নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৪, ০৪:৩০ পিএম
গরুকাণ্ডে সাদিক অ্যাগ্রো ফার্মের ইমরান হোসেন ও প্রাণিসম্পদের কর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে যাচ্ছে দুদক। ছবি: সংগৃহীত
সাদিক অ্যাগ্রো ফার্মের কথিত মালিক ইমরান হোসেনের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ ১৮টি ব্রাহমা জাতের গরু আমদানি, প্রজনন ও বিক্রিসহ বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান বিষয়ে জানা গেছে, ১৫টি ব্রাহমা গরুসহ ৪৪৮টি গবাদিপশু নিলাম ছাড়াই জবাই করে মাংস বিক্রির দায়িত্ব দেওয়া, জবাই না দিয়ে কোটি টাকায় বিক্রি কিংবা খামারে রেখে দেওয়া, সিমেন বিক্রি এবং সরকারি দায়িত্ব পালন না করে ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে সংস্থাটি।
দুদক সূত্রে আরও জানরা গেছে, অনুসন্ধান শেষে এখন চলছে মামলার প্রক্রিয়া। আর অনুসন্ধান প্রতিবেদন কমিশনের বিবেচনার জন্য রয়েছে, যেখানে টিমের সুপারিশে ইমরান হোসেন ও তৌহিদুল আলম এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দুই পরিচালকসহ চার থেকে পাঁচজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মামলার আসামি হতে পারেন।
প্রসঙ্গত, সাদিক এগ্রোর মালিক হিসেবে ইমরান হোসেনকে চেনে সবাই। কিন্তু কাগজপত্রে সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন নয়। প্রকৃত মালিক তৌহিদুল আলম জেনিথ। তিনি আবার ইমরান হোসেনের বন্ধু। আর সাদিক নামে (সাদিক খামার) আরও একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যার মালিক মূলত ইমরান হোসেন। তার মানে হলো দুই বন্ধু মিলেমিশে গরু ব্যবসার মাফিয়া সিন্ডিকেট গড়ে অবৈধ কার্যক্রম চালিয়েছেন।
এ বিষয়ে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা (উপ-পরিচালক) মো. আকতারুল ইসলাম বলেন, কয়েকটি অভিযান ও নথিপত্র সংগ্রহ শেষে অনুসন্ধান টিমের কাজ চলমান রয়েছে। মামলা কিংবা অন্য কোনো আইনি প্রক্রিয়া হলে দুদক থেকে অফিসিয়ালভাবে জানানো হবে।
অন্যদিকে নাম প্রকাশ না করে দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, চক্রটি নিষিদ্ধ ব্রাহমা গরু খামারে লুকিয়ে রেখেছিল। দুদকের অভিযানে ইতোমধ্যে ৬টি গরু উদ্ধার করা হয়েছে। বাকিগুলোর সঠিক তথ্য নেই। তবে আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে যে, দুইটি গরু ২ কোটি টাকার ওপরে বিক্রি করা হয়েছে। বাকি ৭টি লুকিয়ে রাখা হয়েছে নাকি জবাই করা হয়েছে সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে সাভার কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামার সূত্রে জানা যায়, সার্বিক পর্যবেক্ষণে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেছে। সুলভমূল্যে মাংস বিক্রির উদ্দেশ্যে চলতি বছরের মার্চ মাসে কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামার থেকে আমদানি ও বেসরকারি পর্যায়ে উৎপাদন নিষিদ্ধ ব্রাহমা জাতের ১৫টি গরুসহ বিভিন্ন জাতের ৪৪৮টি গরু জবাই দেওয়ার পুরো প্রক্রিয়া অসঙ্গতি ও অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে নিষিদ্ধ ব্রাহমা জাতের ১৮টি গরু আমদানি করে সাদিক অ্যাগ্রো। কাস্টমস বিভাগ বিমানবন্দরে সেই গরু জব্দ করে। পরবর্তী সময়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশে গরুগুলো প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে দেওয়া হয়। কিন্তু সাদিক অ্যাগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে গরুগুলো কৌশলে সাদিক অ্যাগ্রোকে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
আলোচিত ছাগলকাণ্ডে এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত ১৫ লাখ টাকা মূল্যের ছাগলটি সাদিক অ্যাগ্রো থেকে কিনে এক লাখ টাকা অগ্রিম পরিশোধ করেছিলেন। পরে এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হলে ছাগলটি আর ওই খামার থেকে নেওয়া হয়নি। এ ঘটনার পর সাদিক অ্যাগ্রোকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।