তৌসিফ আহমেদ
প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৬:১৬ পিএম
জীবনের প্রতিটি অংশে ইন্টারনেট নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। প্রতীকী ছবি
হঠাৎ করেই প্রতিদিনের অভ্যস্ত জীবনে আচমকা ধাক্কা। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতির মধ্যে গত ১৭ জুলাই থেকে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা এবং ১৮ জুলাই রাত থেকে ব্রডব্যান্ড সেবা বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের বর্তমান জীবনের প্রতিটি অংশে ইন্টারনেট এত নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ছিল যে, হঠাৎ তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েন দেশের প্রতিটি নাগরিক। ভেঙে পড়ে অবাধ তথ্য প্রবাহের অবলম্বন ও অর্থনৈতিক কাঠামো। ডিজিটাল সেবায় সৃষ্টি হয় স্থবিরতা।
ইন্টারনেট না থাকায় বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল, অনলাইনে টাকা লেনদেন, মোবাইলে টাকা ভরা, অনলাইনে কেনাকাটা, ফ্রিল্যান্সিং, বিমানের টিকিট বুকিং, অনলাইন বিনোদনের মাধ্যম (ওটিটি, ইউটিউব) ও অনলাইনভিত্তিক লেখাপড়াসব সেবাই বিঘ্নিত হচ্ছে।
এদিকে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন বিদ্যুৎসেবা নেওয়া গ্রাহকেরা। মিটারে টাকা রিচার্জ করতে না পারায় পানি সংকটসহ ফ্রিজের খাবার পচতে শুরু করেছে। বাধ্য হয়ে বিদ্যুৎ অফিসে ধরনা দিতে হচ্ছে তাদের। গ্রাহকের ভিড় বাড়ায় সেখানে লম্বা লাইন পড়েছে। গত ২২ জুলাই মোহাম্মদপুরের টাউনহল এলাকায় বিদ্যুৎ রিচার্জ করতে এসে ফারুক নামের একজন গ্রাহক গণমাধ্যমে বলেন, ‘দুপুর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু লোকজন বেশি থাকায় রিচার্জ করতে পারিনি। পরে স্ত্রীকে এনে নারীদের লাইনে দাঁড় করিয়ে দেই।’
এদিকে কয়েকশ গ্রাহককে সেবা দিতে রীতিমতো গলদঘর্ম হচ্ছেন বিদ্যুৎ অফিসের লোকজনেরা। বগুড়ায় বিদ্যুৎ অফিসের সামনে ২১ জুলাই থেকে জড়ো হতে থাকেন কয়েক হাজার গ্রাহক। বিদ্যুৎ অফিসের কর্মীরা রিচার্জ করে দিতে শুরু করলে সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি মানুষজনকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ১৮ জুলাই বলেন, জাতীয় ও নাগরিকদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সাময়িক যে ক্ষতি ও অসুবিধার মুখোমুখি হতে হচ্ছে, তিনি সেটা মেনে নিয়ে সবাইকে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানান। পরে অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধের কারণ হিসেবে রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত ডেটা সেন্টারের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা বলা হয়।
তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ঢাকায় কিছু এলাকায় হওয়া ক্ষতির সঙ্গে সারা দেশে ইন্টারনেট বন্ধের কোনো সম্পর্ক নেই। আর মোবাইল ইন্টারনেট যে কোনো সময় চালু করা সম্ভব।
বাংলাদেশ মোবাইল ফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, ‘ইন্টারনেট জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত একটি মৌলিক অধিকার। ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়ে গুজব প্রতিরোধ কখনো সম্ভব হয়নি। বরং গুজব আরও ছড়িয়েছে। ইন্টারনেট বন্ধে মহাখালীতে ক্ষয়ক্ষতির যে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, তা সঠিক নয়। কারণ গত বছর মহাখালীর খাজা টাওয়ার পুড়ে যাওয়ার পর কিছুটা বিঘ্ন হলেও দেশজুড়ে ইন্টারনেট সেবা সচল ছিল।’
ইন্টারনেট ও ডিজিটাল প্রযুক্তিকে কেন্দ্র করে নতুন ধরনের কর্তৃত্ববাদী ও নজরদারি তৎপরতার বিকাশ ঘটেছে। বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে জেনেও শাসকগোষ্ঠী কোনো কোনো ক্ষেত্রে গণবিক্ষোভ দমনের উপায় হিসেবে পুরো ইন্টারনেট ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়। এ ছাড়া যে কোনো দেশের সরকারের পক্ষে নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য থেকে শুরু করে রাজনৈতিক অভিমত সম্পর্কে জানা আগের সময়ের চেয়ে সহজ হয়ে গেছে। ইন্টারনেটভিত্তিক জনপ্রিয় বিভিন্ন অ্যাপ বন্ধ করে দিয়েও আমরা দেখেছি বিক্ষোভকারীদের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। ফলে ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সরকারের কতটা সুবিধা হয়েছে তা নিশ্চিত করা না গেলেও ডিজিটাল নির্ভর আজকের জনসমাজের দুর্ভোগ হয়েছে লাগামছাড়া।