পশু বেশি, ক্রেতা কম, হতাশ ব্যাপারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৪, ০৩:৫৮ পিএম

রাজধানীসহ সারাদেশের কোরবানির পশুর হাটগুলোতে তুলনামূলক ছোট-বড় সাইজের দেশীয় প্রজাতির গরু হাটে উঠেছে। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীসহ সারাদেশের কোরবানির পশুর হাটগুলোতে তুলনামূলক ছোট-বড় সাইজের দেশীয় প্রজাতির গরু হাটে উঠেছে। ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র ঈদুল আযহার মাত্র তিনদিন বাকি। এরই মধ্যেই রাজধানীসহ সারাদেশের কোরবানির পশুর হাটগুলোতে তুলনামূলক ছোট-বড় সাইজের দেশীয় প্রজাতির গরু হাটে উঠেছে। তবে এবারের হাটে ক্রেতা সমাগম একেবারেই কম। কারণ হিসেবে ক্রেতাদের অভিযোগ, ব্যাপারিরা দাম ছাড়ছেন না। আর ব্যাপারিরা বলছেন, এখনও মূল ক্রেতারা হাটে আসেননি। আগামীকাল থেকেই মূলত হাট জমে উঠবে। 

এদিকে জানা গেছে, রাজধানীর ২৩টি হাটিই গরুর সমাগম অনেক বেশি। সেই তুলনায় ক্রেতা একদমই কম। ফলে ব্যাপারীরা আশঙ্কায় রয়েছেন, হাটে আনা তার গরু বিক্রি নিয়ে।  

রাজধানীর প্রধান পশুর হাট গাবতলীসহ বেশ কয়েকটি হাট ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ হাটই কোরবানির পশুতে ভরে উঠেছে। কোনো কোনো হাটে নির্ধারিত সীমানার বাইরে গিয়েও পশু পাইকাররা খুঁটি গেড়েছেন। তবে ক্রেতা না থাকায় অনেকটা হতাশ বিক্রেতারা। আর ক্রেতাদের অভিযোগ, অতিরিক্ত দাম হাঁকাচ্ছেন বিক্রেতারা। ফলে অনেকেই কোরবানির পশুর দরদাম শুনেই বাড়ি ফিরছেন। বিক্রেতারা বলছেন, ক্রেতা সমাগম নেই, তাই বিক্রি নেই। হাট পর্যন্ত কোরবানির পশু আনতে পথে পথে চাঁদা দিতে হয়েছে। খরচ অনেক বেশি হওয়ায় কম দামে পশু বিক্রি করতে রাজি নন বিক্রেতারা। তবে পশুর হাটে আসা গরু বেশির ভাগই দেশী।

প্রতি বছরের মতো এবার লালবাগের হাজী দেলোয়ার হোসেন খেলার মাঠে কোরবানির পশুর হাট বসেছে। এ হাটের মাঠের সীমানা পেরিয়ে বেড়িবাঁধের রাস্তায় বেপারীরা ক্রেতার আশায় গরু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। কুষ্টিয়া থেকে এবার ১৫টি গরু বড় মাঝারি ও ছোট সাইজের গরু নিয়ে এসেছেন শাহ আলম। টানা ১২ ঘণ্টা জার্নি করে গতকাল সকালে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন তিনি। এরই মধ্যে বড় তিনটি গরু অসুস্থ হয়ে পড়ায় বিপাকে পড়েছেন তিনি। গরু অসুস্থ হলেও চড়া দাম হাঁকাচ্ছেন। এ তিনটি গরুর প্রতিটি তিনি এক লাখ ষাট হাজার টাকা করে হাঁকাচ্ছেন। ক্রেতারা সর্বোচ্চ নব্বই হাজার টাকা পর্যন্ত দাম বলেছেন। কিন্তু তিনি এতে রাজি নন। কারণ এ ১৫টি গরুর পেছনে তাকে অনেক খরচ করতে হয়েছে। রাস্তায় পুলিশকেও চাঁদা দিতে হয়েছে। তিন জায়গায় তিনি ৩ হাজার টাকা চাঁদা দিয়েছেন।

আজিমপুর থেকে গরু কিনতে আসা আহসান হাবিব জানান, বেপারীরা অনেক বেশি দাম চাচ্ছেন। গত বছর যে গরুটি ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে এবার সেই একই ধরনের গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে ৭০-৮০ হাজার টাকা। কামরাঙ্গীর চরের পূর্ব রসুলপুর থেকে আসা মাহামুদুল করিম জানান, গরুর গায়েই হাত দেওয়া যায় না। এবার এত দাম গরুর। গতবারের চেয়ে দ্বিগুণ-তিন গুণ দাম হাঁকাচ্ছেন বেপারীরা। গতবার যে গরু ৪৫ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছি, এবার সেই সাইজের গরুর দাম ৯০-৯৫ হাজার টাকা।

কামরাঙ্গীর চরের খালপাড়ের হাটেও একই অবস্থা। এ হাটে প্রচুর গরু উঠলেও ক্রেতার দেখা নেই। তাই বেপারীরাও ঝিমাচ্ছেন। সিরাজগঞ্জ থেকে ২০টি গরু নিয়ে এ হাটে এসেছেন ফারুক মিয়া। তিনি বলেন, বুধবার রাতে এ হাটে এসেছি। আজ (গতকাল) সকালে মাত্র একটি গরু বিক্রি হয়েছে। ঈদের আর তিন দিন বাকি। সব গরু বিক্রি করতে না পারলে ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। একই কথা বললেন হাজারীবাগের হাটে আসা দিনাজপুরের সিরাজ উদ্দিন। তিনি বলেন, হাটে ক্রেতা নেই। গরুর দামও সেভাবে উঠছে না। তবে শনিবার হাটে ক্রেতা সমাগম হবে বলে আশা করছেন।

