আহসান হাবীব সুমন
প্রকাশ: ০৯ জুন ২০২৪, ০৫:২১ পিএম
ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। ছবি: সংগৃহীত
১৪ জুন মাঠে গড়াচ্ছে ১৭তম উয়েফা ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ। জার্মানির মাটিতে অনুষ্ঠিতব্য ২৪ দলের প্রতিযোগিতার পর্দা নামবে ১৪ জুলাই।
আসন্ন ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে ‘ফেভারিট’ স্বীকৃতি পাচ্ছে ফ্রান্স, স্পেন, পর্তুগাল, ইংল্যান্ড, ইতালি আর হল্যান্ড। হিসেবের বাইরে রাখার উপায় নেই বেলজিয়াম আর ক্রোয়েশিয়াকে। আর স্বাগতিক জার্মানি? ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে সবচেয়ে বেশি তিনটি করে শিরোপা জয়ের রেকর্ড স্পেন আর জার্মানির দখলে। জার্মানরা খেলেছে সবচেয়ে বেশি ছয়টি ফাইনাল। যদিও ১৯৯৬ সালের পর জার্মানরা ইউরোপিয়ান ফুটবলে শ্রেষ্ঠত্ব দেখাতে পারেনি। ২০২২ সালের ফিফা বিশ্বকাপ থেকে সময়টাও ভালো যায়নি তাদের। তবে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে হুলিয়ান নাগেলসম্যান দায়িত্ব নেওয়ার পর ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে জার্মানি। চলতি বছর হারিয়েছে ফ্রান্স আর হল্যান্ডকে। তাই জার্মানদের হিসাবের মধ্যে রেখেই বাকিদের মাঠে নামতে হবে।
দলগত লড়াইয়ের বাইরে নজর থাকবে কিলিয়ান এমবাপ্পে, হ্যারি কেন, কেভিন ডি ব্রুইন আর লুকা মদ্রিচদের ওপর। এমবাপ্পে বিশ্বকাপ জিতেছেন। ইউরো জয়ের স্বপ্ন পূরণে লড়বেন তিনি। ইংল্যান্ডের সর্বকালের সেরা গোলদাতা কেন ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে ‘গোল্ডেনবুট’ জিতেছেন। কিন্তু ক্যারিয়ারে পাননি কোনো শিরোপার দেখা। ইংল্যান্ডও কখনো ইউরো জেতেনি। ১৬তম ইউরোর ফাইনালে উঠেও ইতালির কাছে হারতে হয়েছে কেনের দলকে। স্বাভাবিকভাবেই শিরোপার জন্য মুখিয়ে থাকবেন ‘থ্রি-লায়ন্স’ অধিনায়ক।
ডি ব্রুইন আর মদ্রিচদের ক্লাব ক্যারিয়ার সম্ভাব্য সকল শিরোপা জয়ের সাফল্যে উজ্জ্বল। কিন্তু নেই কোনো আন্তর্জাতিক শিরোপা। অন্তত ক্যারিয়ার সায়াহ্নে ক্রোয়েশিয়ার সর্বকালের সেরা মদ্রিচের জন্য একটি আন্তর্জাতিক শিরোপা ‘অবধারিত’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যালন ডি’অর আর ফিফা বর্ষসেরা পুরস্কারজয়ী মদ্রিচ খেলেছেন বিশ্বকাপ আর উয়েফা নেশন্স লিগের ফাইনাল। দুই বারই পরাজয়ের বেদনায় নীল হয়েছেন। ২০২৪ সালের ইউরো হতে পারে মদ্রিচের শেষ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা। দেশকে প্রথম শিরোপা এনে দেওয়ার শেষ সুযোগ কাজে লাগাতে রিয়াল মাদ্রিদ তারকা নিজেকে উজাড় করে দেবেন নিঃসন্দেহে।
এদিকে আসন্ন ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর জন্য হতে পারে হৃত-গৌরব পুনরুদ্ধারের সুযোগ। রোনালদো সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার। অগণিত রেকর্ড লুটোপুটি খাচ্ছে তার পায়ের নিচে। সদ্যই সৌদি পেশাদার লিগের এক মৌসুমে সর্বোচ্চ ৩৫ দফা প্রতিপক্ষের জালে বল জড়িয়ে ভেঙেছেন ২০১৮-১৯ মৌসুমে গড়া মরক্কোর আব্দুররাজ্জাক হামদাল্লাহর (৩৪) রেকর্ড। গড়েছেন বিশ্বের একমাত্র ফুটবলার হিসেবে চারটি দেশের লিগ ফুটবলে ‘গোল্ডেনবুট’ জয়ের অনন্য মাইল-ফলক। আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বোচ্চ ১২৮ গোলের মালিক তিনি। ক্লাব আর আন্তর্জাতিক ম্যাচ মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি ৮৯৩ গোলের ‘মহাকাব্য’ লেখা রোনালদোর নামের পাশে।
২০২৩-২৪ মৌসুমে আল নাসরের পক্ষে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৫১ ম্যাচে গোল করেছেন রোনালদো। ২০২৩ সালে এমবাপ্পে, কেন আর আর্লিং হালান্ডদের মতো তরুণদের পেছনে ফেলে করেছেন সর্বোচ্চ ৫৪ গোল। সর্বশেষ ইউরো বাছাইপর্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০টি গোল হাঁকিয়েছেন। বলা যায়, ৩৯ বসন্ত পেরিয়ে আসা রোনালদো বয়সকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ছুটছেন স্বমহিমায়।
বর্ষীয়ান রোনালদো ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ইউরো মাতাতে আসছেন। একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে অংশ নেওয়া পূর্ববর্তী পাঁচটি আসরেই গোল করেছেন। ইউরোর মূলপর্বে সর্বোচ্চ ১৪ গোল তার। ইউরো-২০২০-এ চেক তারকা প্যাট্রিক চিকের সঙ্গে করেছেন যৌথ সর্বোচ্চ ৫ গোল। ২০০৮ সালে পোলিশদের বিপক্ষে ৩৮ বছর ২৫৭ দিনে অস্ট্রিয়ান ইভিকা ভাস্টিচ গড়ে রেখেছেন বর্ষীয়ান গোলদাতার রেকর্ড। জার্মানিতে যে রেকর্ড ভেঙে যাবে রোনালদো প্রথম গোলের দেখা পেলেই।
তবে ব্যক্তিগত রেকর্ড নয়, রোনালদোর মূল টার্গেট পর্তুগালকে ইউরো শিরোপা এনে দেওয়া। কোচ রবার্টো মার্টিনেজ জানিয়ে রেখেছেন, আসন্ন ইউরোতে রোনালদো দলের নেতৃত্ব দেবেন। বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলার ফের পর্তুগিজদের ইউরো জয়ের আনন্দে ভাসাবেন, প্রত্যাশা তার।