নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৪, ০৩:৩১ পিএম | আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৪, ০৩:৩২ পিএম
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর ভারী বৃষ্টিতে দেশের বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর ভারী বৃষ্টিতে দেশের বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। প্রতিদিনই বন্যা বিস্তৃতি লাভ করছে। চলমান পরিস্থিতিতে দেশের ১৫ জেলা আক্রান্ত এবং প্রায় ২০ লাখ মানুষ এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান।
আজ শনিবার (৬ জুলাই) সচিবালয়ে সাম্প্রতিক উজান থেকে নেমে আসা পানি এবং ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী এ তথ্য জানান।
প্রতিমন্ত্রী জানান, দেশের সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, রংপুর, জামালপুর, গাইবান্ধা, ফেনী, রাঙ্গামাটি, বগুড়া, কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, লালমনিরহাট ও কক্সবাজার জেলা বন্যা আক্রান্ত হয়েছে।
মহিবুবর রহমান আরও জানান, বন্যা আক্রান্ত ১৫ জেলায় এ পর্যন্ত নগদ তিন কোটি ১০ লাখ টাকা, ৮ হাজার ৭০০ টন ত্রাণের চাল, ৫৮ হাজার ৫০০ ব্যাগ শুকনো ও অন্যান্য খাবার এবং শিশু খাদ্য কেনার জন্য ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এই ১৫ জেলার সবখানেই মানুষ পানিবন্দি নয়। কোনো কোনো জেলা আংশিকভাবে বন্যা কবলিত। এখন পর্যন্ত আমাদের আশ্রয়কেন্দ্রে ৩৬ হাজার ২২৩ জন আশ্রয় নিয়েছেন।
এদিকে সারাদেশের নদ-নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়ে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। যদিও এখনও বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে। পানির চাপ মোকাবিলায় ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
আজ শনিবার (৬ জুলাই) সকাল ৯টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ০৫ সেন্টিমিটার। যা (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার) বিপৎসীমার দশমিক ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে সকাল ৬টায় বিপৎসীমার দশমিক ১৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত রোর্কড করা হয়। অর্থাৎ তিন ঘণ্টায় পানি বেড়েছে দ্বিগুণ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা উদ দৌলা বলেন, উজানের ঢলে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে। পানির চাপ সামলাতে ৪৪টি গেট খুলে রাখা হয়েছে। টানা বৃষ্টির কারণে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি হয়েছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। বন্যা মোকাবিলায় বিভিন্ন বাঁধ মেরামতের কাজ চলছে।
এছাড়া সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ১২ ঘণ্টায় পানি বেড়ে সিরাজগঞ্জ শহর ও কাজিপুর উভয় পয়েন্টেই বিপৎসীমার ৫৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ ফুলজোড়, ইছামতি, করতোয়া নদীর পানিও বেড়েছে। ইতোমধ্যে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে জেলার ১ হাজার ২৭৬ পরিবার। প্লাবিত হয়েছে ৪০০ হেক্টরেরও বেশি ফসলি জমি। অপরদিকে নদী তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে চলছে তীব্র ভাঙন।
অন্যদিকে সিলেট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধাসহ দেশের বিভিন্ন প্রাণে বন্যার পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। এতে কয়েক লাখ মানুষ পানি বন্দি অবস্থায় দিনযাপন করছেন।