বৈচিত্র্য সমৃদ্ধ মেদাকচ্ছপিয়া ন্যাশনাল পার্ক

তাহজীবুল আনাম, কক্সবাজার

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ১০:০৮ পিএম

মেদাকচ্ছপিয়া ন্যাশনাল পার্ক। ছবি: লেখক

মেদাকচ্ছপিয়া ন্যাশনাল পার্ক। ছবি: লেখক

বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে যে প্রাকৃতিক বনভূমিগুলোকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, মেদাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যান এগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই উদ্যানে দর্শনার্থীদের চিত্তবিনোদনের পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণেও নানা ধরনের কর্মকাণ্ড চলছে। কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নে অবস্থিত মেদাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যান। 

অতুলনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বন মেদাকচ্ছপিয়া উদ্যান। এ বনভূমিকে ২০০৮ সালে জাতীয় উদ্যানের স্বীকৃতি দেয় সরকার। এই উদ্যানের আয়তন প্রায় ৩৯৬ হেক্টর। মূলত এই উদ্যান গর্জন গাছের জন্য বিখ্যাত হলেও, গর্জনের পাশাপাশি বনে তেলসুর, বৈলাম, গামার ও চাপালিশ গাছও রয়েছে।

এখানকার উদ্ভিদরাজির কারণে টিকে আছে নানা রকম বন্যপ্রাণী। কীটপতঙ্গ ও প্রজাপতিসহ এখানে বিচরণ করে উভচর, সরীসৃপ, পাখি ও স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বিভিন্ন প্রজাতি।

বর্তমানে নতুন রূপে সাজানো হচ্ছে এই উদ্যান। এ জন্য তৈরি করা হয়েছে তোরণ, কৃত্রিম হ্রদসহ নানা অবকাঠামো। এক কিলোমিটার লম্বা এই হ্রদের তীরে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির আড়াই হাজার গাছের চারা। ভবিষ্যতে এই হ্রদ আরও এক কিলোমিটার সম্প্রসারণ করার কথা রয়েছে। তৈরি হচ্ছে ঝুলন্ত সেতু। দুই পাড়ে একাধিক বিশ্রামাগারের কাজও চলমান। 

স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কাশেম সিকদার বলেন, মেদাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যানের দৃশ্যটা চোখে পড়ার মতো। মহাসড়ক হয়ে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাওয়ার পথে যে কারও নজর কাড়বে উদ্যানটি। পর্যটকদের সুবিধার্থে উদ্যানের ফাঁকে ফাঁকে নির্মিত হচ্ছে বিশ্রামাগার বা টহলশেড। 

উদ্যানে ঘুরতে আসা পর্যটক গিয়াস উদ্দিন ও জমির উদ্দিন বলেন, এই উদ্যান কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের জন্য চমৎকার ভূমিকা রাখতে পারে। যদি সঠিক দেখভাল করা যায় তাহলে এই উদ্যান পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে। বর্তমানে উদ্যানে কৃত্রিম হ্রদ ও বড় গাছগুলো মুগ্ধ করার মতোই। 

ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)-এর কক্সবাজারের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদুল আলম শাহীন বলেন, বিভিন্ন ধরনের পরিবেশ বিরূপ কর্মকাণ্ডে দিন দিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উদ্যানের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। এ ছাড়া অধিকমাত্রায় বনজ সম্পদ আহরণ ও বনভূমি উজাড় করার ফলেও বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ও প্রজননভূমি কমে যাচ্ছে। এ ছাড়া পর্যটকদের অসচেতন কর্মকাণ্ডের কারণে ব্যাহত হচ্ছে উদ্যানের স্বাভাবিক পরিবেশ। ফলে উদ্যানের বেশ কিছু প্রাণী এখন বিপন্ন। তাই এই উদ্যানের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় প্রয়োজন কর্যকরী ব্যবস্থাপনা।

এ বিষয়ে কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের ফুলছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন আহমেদ জানান, এ উদ্যানের প্রধান বৃক্ষরাজির মধ্যে বিশালাকৃতির গর্জন ছাড়াও রয়েছে ঢাকিজাম, ভাদি, তেলসুর ও চাপালিশ। এ ছাড়াও উদ্যানে বাস করে নানা ধরনের প্রাণী। যেমন মেছো বাঘ, হাতি, বানর, উল্টো লেজ বানর, বনবিড়াল, বনমোরগ, শুশুক, ইগল, সবুজ ঠোঁট ফিঙে, চিল, শ্যামা, গুইসাপসহ নানা প্রজাতির প্রাণী।

তিনি জানান, স্বল্প জনবল নিয়ে বিশাল এই বনাঞ্চল রক্ষা করতে গিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। তারপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সরকারি সম্পদ রক্ষা করে আসছি আমরা। 

কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. আনোয়ার হোসেন সরকার বলেন, বর্তমানে উদ্যানে দৃষ্টিনন্দন এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে হ্রদ পর্যটনে নতুন মাত্রা যোগ করবে। হ্রদের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের অবস্থান। উত্তর পাশে গর্জন বনের ভেতরে রয়েছে হেঁটে বেড়ানোর পথ ও ‘ট্রি অ্যাডভেঞ্চার’-এর ব্যবস্থা। সামনে এই হ্রদ আরও এক কিলোমিটার সম্প্রসারণ করা হবে। হ্রদের ওপর তৈরি করা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন ঝুলন্ত সেতু ও একাধিক বিশ্রামাগার। লেকের পানিতে ভ্রমণের জন্য নামানো হবে নৌকা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh