আহমেদ সেলিম
প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৪, ১০:৫৩ পিএম
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের জাতীয় কবি কে? ছোট-বড় কে না জানে এই প্রশ্নের উত্তর। তিনি কাজী নজরুল ইসলাম। বিদ্রোহী কবি; বাংলাদেশের জাতীয় কবি। অথচ মুখে মুখে এই স্বীকৃতি মিললেও নেই কোনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। জাতীয় কবির স্বীকৃতি দিয়ে এখনো রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো প্রজ্ঞাপন বা গেজেট জারি করা হয়নি। এই নিয়ে আক্ষেপ সংস্কৃতিকর্মীদের। তারা বলছেন, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি কখনো মুখে মুখে হতে পারে না। এর দালিলিক প্রমাণ থাকতে হয়।
বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ‘জাতীয় কবি’ হিসেবে ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশের নির্দেশনা চেয়ে ২০২২ সালে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন মো. আসাদ উদ্দিনসহ ১০ জন আইনজীবী। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামান সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এ রিট দায়ের করা হয়েছিল। রিটে বিবাদী করা হয়েছিল সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক এবং কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালককে। ওই রিটে বলা হয়েছিল, কাজী নজরুল ইসলাম মৌখিকভাবে বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে পরিচিত হলেও লিখিতভাবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই।
সংস্কৃতিকর্মীরা বলছেন, বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠান কিংবা রাষ্ট্রীয় আয়োজনে কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তার নামে ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় নামে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ও করেছে সরকার। এসব আপেক্ষিক বিষয়। কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল এক অংশ।
তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, ইতিহাস ও জাতীয় স্বীকৃতি কখনো অলিখিত হতে পারে না। অলিখিত ইতিহাস ও তথ্য কালের বিবর্তনে হারিয়ে যায়। তাই দ্রুত এই স্বীকৃতির গেজেট প্রকাশ করা উচিত।
এ প্রসঙ্গে নজরুল ইনস্টিটিউটের পরিচালক বলেন, নজরুল জীবনী নিয়ে গবেষণা করেছেন লেখক-গবেষক প্রয়াত সৈয়দ আবুল মকসুদ। তিনি গণমাধ্যমকে জানান, ১৯২৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর কলকাতার আলবার্ট হলে কবিকে সর্বভারতীয় বাঙালিদের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। স্যার আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের সভাপতিত্বে সে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, ব্যারিস্টার ওয়াজেদ আলী, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক। সেদিনের ঘোষণার পর থেকে নজরুল হয়ে গেলেন জাতীয় কবি। পরে আর আনুষ্ঠানিকভাবে কাগজে-কলমে তাকে জাতীয় কবি ঘোষণা করা হয়নি।
বাংলাদেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে ১৯৭২ সালের ২৪ মে কবিকে সপরিবার ভারত থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। বড় ছেলে কাজী সব্যসাচী ও তার স্ত্রী উমা কাজী, ছোট ছেলে কাজী অনিরুদ্ধ ও তার স্ত্রী কল্যাণী কাজী এবং তাদের সন্তানেরা এসেছিলেন কবির সঙ্গে।
বাংলাদেশে আসার পর কবির জন্য ধানমন্ডিতে সরকারি উদ্যোগে একটি বাড়ি বরাদ্দ করা হয়। এর নাম দেওয়া হয় ‘কবি ভবন’। সেখানে কবিকে রাখা হয়েছিল রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে কবির অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর এক বিশেষ সমাবর্তনে কবিকে সম্মানসূচক ডিলিট উপাধিতে ভূষিত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পরে কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। পরে তাকে ‘একুশে পদকে’ ভূষিত করা হয়। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট কবি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার পর তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের উত্তর পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।
আজও বিদ্রোহী কবি নজরুলের কবিতা পড়ে নতুন উদ্যম পান তরুণরা। শিশুরা কাঠবিড়ালির সঙ্গে সখ্য গড়ার বায়না শেখে তার থেকে। লোকমুখে জাতীয় কবি হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও এখনো মেলেনি তার লিখিত দলিল। তবে কি কাজী নজরুল ইসলামের জাতীয় কবির তকমা কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাবে-সংশয় কবিপ্রেমী ও সাহিত্য অনুরাগীদের।