নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৪, ১০:৫৩ এএম | আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪, ১২:২৭ পিএম
ছাগলকাণ্ডের ঘটনায় এবার দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মো. মতিউর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
ছাগলকাণ্ডের ঘটনায় এবার দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মো. মতিউর রহমান। গতকাল রবিবার (২৪ জুন) বিকেলের দিকে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে মতিউর পালিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন তার ঘনিষ্ঠ একাধিক কাস্টমস কর্মকর্তা।
মতিউরের ঘনিষ্ঠ কাস্টমস কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে তিনি ভারতে পালিয়ে গেছেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী এরপর মতিউর রহমান ভারত থেকে সরাসরি দুবাইয়ের উদ্দেশে রওনা দিতে পারেন। প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট তাকে দেশত্যাগে সহযোগিতা করেছে।
একটি সূত্রে জানা গেছে, তিনি মাথার চুল ফেলে টাক হয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যান। মূলত সবার কাছ থেকে চেহারা আড়াল করতে এই কৌশলের আশ্রয় নেন তিনি।
এর আগে ধানমণ্ডি, কাকরাইল, গুলশানসহ মতিউরের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের ঠিকানায় বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে কোথাও তাকে পাওয়া যায়নি। ঈদের ছুটি শেষ হওয়ার পর তাকে অফিস করতেও দেখা যায়নি। মূলত এরপর থেকেই দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ‘মতিউর এখন কোথায়?’
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, ছাগলকাণ্ডের পর ছেলেকে অস্বীকার করে এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে গা ঢাকা দিয়েছিলেন। সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়ে নিজেকে আড়াল করে রেখেছিলেন তিনি। মুঠোফোনে যোগাযোগও ছিল সীমিত। সেই সময়ে অস্বীকার করা ছেলেকে নিরাপদে মালয়েশিয়ায় পাঠিয়ে দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে একটি সূত্র।
প্রসঙ্গত, এবারের ঈদুল আজহায় ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাতের ১৫ লাখ টাকার ‘ছাগল কেনা’ ইস্যুতে তোপের মুখে পড়েন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মো. মতিউর রহমান। পরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট মতিউর রহমানকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। হারিয়েছেন তিনি সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পদও।
এখন তাকে অর্থমন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত (ওএসডি) করা হয়েছে। তবে কোরবানির ঈদের ছুটির পর অফিস খুললেও তিনি আর অফিসে আসেননি। তার বিভিন্ন বাসভবনে খোঁজ নিয়েও সন্ধান মেলেনি।
এদিকে গতকাল রবিবার (২৩ জুন) দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করতে সংস্থাটির উপপরিচালক আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করেছে। গতকাল রবিআর (২৩ জুন) দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন সাংবাদিকদের এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগ গত ৪ জুন কমিশন অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
মতিউরের দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ জন্য সংস্থাটির উপপরিচালক আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিমও গঠন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, মতিউর রহমানের উত্থান মূলত ২০০৯ সালে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার থাকাকালে। পরে গুরুত্বপূর্ণ একাধিক জায়গায় পদায়ন হয়েছে তাঁর। এ ছাড়া দায়িত্ব পালন করেছেন বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) ভ্যাটের কমিশনার হিসেবে। সেই সময় বিভিন্ন কম্পানিতে ভ্যাট ডিমান্ড করে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এমন একটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মতিউরের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের জন্য এনবিআর ও দুদককে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। তবে রহস্যজনক কারণে বিষয়টি নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সংস্থা দুটি।