হারুন-অর-রশিদ
প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২৪, ০৬:২৮ পিএম
প্রতীকী ছবি
আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব জাতীয় সংসদে পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। গত ৬ জুন প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। বাকি দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বাজেটে বিভিন্ন ক্ষেত্রে করহার বাড়ানো, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ, সংকট কাটাতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের অভাব এবং সংকট সমাধানে যথার্থ উদ্যোগ না থাকায় সমালোচনা করেছেন অর্থনীতিবিদরা।
প্রস্তাবিত বাজেটে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে জনপ্রশাসন খাতে। এই খাতের বরাদ্দের পরিমাণ এক লাখ ৭৫ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা। অন্য খাতগুলোর মধ্যে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ৪৭ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকা, প্রতিরক্ষা খাতে ৪২ হাজার ১৪ কোটি টাকা, জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা খাতে ৩৩ হাজার ৫২০ কোটি টাকা, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে এক লাখ ১১ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য খাতে ৪১ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা, সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাতে ৪৩ হাজার ২০৮ কোটি টাকা, গৃহায়ণ খাতে ছয় হাজার ৯২৯ কোটি টাকা, বিনোদন, সংস্কৃতি ও ধর্ম খাতে ছয় হাজার ৭০০ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৩০ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা, কৃষি খাতে ৪৭ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতে পাঁচ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা, পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ব্যয় ৮২ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা, সুদ খাতে এক লাখ ১৩ হাজার ৫০০ টাকা এবং অন্যান্য খাতে আট হাজার ৫৭৬ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
পণ্যমূল্য কমানো চ্যালেঞ্জিং হবে
সময়টা বাংলাদেশের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জের। ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির প্রভাব,ফরেন রিজার্ভ কমে যাচ্ছে, জ্বালানি খাতে পলিসি নেই। বাজেটে এই তিন বিষয়ে দিকনির্দেশনা নেই। এমনকি ব্যবসাবান্ধব কোনো অ্যাকশনও নেই।
মূল্যস্ফীতির জন্য আমদানি শুল্ক কমানোর কথা বলা হয়েছে, তবে তাতে খুব বেশি কাজ হবে না। এক বছরে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নিয়ে আসা সম্ভব হবে না। এর জন্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে উৎসাহিত করতে হবে। আর বাজার মনিটরিং জরুরি। বাজেটে বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা বলেছে। ব্যবসার যে অবস্থা এবং সরকারের যে নিয়মকানুন, তাতে ব্যবসা বাড়বে কীভাবে। করপোরেট ট্যাক্স হয়তো কমাবে কিন্তু ক্যাপিটাল ট্যাক্স নিলে আবার অন্যান্য করও বাড়বে। এই অবস্থায় ব্যবসার জন্য বিদেশি এফডিআই আসবে কিনা, সন্দেহ রয়েছে। তাহলে ফরেন রিজার্ভ বাড়বে না; হুন্ডি ও মুদ্রাপাচারের কারণে রেমিট্যান্সও কমছে।
বাজেটে ব্যাংকিং সেক্টরের বিষয়েও কিছু বলা হয়নি। তাহলে কীভাবে আশা করব-রাজস্ব আদায় হবে।
সমাধানের দিকনির্দেশনা নেই
নতুন বাজেটটা আমাদের কাছে অতীতের মতোই মনে হয়েছে। বর্তমান সময়ের সমস্যা, ক্রান্তিকালীন সংকট দেখা দিয়েছে অর্থনীতিতে। সেগুলো সমাধানে এই বাজেট দিকনির্দেশনা দিতে পারেনি।
আমাদের প্রত্যাশা ছিল নতুন অর্থবছরের এই বাজেট অনেক উদ্ভাবনী হবে। এখানে সৃজনশীল ও কিছু সাহসী পদক্ষেপ থাকবে। কারণ অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জিং সময়ে গতানুগতিক বাজেট কোনো ধরনের সমস্যার সমাধান দিতে পারবে না। কিন্তু নতুন বাজেট আমাদের কাছে অতীতের মতোই মনে হয়েছে। বর্তমান সময়ের সমস্যা, ক্রান্তিকালীন সংকট দেখা দিয়েছে অর্থনীতিতে। সেগুলো সমাধানে এই বাজেট যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে পারেনি। দিকনির্দেশনা দিতে পারেনি।
১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগকে নৈতিকভাবে সমর্থন করা যায় না। এর মাধ্যমে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয় না। এ ধরনের পদক্ষেপ বিশেষ গোষ্ঠীর জন্য করা হয়। কিন্তু এর ফলাফল আমরা দেখি না। একেবারে কালো টাকা সাদা করার জোয়ার এসেছে বা প্রচুর টাকা এসেছে, এমন কিছু দেখা যায় না।
ব্যাংকঋণ গ্রহণের প্রবণতা কমাতে হবে
আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ব্যাংক উৎস থেকে সরকার এক লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এ ঋণ নিলে এ উৎস থেকে সরকারের ঋণের স্থিতি প্রায় ছয় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। ব্যাংক উৎস থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের প্রবণতা কমাতে হবে। না হলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বিঘ্নিত হবে, যা শিল্প ও বাণিজ্যের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
এ পর্যন্ত ব্যাংক থেকে সরকারের গৃহীত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। এ হারে চলতে থাকলে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ব্যাংক ঋণের স্থিতি দাঁড়াবে প্রায় ছয় লাখ কোটি টাকা। আমি মনে করি, এ বিষয়ে আমাদের সাবধান হওয়া দরকার।
বেসরকারি বিনিয়োগ বিঘ্নিত হলে শিল্প ও সেবা খাতের অগ্রগতি বিঘ্নিত হয়। কর্মসংস্থানের সুযোগ হ্রাস পায় এবং বেকারত্ব বাড়তে থাকে। এখন রাজস্বের বড় অংশ এনবিআরের মাধ্যমে আহরণ হয়ে থাকে। আমি মনে করি এনবিআরের নেটওয়ার্কটা জেলা থেকে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন।