নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৮:৩০ এএম | আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৫:১৮ পিএম
গত এক সপ্তাহ ধরে কোটা আন্দোলন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেরে আলোচিত খবর হিসেবে প্রকাশিত হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত
সারাবিশ্বের বহু সংবাদকে পিছনে ফেলে গত এক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশের কোটা আন্দোলন ও একে ঘিরে সহিংসতার খবর দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে প্রাধান্য পাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বাংলাদেশে কারফিউ, ছাত্র হত্যার খবর প্রাধান্য পাচ্ছে। বিশ্বের দেশে দেশে ছাত্র আন্দোলনের সমর্থনে বিক্ষোভ হচ্ছে। সংঘাত সংঘর্ষ ও পৈশাচিক কায়দায় শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানোর খবর শিরোনাম হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক মহল, প্রভাবশালী দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোয় কারফিউ, ছাত্র হত্যা নিয়ে ছাপা সংস্করণ পত্রিকা, ডিজিটাল সংস্করণ এবং টেলিভিশন চ্যানেলগুলো অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে খবর ও খবরের বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেই যাচ্ছে। কাতারের আল জাজিরা, নিউ ইয়র্ক টাইমস, অষ্ট্রেলিয়ার এবিসি, ভারতের দ্য টেলিগ্রাফ, দ্য হিন্দু, পাকিস্তানের ডন, ইংল্যান্ডের বিবিসি, জার্মানির ডয়সে ভেলে, আমেরিকার ভয়েস অব আমেরিকা, ফরেন পলিসিসহ সুপরিচিত এবং কম পরিচিত সব গণমাধ্যম গুরুত্বসহকারে খবর প্রকাশ করছে।
ইন্টারনেট বন্ধ থাকা এবং নানা কারণে দেশের টেলিভিশনগুলো সহিংসতার ভয়াবহতার চিত্র প্রকাশ না করলেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণলমাধ্যম সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। জএসব রিপোর্টে উঠে আসছে নানা তথ্য, ভয়াবহ চিত্র। কীভাবে বাংলাদেশে এই সংকটের সৃষ্টি, এর জন্য দায়ী কে বা কারা- এসব প্রশ্নের চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বড় বড় শহরে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, বাংলাদেশের কোটা আন্দোলন নিয়ে অস্ট্রেলিয়া, বৃটেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, কাতার ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বড় বড় শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। সৌদী আরবে বিক্ষোভ হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিক্ষোভ করে বাংলাদেশের অর্ধশতাধিক শ্রমিক কারাদণ্ড ভোগ করছে। মালদ্বীপের বিক্ষোভ করায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। ব্রিটেনের লন্ডন, ওয়েলসের কার্ডিভ, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন, নিউইয়র্কসহ বিশ্বের শতাধিক শহরে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছেন। ভারতের কলকাতায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের সচিত্র শ্লোগান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে উদ্ভূত সহিংস পরিস্থিতিতে ব্যাপক প্রাণহানি এবং ‘দেখা মাত্র গুলির নির্দেশ’ নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পৃথক দুটি প্রস্তাব এনেছেন ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির দুই এমপি রুপা হক ও আফসানা বেগম। ২৫ জুলাই রুপা হক ও ২২ জুলাই আফসানা বেগম তাদের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তারা ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অধিবেশনে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাজ্য সরকারের অবস্থান জানতে চান।
জবাবে পার্লামেন্টে লেবার সরকারের মুখপাত্র ও এমপি পাওয়েল বলেন, বাংলাদেশের সহিংসতার বিষয়ে ব্রিটিশ সরকার গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। প্রাণহানি অগ্রহণযোগ্য। প্রতিবাদ করার অধিকার ও ইন্টারনেট পরিষেবা পুনরূদ্ধার করতে হবে।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পুলিশের গুলি নিয়ে নেটিজেনদের মধ্যে তোলপাড় চলছে। বিশেষ করে ইউটিউব প্লাটফর্মের টকশোগুলোতে ব্যাপক সমালোচনা বিতর্ক চলছে। আন্তর্জাতিক এবং প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলোতে বাংলাদেশের কারফিউ ও সংঘাত-সংঘর্ষে শিক্ষার্থীদের প্রাণহানি নিয়ে প্রতিদিন খবর প্রকাশ করছে। ভারতের কোলকাতায় শিক্ষার্থীরা দফায় দফায় বিক্ষোভ করছে। কি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বাংলাদেশের নির্যাতিত শিক্ষার্থীদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে তাদের জন্য পশ্চিমবঙ্গের দরজা খোলা রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। বাংলাদেশের নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী ছাত্রদের প্রতিবাদ বিক্ষোভকে দমনপীড়ন করতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের কাছে থাকা হেলিকপ্টার ও ভেহিক্যালস মোতায়েন নিয়েও বিতর্ক হচ্ছে।
অন্যদিকে গতকাল শুক্রবার (২৬ জুলাই) ‘প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের’ ব্যানারে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করে দেশের বিশিষ্টজনরা বলেছেন, ‘সরকারের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি থেকে শুরু করে মন্ত্রী এমপিদের বক্তব্য আচরণে মনে হচ্ছে এদের কাছে মানুষের জীবনের চেয়ে রাষ্ট্রীয় স্থাপনার মূল্য বেশি। যে কারণে পুলিশের গুলিতে এতোগুলো প্রাণ ঝড়ে যাওয়ার পরও এরা নিহতদের নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেনি; বরং পুরে যাওয়া মেট্রোরেলের স্টেশন ও বিটিভিতে গিয়ে মায়াকান্না করছেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘এই সংখ্যক মৃত্যু দেখে কেউ চুপ করে থাকতে পারে না। চোখ বন্ধ করলেই ওই লাশগুলো দেখতে পাই। বিচারিক তদন্তে আমরা জজ মিয়ার নাটক দেখেছি। তাই আমরা জাতিসংঘের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত চাই’। সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী সহিংসতায় প্রাণহানির পাশাপাশি মিথ্যা মামলা ও নির্বিচারে গ্রেপ্তারের ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে।