কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৪, ১২:৩৯ এএম
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের কাছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের একাধিক জাহাজ মিয়ানমারের জাহাজের গতিবিধি পর্যবেক্ষণসহ বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় থেকে নিয়মিত টহল পরিচালনা করছে। ছবি: কক্সবাজার প্রতিনিধি
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের কাছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের একাধিক জাহাজ নিয়মিত টহল পরিচালনা করছে বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। রবিবার (১৬ জুন) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইএসপিআর এ তথ্য জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষকে বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন দ্বীপ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলে জানায় আইএসপিআর। সবাইকে এ ধরনের গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে আইএসপিআর।
আইএসপিআর জানায়, মায়ানমারে চলমান অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যৌথ অপারেশন্স পরিচালনা করছে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এবং আরাকান আর্মির এই সংঘর্ষের কারণে নাফ নদী এবং নদীসংলগ্ন মোহনা এলাকায় বাংলাদেশি বোটের উপর অনাকাঙ্ক্ষিত গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে গত ১২ জুন প্রতিবাদ জানায়।
এরই ধারাবাহিকতায় মায়ানমার নৌবাহিনী সেন্ট মার্টিন দ্বীপের অদূরে মায়ানমারের সমুদ্রসীমায় এবং নাফ নদীর মিয়ানমার সীমানায় অবস্থান করে মিয়ানমারের দিকে আরাকান আর্মির অবস্থান লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ করছে। একই সঙ্গে আরাকান আর্মিও মিয়ানমার নৌবাহিনীর জাহাজ ও বোট লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ করছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমানে মিয়ানমার সীমান্তে মায়ানমার নৌবাহিনীর একাধিক যুদ্ধজাহাজ ওই অপারেশন্স পরিচালনা করছে। মায়ানমার নৌবাহিনী সেন্টমার্টিনের অদূরে মায়ানমারের সমুদ্রসীমায় অবস্থানের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে অবহিত করছে। মায়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষটি মিয়ানমারের মূল ভূখণ্ড এবং তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় চলমান রয়েছে। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের কাছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের একাধিক জাহাজ মিয়ানমারের জাহাজের গতিবিধি পর্যবেক্ষণসহ বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় থেকে নিয়মিত টহল পরিচালনা করছে।
২০২০ সালের ৮ নভেম্বর মিয়ানমারের পার্লামেন্টারি নির্বাচনে অং সান সুচির ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) ৪১২ আসনের মধ্যে ৩৪৬টিতে জয় পায়। কিন্তু অধিবেশন শুরুর প্রাক্কালে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করেছে দেশটির সেনাবাহিনী।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী ক্ষমতা দখল করে। এরপর থেকে তাদের নিপীড়ন-নির্যাতন ও হামলায় অন্তত সাড়ে চার হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। বন্দী করা হয়েছে ২৫ হাজার মানুষকে। জান্তার হামলায় মিয়ানমার জুড়ে অন্তত ৭৮ হাজার বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে আরাকান আর্মিসহ দেশটির একাধিক বিদ্রোহী সংগঠন জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে। এর ফলে দেশটিতে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ।
মিয়ানমারের রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দেশটির সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মির মধ্যে গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে যুদ্ধ চলছে। যার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের সীমান্তের গ্রামগুলোতে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাতের জেরে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে নৌ চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বুধবার ও বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের সেন্ট মার্টিন ও শাহপরীর দ্বীপ অংশে মর্টারশেল ও গুলির শব্দ শুনেছেন স্থানীয়রা। তাছাড়া, বঙ্গোপসাগরের অদূরে মিয়ানমার অংশে বড় জাহাজকে যুদ্ধজাহাজ ভেবে ভয়ও পাচ্ছেন তারা।