নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৪, ০৪:২৬ পিএম
ঢাকা-৬ আসনের সংসদ সদস্য ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়ার সাঈদ খোকন। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা দক্ষিণ সিটির সাবেক মেয়র ও ঢাকা-৫ আসনেরসংসদ সদস্য সাঈদ খোকন বলেছেন, দোষারোপের রাজনীতি না করে সবাই মিলে এক সঙ্গে কাজ করতে পারলে এবারের ডেঙ্গু মোকাবিলা করা সম্ভব।
আজ শনিবার (১৮ মে) এগিয়ে ছিল দক্ষিণ ঢাকা, স্মৃতির পাতায় ফিরে দেখা শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি ডিএসসিসি মেয়রের প্রতি এই আহ্বান জানান। জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন।
সাঈদ খোকন জানান, তার সময়ে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখার অভিজ্ঞতা আছে। বর্তমান ডিএসসিসি যদি আসন্ন ডেঙ্গু মোকাবিলায় তার সহায়তা চান তিনি পাশে থেকে তা করবেন। তা ছাড়া ডেঙ্গু রোগী নিয়ে সম্প্রতি ডিএসসিসি যে তথ্য দিয়েছে, তাতে ভুল আছে বলেও জানান তিনি।
এর আগে গত বুধবার (১৫ মে) মালিবাগ মোড় সংলগ্ন উড়ালসেতুর নিচে ১২ নম্বর ওয়ার্ডের গণশৌচাগার উদ্বোধন শেষে ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস দাবি করেন, মশা নিয়ন্ত্রণের কারণে ২০১৯ সালের তুলনায় (সাঈদ খোকনের আমল) ২০২৩ সালে ঢাকায় ডেঙ্গু রোগী অর্ধেক কমেছে।
মেয়র তাপসের এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতই দুঃখ প্রকাশ করে আজ সংবাদ সম্মেলন করেছেন সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন যদিও সরাসরি মেয়র তাপসের নাম উল্লেখ করেননি তিনি।
মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে হাজার সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন জানিয়ে সাঈদ খোকন বলেন, সমস্যাগুলো মোকাবিলায় আমাদের চেষ্টা ছিল। সফল কতটুকু হয়েছি, সেটার বিচারের ভার আপনাদের (জনগণ)। কিন্তু আমরা ব্যথিত হই, কষ্ট পাই, যখন আমাদের এই চেষ্টাগুলোকে বিভিন্নভাবে অপপ্রচার ও প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়। একজন নাগরিক হিসেবে আমি আশা করবো, যেকোনো ইতিবাচক কাজের সূচনার পর যদি নতুন নেতৃত্ব আসে, সেটাকে এগিয়ে নিয়ে জনগণের সেবায় নিয়োজিত করাই হোক তাদের উদ্দেশ্য। কোনোভাবেই রাজনৈতিক বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে আরেকজনকে অযথা প্রশ্নের সম্মুখীন, বিভিন্নভাবে অপবাদ দেয়া, অপরাজনীতি করা এটা এই শহরের জনগণ আশা করে না। এটা কাম্য নয়।
তিনি আরো বলেন, ২০১৯ সালে যখন আমি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দায়িত্বে ছিলাম, তখন ডেঙ্গুর আউটব্রেক হয় এবং পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমার চেষ্টার কোনো কমতি ছিল না। আমার এই হাজার চেষ্টার পরেও আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে গিয়েছিল সারাদেশে। সে সময় ডেঙ্গুতে সারাদেশে ১৫৭ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এতে আমি অত্যান্ত ব্যথিত ছিলাম আমি অনেক চেষ্টা করেও কিন্তু এই মৃতের সংখ্যা, আক্রান্তের সংখ্যা কমাতে পারিনি। কিন্তু আমি খুব দুঃখ, কষ্ট পেলাম, বর্তমান যে কর্তৃপক্ষ, তিনি বললেন, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ছিল এবং আক্রান্তের সংখ্যা ৪১ হাজার কম ছিল। এই কথায় আমি কষ্ট পেয়েছি, নগরবাসী হতভম্ব হয়েছে।
ঢাকা-৬ আসনের এই সংসদ সদস্য আরো বলেন, আমরা পত্র-পত্রিকায় দেখেছি, ২২ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করে ২০২৩ সালে ডেঙ্গুর আক্রান্তের সংখ্যা তিন লক্ষের অধিক ছিল। এবং সারাদেশে মৃতের সংখ্যা ছিল এক হাজার ৭০৫ জন। এটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্রে একটি জাতীয় দৈনিকের সংবাদে প্রকাশিত হয়। সেই সংবাদে বলা হয়, ২০১৯ এর চেয়ে ২০২৩ সালে ঢাকায় ডেঙ্গু রোগী বেশি ছিল। সেখানে সিটি করপোরেশনের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি বলেছেন, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ঢাকায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৪২ হাজার কম ছিল। যা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, অসত্য। এতে আমি অত্যান্ত কষ্ট পেয়েছি, দুঃখ পেয়েছি।
একটি জাতীয় দৈনিকের সংবাদের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি আরো বলেন, ২০২৪ সালে এখনো ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হয়নি। কিন্তু এই বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৬ মে পর্যন্ত আক্রান্ত ২ হাজার ৫৫৯ জন, মৃত ৩২ জন। গতকাল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়। এর আগে বুধবার এদিনে মারা যাওয়া তিনজন ডেঙ্গু রোগী যারা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।
তিনি আরো বলেন, নিজের ব্যর্থতাকে আরেকজনের ঘাড়ে না চাপিয়ে এই ধরনের আচরন না করি। সামনে যে একটি ভয়ংকর পরিস্থিতি হতে চলেছে, সেই পরিস্থিতিকে মোকাবিলার জন্য, আমরা সর্বস্তরের নাগরিক, কর্তৃপক্ষ এবং আমাদের যাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে, আমরা সবাই মিলে আগামী দিনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করি।
ডেঙ্গু নিয়ে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে জনগণ বা সরকার বিব্রত হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা অতীতের দিকে ফিরে যেতে চাই না। সামনে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি হওয়ার আভাস বিশ্লেষকরা দিচ্ছেন সেটাকে মোকাবিলা করার জন্য আমি সবার সঙ্গে কাজ করতে রাজি।