সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ০৭:৪৪ পিএম
গ্রাফিক্স: সাম্প্রতিক দেশকাল
দেশে প্রতিবছরই বাড়ছে বজ্রপাত এবং এ থেকে ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের সংখ্যা। সর্বশেষ ১৮ জুন চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত টানা দুই ঘণ্টার বজ্রপাত মানুষের উদ্বেগ ও ভীতি বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। যদিও বজ্রপাত এ দেশে সব সময়েই ছিল। তবে বর্তমানে আশঙ্কাজনকহারে এর সংখ্যা বেড়েছে।
মূলত জলবায়ু পরিবর্তন, তাপমাত্রা বৃদ্ধি, পর্যাপ্ত গাছপালা না থাকায় দেশে বজ্রপাতের ঝুঁকি বেড়েছে। বজ্রপ্রতিরোধক যেসব প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল সেগুলো কার্যকর হয়নি। তা ছাড়া বজ্র নিরোধে তালগাছ লাগানোর প্রকল্পটিও ব্যর্থ হয়েছে। তবে শুধু তালগাছ নয়, যে কোনো উঁচু গাছ বজ্র নিরোধে সহায়তা করে। কিন্তু আমাদের গাছ লাগানোর চেয়ে গাছ কাটার প্রবণতা বেশি, ফলে বজ্রপাত বেড়ে গেছে।
জাতিসংঘ বলছে বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ৩০০ জন বজ্রপাতে মারা যায়। যেখানে ইন্দোনেশিয়া, কলম্বিয়া, মালয়েশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে বজ্রপাতের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি সেখানে বাংলাদেশে এত বিপুল সংখ্যক মানুষ মারা যাওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক। এর কারণটি বোঝা যায় ফিনল্যান্ডের বজ্রপাত বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ভাইসালারের তথ্যে। তাদের মতে, বাংলাদেশে বজ্রপাতে যারা মারা যান, তাদের ৭০ ভাগই কৃষক, খোলা মাঠে কাজ করেন। এ ছাড়া বাড়ি ফেরার পথে ১৪ শতাংশ এবং গোসল ও মাছ ধরার সময় ১৩ শতাংশের মৃত্যু হয়।
দেখা যাচ্ছে, উন্নত দেশগুলো আধুনিক প্রযুক্তি ও সচেতনতা তৈরির মাধ্যমে প্রাণহানি কমাতে পারলেও তা সম্ভব হয়নি বাংলাদেশে। তাই বজ্রপাত থেকে বাঁচতে আগাম সতর্কতা এবং মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়ার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। বজ্রপাত নিরোধক যন্ত্র বসিয়ে এটিকে সাময়িকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। তবে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য ব্যাপক ভিত্তিতে বনায়নের কোনো বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে বজ্রপাতের সময় করণীয় সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে হবে।