একই অবস্থা রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ ও জিগাতলা হাজারীবাগ হাটের। এ দুই হাটে ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতার সংখ্যা বেশি। তবু বিক্রেতারা আশাবাদী ঈদের আরো তিন দিন বাকি। এর মধ্যেই তারা সব গরু বিক্রি করতে পারবেন। রহমতগঞ্জের হাটে পঞ্চগড় থেকে আনোয়ার হোসেন এবার ৫০টি গরু নিয়ে এসেছেন। এ পর্যন্ত বিক্রি করেছেন ৬টি। কোরবানির আগে সব পশু বিক্রি করে আনন্দিত মনে বাড়ি ফিরবেন, এমন প্রত্যাশা তার।

তবে রাজধানীর সবচেয়ে বড় পশুর হাট গাবতলীতে ছোট-বড় সব মিলিয়ে ১২ থেকে ১৪ হাজার পশু উঠেছে। এ হাটে মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি। বড় ও ছোট গরুর প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ কম। কারণ সাধ ও সাধ্যের বিচারে মাঝারি সাইজের গরুর প্রতি আগ্রহ বেশির ভাগ ক্রেতার। তাই মাঝারি ধরনের গরুর দিকে ভিড় জমাচ্ছেন ক্রেতারা।

বেপারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বড় গরু নিয়ে আসতে ঝামেলা পোহাতে হয়। ছোট গরু নিয়ে এলে বিক্রি করা যায় না। তবে মাঝারি গরু নিয়ে তারা চিন্তিত নন। কেননা মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি। ৫০ হাজার থেকে লাখ টাকার মধ্যে দাম হলে ক্রেতারা বেশি সাড়া দিচ্ছেন।

কুষ্টিয়ার বেপারী মিজান মিয়া বলেন, আমি ১০টি গরু বৃহস্পতিবার নিয়ে এসেছি। এর মধ্যে দুটি বিক্রি হয়েছে ৮০ ও ৯৫ হাজার টাকায়। বাকি আটি গরুও বিক্রি দু-এক দিনের মধ্যে বিক্রি হয়ে যাবে। কুষ্টিয়া থেকে বড় একটা গরু নিয়ে এসেছেন ছগীর আলী। গরুর দাম হাঁকাচ্ছেন ১৫ লাখ টাকা। ১৪ লাখ টাকা হলে ছেড়ে দেবেন তিনি। এ পর্যন্ত ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছে।

এ হাটে গরু কিনতে মিরপুর থেকে এসেছেন বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা রাহাত কবীর। তিনি বলেন, আমি মাঝারি সাইজের গরু কিনতে এসেছি। ৬০-৭০ হাজার টাকার মধ্যে এ সাইজের গরু পেলেই একটা নেব।

গাবতলী হাট ঘুরে দেখা গেছে, এবার ছাগলের দাম একটু বেশি। ৮-১০ কেজি ওজনের ছাগল ৭-৮ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া ১২-১৪ কেজি ওজনের ছাগল বা খাসি ১০-১২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ হাটে তুলনামূলক কম দামে মহিষ বিক্রি হতে দেখা গেছে। বড় আকারের মহিষ ৪০-৪২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাঝারি আকারের ৩০-৩২ হাজার টাকায়।

এ হাটে ক্রেতা সমাগম মোটামুটি হলেও চলছে নানা অনিয়ম। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) পশু কেনা-বেচার হাসিল নির্ধারণ করে দিলেও তা মানছেন না ইজারাদাররা। হাসিল ঘর লোকদের দিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করেন তিনি। ভুক্তভোগীরা বলছেন, হাসিল টাকার বিষয়ে অবগত না থাকায় ইচ্ছেমতো টাকা আদায় করছেন তারা। কর্তৃপক্ষ বলছে, এটি সত্য নয়। এটি একটি চক্রের রটানো কথা।

মিরপুর থেকে গাবতলীর হাটে আসা সিরাজুল ইসলাম অভিযোগ করেন, লেখাপড়া যানি না। গরু কিনেছি ৯৫ হাজার টাকা দিয়ে। আমার থেকে হাসিল নিয়েছে ৫ হাজার টাকা। পরে অন্য একজনকে দেখালে তিনি বলেন ২৫০ টাকা বেশি নিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাবতলী হাটের ব্যবস্থাপক সানুর বলেন, এটা সত্যি নয়। কারণ ক্রেতা যে পরিমাণ টাকার সংখ্যা বলবে, সে হারে হাসিল নেওয়া হবে। অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হবে না। এ হাটকে ঘিরে এক ধরনের চক্র কাজ করছে। যারা আমাদের ভালো দেখতে পারে না।

উল্লেখ্য, রাজধানীতে এবার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় কোরবানির পশুর হাট বসেছে ২৩টি। এগুলোর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় নয়টি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৪টি অস্থায়ী পশুর হাট বসেছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh