বরিশাল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৪, ০৮:৪৯ পিএম
বরিশালে রণক্ষেত্র। ছবি: বরিশাল প্রতিনিধি
দেশের বিভিন্ন স্থানে কোটা সংস্কার কর্মসূচিতে হামলার প্রতিবাদে বরিশালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হামলা করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় তাদের হামলায় আহত হয়েছে অন্তত ২৫ জন শিক্ষার্থী।
আজ মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ধারালো অস্ত্র, লাঠিসোটা, ক্রিকেট ব্যাট ও স্টাম্প নিয়ে হামলায় অংশ নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে, বিএম কলেজ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিকেলে নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে কোটাবিরোধীরা। এসময় সরকারি বিএম কলেজ, সরকারি বরিশাল কলেজ, পলিটেকনিক কলেজ এবং অমৃত লাল দে কলেজসহ একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয় অবরোধ কর্মসূচিতে।
এসময় নথুল্লাবাদ এলাকায় একটি পুলিশ বক্স ভাঙচুর এবং পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা।
এর আগে ধারাবাহিক অবরোধ কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার সকালে নথুল্লাবাদে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে বিএম কলেজসহ একাধিক কলেজের শিক্ষার্থীরা। সেই কর্মসূচিতে যোগদিতে বিএম কলেজের অন্য শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে জড়ো হয়।
ঠিক সেই মুহূর্তে বিএম কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দেশীয় ধারালো অস্ত্র, লাঠিসেটা, ক্রিকেট ব্যাট-স্ট্যাম্প নিয়ে হামলা করে শিক্ষার্থীদের ওপর। অভিযোগ রয়েছে, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে বিভিন্ন হোস্টেলে, খেলার মাঠে এমনকি ক্লাস রুমে ঢুকে কোটাবিরোধীদের ওপর হামলা করে।
খবর পেয়ে নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন সড়ক অবরোধকারীরা মিছিল নিয়ে বিএম কলেজ ক্যাম্পাসে এসে লাঠিসোটা নিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া করলে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। একপর্যায় কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে যায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
তবে ঘটনার সময় ছাত্রলীগের এক কর্মীকে পেয়ে মারধর করে কোটাবিরোধীরা। এসময় পুলিশ এসে ছাত্রলীগের ওই কর্মীকে উদ্ধার এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। হামলা-পাল্টা হামলা এবং সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ২৫ জন আহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে উভয় পক্ষ থেকে।
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকেই বিএম কলেজ ক্যাম্পাসে লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান নেয় কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা। পরে বিকেলে পুনরায় নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। বিএম কলেজ শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচিতে সেখানে অংশ নেন বরিশাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, অমৃত লাল দে, সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ এবং সরকারি বরিশাল কলেজসহ অন্যান্য কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এসময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা নথুল্লাবাদে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে একটি পুলিশ বক্স ভাঙচুর করে। এতে এয়ারপোর্ট থানার পরিদর্শক লোকমান হোসেন এবং ট্রাফিক পুলিশ সদস্য কাওসার হোসেনসহ পুলিশের একাধিক সদস্য হামলার শিকার হন। সেখানে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে প্রায় ঘণ্টাব্যাপি হামলা ভাঙচুর চালায় কোটাবিরোধীরা। আন্দোলন চলাকালে গাড়ি, একাধিক মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ার সেল ছোড়ে পুলিশ।
অপরদিকে, বিকেল ৩টায় বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা লাঠিসোটা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে।
এছাড়া মঙ্গলবার সকালে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা নগরীর আমতলার মোড়ে বরিশাল-ঢাকা-ঝালকাঠি-পটুয়াখালী মহাসড়ক এবং সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ শিক্ষার্থীরা শহরের ব্যস্ততম চৌমাথা সড়ক অবরোধ করে। চৌমাথায় সড়ক অবরোধ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে বরিশাল শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল কলেজ শিক্ষার্থীরাও।
এছাড়াও দিনভর বরিশাল নগরীর বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এবং মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এতে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল হয়ে যায়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনস্থলে মহাসড়কের চার-পাশে হাজার হাজার যানবাহনের দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রীদের।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ এটিএম আরিচুল হক জানান, বিএম কলেজ ক্যাম্পাসের পরিবেশ শান্ত রয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেছে। তারা পুলিশ বক্সে এবং পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানান তিনি।