ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৪, ১০:১৮ এএম
ফেনীতে ইসলামিক স্থাপনা।
ফেনীতে উদ্বোধন হওয়া একটি ‘ইসলামিক স্থাপনা/ভাস্কর্য’ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে চলছে ব্যাপক আলোচনা। ফেনী শহরকে ‘আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন’ করার উদ্যোগের একটি অংশ হিসেবে এই স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী। এমনকি সারাবিশ্বের কোথাও এমন স্থাপনা তৈরি হয়নি বলেও তিনি দাবি করেন।
এই স্থাপনাটি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে। অনেকেই সেটির ছবি শেয়ার করছেন। কিন্তু জেলা শহরের একটি স্থাপনা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে এতটা আগ্রহ কেন তৈরি হয়েছে?
পৌরসভার অর্থায়নে ফেনী শহরের ট্রাংক রোড ও মিজান রোডের সংযোগস্থলে নির্মাণ করা স্থাপনাটির নাম দেয়া হয়েছে ‘শান্তি চত্বর’।
গত রবিবার (১৭ মার্চ) সন্ধ্যায় শহরের মূল সড়কে স্থাপনাটির উদ্বোধন করেন ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী।
এ সময় তিনি বলেন, পবিত্র রমজান মাসে আমরা আল্লাহর ৯৯টি নামের সাত হাজার লাইটবিশিষ্ট এই জিনিসটির শুভ উদ্বোধন করতে পেরেছি। পৃথিবীর কোথাও এই ধরনের চত্বর হয় নাই। এই প্রথম ফেনীতে এটা হয়েছে।
এটি আসলে দুই রোডের সংযোগস্থলে নির্মিত স্থাপনাটি মূলত চারকানো আকৃতির একটি স্তম্ভ। তার ওপরে আছে ছয়কোণা আকৃতির পাটাতন, আর এই পাটাতনের ওপর বসানো হয়েছে চারটি এলইডি স্ক্রিন। ওপরে বসানো স্ক্রিনসহ স্থাপনাটির মোট উচ্চতা ৩২ ফুট। এর মধ্যে কেবল স্ক্রিনের উচ্চতাই ১২ ফুট।এই স্ক্রিনে কেবল মক্কা ও মদিনার বিভিন্ন চ্যানেলের ওয়াজ প্রচার করা হবে বলে জানান পৌর মেয়র। এছাড়া কোন ধরনের বিজ্ঞাপন বা জাতীয় অনুষ্ঠান প্রচার করা হবে না বলেও জানান তিনি। আর চত্বরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এর পাশেই নির্মাণ করা হয়েছে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।
তবে এই স্থাপনাটির বিশেষত্ব হচ্ছে এতে খোদাই করা আল্লাহর ৯৯টি নাম ও স্তম্ভটিতে বসানো সাত হাজার এলইডি লাইট।স্থাপনাটির পুরোটা জুড়ে আল্লাহর সব নাম লেখা রয়েছে। এছাড়াও স্তম্ভের দেয়ালে বড় করে আরবিতে লেখা আছে ‘আল্লাহু’ এবং ‘মোহাম্মদ’।
এ নিয়ে পৌরসভা মেয়র নজরুল ইসলাম বলেন, হয়তোবা অন্য আঙ্গিকে করেছে বা আরও দামিও থাকতে পারে। কিন্তু সাত হাজার এলইডি লাইটসহ আল্লাহর সব নাম নিয়ে এমন কোন ভাস্কর্য আর কোথাও নির্মাণ হয়নি।
যেভাবে উদ্যোগ নেয়া হলো
প্রায় এক বছর আগে নিজেই নবনির্মিত স্থাপনাটি তৈরির পরিকল্পনা করেন বলে জানান পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী। নিজেই এর নকশাও করেন বলে জানান তিনি।
“এটার ডিজাইনটা আমিই চয়েস করছি। তারপর একজন আর্কিটেক্ট সেই অনুযায়ী এটা করে দিয়েছে”, বলেন মেয়র।
তিনি বলেন, পৌরসভার অর্থায়নে পাঁচ থেকে ছয় মাস আগে শান্তি চত্বরের নির্মাণ কাজ শুরু হয়, যার উদ্বোধন করা হয় রবিবার সন্ধ্যায়।
স্থাপনাটি নির্মাণে প্রায় এক কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান মেয়র।
যে সড়কটিতে শান্তি চত্বর নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানে আছে একটি আলিয়া মাদ্রাসা ও ঈদগাহ ময়দান। ‘মিজান ময়দান’ নামের এই ঈদগাহ ময়দানে ওয়াজ মাহফিল থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক কেরাত সম্মেলনও আয়োজন করা হয়।
সবমিলিয়ে এক ধরনের ধর্মীয় আবহ থাকার কারণেই ‘চত্বর’ বানানোর জন্য স্থানটিকে বেছে নেয়ার কথা জানান পৌর মেয়র।
‘আশপাশে মিজান ময়দান, সেখানে বড় মাহফিল, ওয়াজ, কেরাত, সম্মেলন হয়। কিন্তু এই জায়গা অন্ধকার থাকে। এখানে যদি ধর্মীয় একটা ভাস্কর্য করতে পারি তাহলে সুন্দর হয়, বলেন তিনি।
তবে এর আগেও এখানে একটি স্থাপনা ছিল। ছয় কোণা আকৃতির সেই স্থাপনাটিতেও আরবিতে ‘আল্লাহু’ ও ‘মোহাম্মদ’ লেখা ছিল। তবে সেটি আকারে ছিল বেশ ছোটো।
শান্তি চত্বর বানানোর প্রায় আট মাস আগে একটি প্রতিষ্ঠান নিজ উদ্যোগে সেই স্থাপনাটি বানিয়েছিল বলে জানান মেয়র মিয়াজী। প্রায় চার থেকে পাঁচ মাস স্থাপনাটি ওই জায়গায় ছিল। তবে সেই স্থাপনা ‘দৃষ্টিনন্দন ছিল না’ এবং যেভাবে চেয়েছিলেন সেভাবে নির্মাণ হয়নি বলেও জানান তিনি। -বিবিসি