পঞ্চগড় প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৪, ০৪:০৮ পিএম
সীমান্তের মমিনপাড়া গ্রামে বেশ কয়েকখানে ইটের স্তূপ চোখে পড়ে।
উত্তরের জেলা পঞ্চগড় ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা হওয়ায় এখানে অবৈধ পথে পণ্য পাচারের রেকর্ড পুরনো। এতদিন বিভিন্ন সময় গরু, মাদক ও স্বর্ণ পাচারের কথা শোনা গেলেও এবার সে তালিকায় যুক্ত হয়েছে ইট। বাকি পণ্যগুলো রাতে পাচার হলেও ইট পাচার হচ্ছে দিনের বেলা প্রকাশ্যে। বিজিবির নমনীয়তার কারণে পঞ্চগড়ের চোরাকারবারিরা এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দিনের আলোতেই ভারতীয়দের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে ইটসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের ঘাগড়া সীমান্ত এলাকায় সম্প্রতি জমে উঠেছে ইটের রমরমা ব্যবসা। স্থানীয় চোরাকারবারিরা বাধা ছাড়াই ভারতীয়দের সঙ্গে এই ব্যবসা চালিয়ে আসছেন।
সম্প্রতি সরেজমিন বিকেলে সীমান্তের মমিনপাড়া গ্রামে বেশ কয়েকখানে ইটের স্তূপ চোখে পড়ে। স্থানীয়রা জানান, বাংলাদেশী স্থাপনা নির্মাণে নয় বরং সুযোগ বুঝে সীমান্তবর্তী ভারতীয়দের কাছে পাঠানো হবে ইট।
স্থানীয়রা বলছেন, গত কয়েকদিন ধরেই ট্রাকযোগে বিভিন্ন ভাটার ইট এই সীমান্তে আনছেন একটি চক্র। আবার সুযোগ বুঝে সেগুলো পার করছেন ভারতে। বিজিবির চোখের সামনে এই অবৈধ বাণিজ্য চললেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাড়িভাসা ইউনিয়নের ঝুলিপাড়া, মমিনপাড়া, তিনঘড়িয়া পাড়া এবং বাঙ্গালপাড়া এই চারটি গ্রামের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে ভারতের ৬টি গ্রামের। ওই গ্রামগুলোর অবস্থান ভারতে হলেও কাঁটাতারের বেড়া তাদের প্রতিবেশী গ্রামগুলো থেকে আলাদা করতে পারেনি। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে উভয় পাশের স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যক্তি জায়গাটি বাণিজ্যিক রুট হিসেবে ব্যবহার করছেন। সেই ধারাবাহিকতায় এবার কাঁটাতারের এই পারের গ্রামগুলোতে নির্মাণসামগ্রী সরবরাহ করছে বাংলাদেশি চোরাকারবারিরা। যেই ইট বাংলাদেশে ৮টাকা পিস, সেই ইট ভারতীয়দের কাছে বিক্রি হচ্ছে ১৫-১৬ টাকায়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই সীমান্তটি চোরাকারবারিদের নিরাপদ রুট। নিত্যপ্রয়োজনীয় সব ধরণের পণ্য অবৈধ পথে পারাপার হয় এদিক দিয়ে। একটি চক্রের প্রধান পেশাই এখন চোরাকারবারি, সীমান্তের কাছাকাছি তাদের বাড়ি হওয়ায় অবাধে চালাচ্ছেন এ কাজ। এই ব্যবসায় আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন অনেকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, এই সীমান্ত এলাকায় সবকিছু অবাধে চলে। মাদক, গরু, গোশত, চাল, ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছু আমদানি হয় এদিক দিয়ে। স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যক্তির প্রধান পেশাই এটি। কৃষিপণ্যও কেনাবেচা হয় এদিক দিয়ে। এখন ইট সরবরাহ হচ্ছে। বিজিবির ক্যাম্পের সামনে দিয়েই আসছে ইট ভর্তি ট্রাক। কিন্তু তারা খোঁজ নিচ্ছে না এগুলো কোথায় যাচ্ছে। বিজিবিকে ইনফর্ম করার পরও অবাধে এই ব্যবসা চলছে।
রিপন নামের এক যুবক বলেন, মাত্র কয়েকজন চোরাকারবারির কারণে সীমান্তে বসবাস করা আমাদের কঠিন হয়ে যাচ্ছে। চোরাকারবারিরা অবাধে ইট সরবরাহ করতে পারে, কিন্তু আমরা আমাদের বাড়ির কাজের জন্য কোন সামগ্রী আনলে বিজিবিকে অনেক প্রুফ দেখাতে হয়।
সিদ্দিক নামে একজন আক্ষেপ করে বলেন, সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে পাকা স্থাপনা করায় কয়েকদিন আগে প্রশাসন আমার স্থাপনা গুড়িয়ে দিয়েছে। অথচ এখন প্রতিদিন অবাধে বাংলাদেশি ইট ভারতে ঢুকছে কিন্তু জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে না।
বিজিবি ঘাগড়া বর্ডার আউটপোস্টের (বিওপি) ক্যাম্প কমান্ডার লুৎফর রহমান বলেন, ইট পারাপারের বিষয়টি আমি অবগত না, বিষয়টি দেখছি।