শাহেরীন আরাফাত
প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৪, ০৭:৪৪ পিএম | আপডেট: ২৮ মে ২০২৪, ০৭:৪৭ পিএম
চীনের পতাকা। ছবি: সংগৃহীত
চীনের অর্থনীতির বড় একটি অংশজুড়ে আছে আবাসন খাত। দেশটির জিডিপির ৩০ শতাংশ আসে এই খাত থেকে। আবাসন খাতে ঋণ বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালে সরকার ঋণের রাস টেনে ধরে, তখন আবাসন খাত বিপদে পড়ে।
সম্প্রতি হওয়া চীনা রিয়েল স্টেট জায়ান্ট এভারগ্রান্ডের ঋণখেলাপির ঘটনার পাশাপাশি বেশকিছু সংকটের মুখোমুখি দেশটির আবাসন খাত। কান্ট্রি গার্ডেনের মতো বৃহৎ কোম্পানিও বর্তমানে নড়বড়ে।
বিশ্লেষকদের মতে, আবাসন খাতে দেশটির জনসংখ্যার তুলনায় অধিক বিনিয়োগের ফলে ঝুঁকি তৈরি হয়। চীনের ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকসের তথ্যানুসারে, আগস্টের শেষ নাগাদ চীনের আবাসন খাতে অবিক্রীত যত অ্যাপার্টমেন্ট পড়ে আছে, তার মোট মেঝের আয়তন ছিল ৬৪ কোটি ৮০ লাখ বর্গমিটার বা ৭০০ কোটি বর্গফুট। একটি ফ্ল্যাটের গড় আকার ৯০ বর্গমিটার হিসাব করা হলে এই বিশাল আয়তন ৭২ লাখ ফ্ল্যাটের সমপরিমাণ।
১৯৭৮ সালে অর্থনীতিকে আংশিক উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর গত কয়েক দশকে সবচেয়ে দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে চীন। ১৯৯১ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে দেশটিতে বার্ষিক ১০.৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে ২০২১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত গড় প্রবৃদ্ধি ৬.৭ শতাংশ রয়েছে। নতুন বাড়ি বিক্রি কমে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে ব্যাংক খাতে। অনেক কোম্পানি এরই মধ্যে ঋণখেলাপি হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা চীন থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন।
তবে চীনের সরকারি ভাষ্য হলো, ‘অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে’। প্রকাশিত তথ্যমতে, ২০২৪ সালের প্রথম ৩ মাসে চীনের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫.৩ শতাংশ হারে বেড়েছে। তবে উন্নয়নশীল অর্থনীতি হিসেবে গণ্য করলে এ হার তুলনামূলকভাবে ধীর। এ ছাড়া অর্থনীতিতে দুর্বলতার লক্ষণগুলো এখনো অব্যাহত রয়েছে। একই সঙ্গে পরিসংখ্যান সংস্থা জানিয়েছে, এপ্রিলে এক বছর আগের একই সময়ের তুলনায় শিল্পোৎপাদন বেড়েছে ৬.৭ শতাংশ এবং কারখানার সরঞ্জামের মতো স্থায়ী সম্পদে বিনিয়োগ বেড়েছে ৪.২ শতাংশ। এ ছাড়া খুচরা খাতে বিক্রি বেড়েছে মাত্র ২.৩ শতাংশ। কিন্তু বার্ষিক হিসেবে আবাসন খাতে বিক্রি কমেছে ২৫ শতাংশ।
চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো জানায়, চীনে বিদ্যমান অভ্যন্তরীণ চাহিদার তুলনায় ভোক্তা ব্যয় ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম অপ্রতুল। অর্থাৎ ভোক্তাদের মাঝে আস্থা ফেরেনি। তারা কম খরচ করছেন। ২০২৩ সালের প্রথম চার মাসের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে চীনে আবাসন খাতের আকার প্রায় ১০ শতাংশ কমেছে। এ পরিস্থিতিতে নতুন কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার এবং আশা করছে, এতে আবাসন খাতের গতি ফিরবে।
চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, বন্ধকির ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ডাউন পেমেন্ট উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে। এ ছাড়া প্রথম ও দ্বিতীয় বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে সুদহারের পূর্বনির্ধারিত সীমা সরিয়ে নেওয়া হবে। চীনের ভাইস প্রিমিয়ার হে লাইফং জানান, প্রতিটি শহরের উপযোগী করে আলাদা নীতিমালা তৈরি হচ্ছে। অসম্পূর্ণ বাণিজ্যিক আবাসনের ঝুঁকি মোকাবিলায় কর্মকর্তারা কাজ করছেন। স্থানীয় সরকারকে অবিক্রীত সম্পত্তি কিনতে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।
এ ঘোষণা কার্যকর হওয়া প্রসঙ্গে পিপলস ব্যাংক অব চায়না জানায়, পাঁচ বছরের কম সময়ের জন্য প্রথমবারের হাউজিং প্রভিডেন্ট ফান্ড লোনের সুদহার ০.২৫ শতাংশ পয়েন্ট কমিয়ে ২.৩৫ শতাংশ করা হবে। পাঁচ বছরের বেশি সময়ের ঋণের ক্ষেত্রে তা হবে ২.৮৫ শতাংশ। এ ছাড়া প্রথম বাড়ির জন্য ঋণের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ডাউন পেমেন্ট ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ হবে। দ্বিতীয় বাড়ির ক্ষেত্রে এটি ৩০ শতাংশ থেকে কমে হবে ২৫ শতাংশ।
সম্প্রতি চীন সরকার আবাসন কিনতে ক্রেতাদের সাহায্য করার ঘোষণা দিয়েছে। সর্বশেষ নীতিগত সহায়তায় সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসনের ক্ষেত্রে ৩০ হাজার কোটি ইউয়ান বা ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার তহবিলের ঘোষণা দেয় চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশটির অর্থনীতির অন্যতম বড় খাত আবাসনে তহবিল ঘোষণা করে অর্থনীতির পালে নতুন হাওয়ার স্বপ্ন দেখছে চীন।