বেনাপোল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২৪, ০৩:৫৪ পিএম | আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২৪, ০৪:১৮ পিএম
বেনাপোল কাস্টমস হাউস। ছবি: বেনাপোল প্রতিনিধি
বেনাপোল কাস্টমস হাউসে রাজস্ব ফাঁকি রোধে ব্যাপক কড়াকড়ি ও সংস্কারমূলক নতুন নতুন আইন প্রণয়ন করায় গত অর্থ বছরের তুলনায় চলতি অর্থ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৭৫ কোটি টাকার রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১১.৮৮ শতাংশে। অসাধু আমদানিকারকরা পালিয়েছে এই বন্দর ছেড়ে।
কাস্টমস সূত্র জানায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা। রাজস্ব আদায় হয়েছে ৪ হাজার ২১৮.৭৪ কোটি টাকা। ৭৫ কোটি টাকার রাজস্ব আয় বেড়েছে। এ পর্যন্ত মোট ১০টি আইটেমের পণ্য চালান থেকে ১ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি ধরা পড়েছে। রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকার জরিমানা আদায় করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
বেনাপোল বন্দর দিয়ে দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে গতিশীলতা, দ্রুত পণ্য খালাস ও রাজস্ব ফাঁকি রোধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার আব্দুল হাকিম। বেনাপোল বন্দর ব্যবহারকারী সিএন্ডএফ এজেন্টস ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের সাথে একাধিক বৈঠকে রাজস্ব ফাঁকি রোধে কঠোর অবস্থানের কথা জানান দেন বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কমিশনার। জিরো টলারেন্স নীতিতে চলছে বেনাপোল কাস্টমস হাউসের রাজস্ব আদায়ের কার্যক্রম।
কাস্টমস হাউসের যুগ্ম কমিশনার-১ মো. হাফিজুল ইসলাম জানান, গত ২০২২-২৩ অর্থ বছরে শুধুমাত্র ১০টি আইটেমের পণ্য চালান থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজস্ব আয় হয়েছিল ১ হাজার ২৫২.২১ কোটি টাকা। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ১০টি আইটেমের পণ্যচালান থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১ হাজার ৬৬৭.২৫ কোটি টাকা। ৪১৫.১৪ কোটি টাকার রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
রাজস্ব ফাঁকির সাথে জড়িত আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্টদের কালো তালিকাভুক্ত করে তাদের পণ্য চালান শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করা হচ্ছে। আর যাদের বিরুদ্ধে রাজস্ব ফাঁকির কোনো অভিযোগ নেই তাদের পণ্যচালান কম্পিউটারের সিলেকশনে ইয়ালো হয়ে কোনো পরীক্ষা ছাড়াই খালাস দেওয়া হবে। কেমিকেল জাতীয় পণ্যচালান কেমিকেল ল্যাবে পরীক্ষা করার পর ফলাফলের ভিত্তিতে শুল্কায়ন করে খালাস দেওয়া হচ্ছে। বন্দরে ওয়েইং স্কেলের ওজনের ভিত্তিতে পণ্যের শুল্কায়নের বিষয়ে বলা হয়, বন্দরে স্কেলগুলোতে বর্তমানে তেমন কোন জটিলতা নেই। কঠোরভাবে তদারকি করা হচ্ছে ওয়েইং স্কেলএটিকে পুঁজি করে স্বার্থ হাসিলের কোন সুযোগ নেই বলে জানান যুগ্ম কমিশনার মো. হাফিজুল ইসলাম।
বেনাপোল কাস্টমস সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের সভাপতি শামছুর রহমান জানান, বর্তমান কমিশনার মো. আব্দুল হাকিম, যুগ্ম কমিশনার মো. হাফিজুল ইসলাম ও শাফায়েত হোসেন অতীতের তুলনায় ব্যাপক কড়াকড়ি আরোপ করায় সুবিধাভোগী আমদানিকারকরা বেনাপোল বন্দর ছেড়ে চলে গেছে অন্য বন্দরে। বেনাপোলের ন্যায় অন্যান্য বন্দরেও কড়াকড়ি করতে হবে। তা না হলে ব্যবসায়ীরা এ বন্দর থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেবে।
বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার আব্দুল হাকিম জানান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ট্রেনযোগে কন্টেইনার কার্গো চালু হয়েছে। বেনাপোল দিয়ে প্রতিদিন যেখানে ৫/৬ শ’ ট্রাক পণ্য আমদানি হতো বর্তমানে ডলার সংকটে আমদানি কমে প্রতিদিন ৩৫০ ট্রাকে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।
বেনাপোল বন্দর দিয়ে বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য সম্পন্ন হয়ে থাকে ভারতের সাথে। বেনাপোল বন্দরে রাজস্ব ফাকি রোধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি অনিয়ম ধরা পড়েছে। তাদেরকে রাজস্ব পরিশোধ করে ২০০ পারসেন্ট জরিমানা আদায় করা হয়েছে।