কোথায় হারাল ফুটবলারদের ব্যক্তিগত দ্বৈরথ

আহসান হাবীব সুমন

প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৯:০২ এএম

মোনেম মুন্না ও কায়সার হামিদ। ফাইল ছবি

মোনেম মুন্না ও কায়সার হামিদ। ফাইল ছবি

বাংলাদেশের বর্তমান ফুটবল প্রজন্ম মেতে আছে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো আর লিওনেল মেসির শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে। দুই মহাতারকার মধ্যে কে সেরা- সেই প্রশ্নের সমাধান খুঁজতে যেন ঘুম নেই তাদের। কিন্তু তারা কি জানে, একদা বাংলাদেশের ফুটবলেও ফুটবলাররা মেতেছিলেন নিজেদের ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রতিদ্বন্দ্বিতায়? 

অনেকের মতে, বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ফুটবলার কাজী সালাউদ্দিন। বর্তমান বাফুফে সভাপতি খেলোয়াড়ি দক্ষতা আর তারকা-খ্যাতিতে ছিলেন অনন্য। কিন্তু অপ্রতিদ্বন্দ্বী নন। খেলার মাঠে সালাউদ্দিনের যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বীর সম্মান আদায় করে নিয়েছিলেন এনায়েতুর রহমান খান। সালাহউদ্দিন আর এনায়েত ছিলেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অপরিহার্য সদস্য। স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশ দলেও খেলেছেন সহযোদ্ধা হিসেবে। ১৯৭৩ সালের ২৬ জুলাই মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত মারদেকা কাপে থাইল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ খেলে ফিফা-স্বীকৃত প্রথম আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ। সেই ম্যাচে প্রথম গোল করে এনায়েত বনে যান লাল-সবুজের জার্সিতে প্রথম আন্তর্জাতিক গোলদাতা। একই ম্যাচে দ্বিতীয় গোলটি করেন সালাউদ্দিন। 

ক্লাব ফুটবলে সালাউদ্দিনের ক্যারিয়ার প্রায় পুরোটা কেটেছে আবাহনীতে। ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আবাহনীর সঙ্গী সালাউদ্দিন। ১৯৮৪ সালে অবসর নেন আবাহনী থেকেই। সালাউদ্দিন বাংলাদেশের ফুটবলের ‘পারফেক্ট টেন’। লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতার খেতাব জিতেছেন ১৯৭৩, ১৯৭৭, ১৯৭৯ ও ১৯৮০ সালে। তিনি গোল করেছেন উত্তর কোরিয়া এবং কাতারের মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষেও। ১৯৭৫ আর ১৯৭৯ সালে দুই বার জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। 

অন্যদিকে এনায়েত খেলেছেন বিজি প্রেস, ওয়াপদা, ইপিআইডিসি, বিজেএমসি, মোহামেডান আর ভিক্টোরিয়ায়। কামানের গোলার মতো শট নিতে পারতেন। রহমতগঞ্জের বিপক্ষে কোনো এক ম্যাচে তার শট বেরিয়ে গিয়েছিল জাল ছিঁড়ে! বলা হয়, এনায়েতের মতো বল প্লেমেকার বাংলাদেশের ফুটবলে আসেনি। ১৯৭৮ সালে ঢাকা লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন তিনি।

সালাউদ্দিন ও এনায়েতের মধ্যে ফুটবল ভক্তরা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ পেতেন। যদিও এনায়েত নিজে সালাউদ্দিনকে ‘শ্রেয়’ হিসেবে মেনে নেওয়ার মহানুভবতা দেখাতে কুণ্ঠাবোধ করেন না। নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার গল্পকেও তিনি উড়িয়ে দেন ‘মিডিয়ার কারসাজি’ হিসেবে। 

মোনেম মুন্নাকে বাংলাদেশের ‘কিং ব্যাক’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। তবে তার ‘কিং-ব্যাক’ খেতাবকে চ্যালেঞ্জ জানানোর জন্য ছিলেন কায়সার হামিদ। ১৯৮৭-৯৮ পর্যন্ত ঢাকা আবাহনীর অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন মুন্না। আর ১৯৮৫-৯৫ পর্যন্ত কায়সার ছিলেন মোহামেডানের অপরিহার্য সদস্য। দীর্ঘদেহী কায়সার কলকাতা মোহামেডানের জার্সিতে খেলেছেন। আর মুন্না হয়ে আছেন কলকাতা ইস্ট বেঙ্গলের ‘কিংবদন্তি’। 

কায়সার ক্যারিয়ারের শুরুতে ছিলেন ‘রাইট ব্যাক’। পরে স্টপার ব্যাক বা সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার হয়ে খেললেও কখনো পজিশন পরিবর্তন করেননি। মুন্নাও ছিলেন স্টপার-ব্যাক। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল কোচ নাইমুদ্দিন তাকে খেলান লিবেরো বা সুইপার পজিশনে। জাতীয় দলে সহযোদ্ধা হিসেবে দীর্ঘদিন খেলা মুন্না আর কায়সার ঘরোয়া ফুটবলে ছিলেন চির-প্রতিদ্বন্দ্বী। দুজনই গড়েছেন ভিন্ন মৌসুমে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকের রেকর্ড। ঢাকার মাঠে ফুটবলার হিসেবে জনপ্রিয়তায় মুন্না আর কায়সারকে ছাড়িয়ে যাওয়া কঠিন। সমসাময়িক দুজনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কে- এমন প্রশ্নের উত্তরে চলে আসে আবাহনী কিংবা মোহামেডানের প্রভাব। অর্থাৎ মোহামেডানের সমর্থকদের কাছে কায়সার আর আবাহনীর সমর্থকদের কাছে মুন্না সেরা!

ঢাকার মাঠে মিডফিল্ডার হিসেবে বাদল রায়ের সঙ্গে খুরশেদ বাবুল আর আশিষ ভদ্রদের মধ্যে ছিল ভদ্রস্থ প্রতিদ্বন্দ্বিতা। উইঙ্গার হিসেবে চুন্নু সর্বকালের সেরা হলেও ব্রাদার্সে খেলা ওয়াসিম কম যাননি। স্ট্রাইকার পজিশনে শেখ আসলামের সঙ্গে এমিলি, বড় লিটন, নকিবরা বিভিন্ন সময় জমজমাট লড়াইয়ে মেতেছেন; যা সমৃদ্ধ করেছে ঘরোয়া আর দেশের ফুটবলকে। হতাশার ব্যাপার হচ্ছে, দেশের ফুটবলে বর্তমানে ব্যক্তিগত দ্বৈরথ প্রায় অনুপস্থিত। নেই বড় কোনো তারকা ফুটবলার। ফলাফল, দেশের ফুটবল নিয়ে আগ্রহ কমে গেছে সবার।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh