হাজং বিদ্রোহের নেত্রী কুমুদিনী মারা গেছেন

নেত্রকোণা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৪, ০৫:৪৬ পিএম | আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৪, ০৫:৫০ পিএম

কমরেড কুমুদিনী হাজং। ছবি: নেত্রকোণা প্রতিনিধি

কমরেড কুমুদিনী হাজং। ছবি: নেত্রকোণা প্রতিনিধি

নেত্রকোণা জেলার দুর্গাপুরে ব্রিটিশ বিরোধী ও টঙ্ক আন্দোলন তথা হাজং বিদ্রোহের একমাত্র সংগ্রামী মুখপাত্র কমরেড কুমুদিনী হাজং (৯২) আর নেই।

আজ শনিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে বার্ধক্য জনিত কারণে নিজ বাড়ি বহেড়াতলীতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। 

নেত্রকোণা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী কুল্লাগড়া ইউনিয়নের বহেড়াতলী গ্রামে পাহাড়ি অঞ্চলের এক টিলায় বসবাস করতেন তিনি। হাজং বিদ্রোহের সাক্ষী কুমুদিনী হাজং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধু, টঙ্ক আন্দোলন, ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, পাকিস্তানি জুলুম বৈষম্য, নিপীড়ন, ১৯৬৪ এর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, মহান স্বাধীনতা আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলনের কালের সাক্ষী ছিলেন তিনি। 

টঙ্ক আন্দোলনকারীদের খোঁজ করার নামে আন্দোলনকারী কৃষক হাজং নেতা কুমুদিনীর স্বামী লংকেশ্বর হাজংকে ঘরে না পেয়ে ব্রিটিশ পুলিশ নববধূ কুমুদিনীকে জোর করে নিয়ে যাচ্ছিল দুর্গাপুর সেনাছাউনির দিকে। এই খবর পেয়ে বহেরাতলী গ্রামের রাশিমনি হাজং শতাধিক নারী পুরুষ নিয়ে দেশীয় দা, ঝাড়ু, বল্লম, লাঠি, তীর ধনুকসহ সুমেশ্বরী নদীর তীরে কুমুদিনীকে ছেড়ে দিতে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। কিন্তু পুলিশ কোন কথাই না শুনে টেনেহিঁছড়ে কুমুদিনীকে দুর্গাপুরের সেনাছাউনির দিকে নিয়ে যাওয়ার প্রাক্কালে রাশমনি হাজং দা দিয়ে পুলিশদের এলোপাতাড়ি কুপাতে থাকলে একজন পুলিশ ঘটনাস্থলেই মারা যান। পুলিশের গুলিতে রাশিমনি হাজং নিহত হন। সহযোদ্ধা সুরেন্দ্র হাজং সেই পুলিশকে কুপিয়ে মেরে ফেলেন। পরবর্তীতে পুলিশের গুলিতে ২২ জন হাজং কৃষক নারী-পুরুষ মারা যান। পরে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পুলিশ চলে যায়। গ্রামবাসীদের ওপর আরো হামলা হতে পারে এই ভয়ে লাশগুলো সুমেশ্বরী নদীতে ভাসিয়ে দেয়। পরদিন ব্রিটিশ পুলিশ বহেরাতলী গ্রামে তাণ্ডব চালায় এবং পুরো গ্রামকে তছনছ করে ফেলে। কুমুদিনী হাজং এর স্বামী মারা যান ২০০০ সালে। কুমুদিনী হাজং টঙ্ক প্রথা বিরোধী যুদ্ধে পরাজিত হন নাই। পরাজিত হয়েছেন বার্ধক্যের কাছে। পরাজিত হয়েছেন নিজের জমি উদ্ধারের সংগ্রামে। তিনি দুর্গাপুরবাসীর কাছে গর্ব ও গৌরবের সংগ্রামী মুখ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। 

তিনি বেশ কিছু পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন তারমধ্যে, ১৯৯৯ সালে তেভাগা কৃষক আন্দোলনের ৫০ বছর পূর্তিতে পুরস্কার, ২০০৩ সালে অনন্যা শীর্ষ দশ নির্বাচিত পুরস্কার, ২০০৫ সালে স্বদেশ চিন্তা সংঘ ড. আহম্মদ শরীফ স্মারক পুরস্কার, ২০০৭ সালে মনিসিংহ স্মৃতিপদক পুরস্কার, ২০১০ সালে সিধু কানহু ফুলমনি পদক, ২০১৪ সালে জলশিঁড়ি পদক, ২০১৮ সালে হাজং জাতীয় পুরস্কার, ২০২১ সালে নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক সম্মাননা, ২০২২ সালে পথ পাঠাগার সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।

তার মৃত্যুতে, স্থানীয় সংসদ সদস্য মোশতাক আহমেদ রুহী, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রেমন্ড আরেং, দুর্গাপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম. রকিবুল হাসান, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা কমরেড দিবালোক সিংহ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পরিচালক গীতি কবি সুজন হাজং, দুর্গাপুর প্রেসক্লাব পরিবার, পথ পাঠাগার পরিবার, বাংলাদেশ হাজং ছাত্র সংগঠন, সিপিবি নেত্রকোণা  জেলা ও দুর্গাপুর উপজেলা কমিটি সহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। মৃত্যুকালে ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। রবিবার (২৪ মার্চ) সকালে স্থানীয় শ্মশানঘাটে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh