয়া শুরু করুন। 

৮. খেজুর হজমশক্তি বাড়ায়। অন্ত্রের কৃমি ও ক্ষতিকারক পরজীবী প্রতিরোধে খেজুর বেশ সহায়ক। খেজুরে আছে এমন সব পুষ্টিগুণ, যা খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে।

৯. ক্যালসিয়াম হাড় গঠনে সহায়ক। আর খেজুরে আছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, যা হাড়কে মজবুত করে। সেই সঙ্গে মাড়ির স্বাস্থ্যও সুরক্ষিত রাখে।

বরই: বরই আকারে ছোট হলেও এর গুণাগুণ অনেক। ফলটি খেতে টক-মিষ্টি এবং সুস্বাদু হয়। বরইয়ের রস অ্যান্টি-ক্যানসার ড্রাগ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। ঠান্ডা, জ্বর প্রতিরোধে বরই বেশ কার্যকর। আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞদের মতে, বরইতে রয়েছে অনেক পুষ্টি উপাদান। যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে।

১. বরইয়ে আছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। যার উপস্থিতিতে অক্সিজেন অন্য কোনো উপাদানের সঙ্গে বিক্রিয়া করে দেহকোষের ক্ষতি করতে পারে না।

২. বরই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। মৌসুমি অসুখ জ্বর, সর্দি, কাশি থেকেও দেহকে সুরক্ষা প্রদান করে। এ ছাড়া এতে থাকা ভিটামিন সি সংক্রামক রোগ হওয়া থেকে শরীরকে রক্ষা করে।

৩. বরই হার্ট ভালো রাখে। এতে রয়েছে পলিফেনোলস, যা কার্ডিও ভাস্কুলার ঝুঁকি এড়াতে সাহায্য করে। বরই রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে, এতে হার্ট সচল থাকে। 

৪. বরইয়ে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড থাকে। এই অ্যাসিড রক্তের শর্করার ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে। আর এতে থাকা ফাইবার উপাদান রক্তের সুগার বাড়তে দেয় না এবং নিয়ন্ত্রণে রাখে।

৫. বরইয়ে ফাইটোকেমিক্যাল থাকার দরুণ শরীর এর প্রদাহ কমে যায়। এর ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।

৬. বরইয়ে রয়েছে ক্যান্সার কোষ, টিউমার কোষ এবং লিউকোমিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা। এটিকে অ্যান্টি-ক্যান্সার ফল বলা হয়।

৭. বরই যকৃৎকে পরিশুদ্ধ রাখে এবং এর কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। বরই খাবার হজম করতে সাহায্য করে। বরইয়ে খাবার পরিপাকে সহায়ক এনজাইমের উপস্থিতি রয়েছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh