ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২৪, ০৪:৩৪ পিএম
বিএনপি সমর্থিত শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাদানে ব্যর্থ হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রশাসনের পদত্যাগসহ ১১ দফা দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় বিএনপি সমর্থিত শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। এসময় তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গেও পূর্ণ সমর্থন জানান।
আজ মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নেতারা এই দাবি জানান। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাদা দলের আহবায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান।
লুৎফর রহমান বলেন, শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীদের কোটাবৈষম্যের বিরুদ্ধে পরিচালিত আন্দোলন অত্যন্ত যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত বিবেচনা করে আমরা শুরু থেকেই এ আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে আসছি। আন্দোলনকারীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে উদ্ভূত সংকটের দ্রুত সমাধানের কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও সরকারের প্রতি আমরা একাধিকবার আহ্বান জানিয়েছি। কিন্তু সরকার একটি ন্যায্য দাবিকে কেন্দ্র করে পরিচালিত শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে গুরুত্ব না দিয়ে আইন-আদালতের কথা বলে সংকটকে প্রলম্বিত করে। শুধু তাই নয়, শুরু থেকেই সরকার এবং ক্ষমতাসীন দলের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী এবং চাকরি প্রত্যাশীদের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী আখ্যা দিয়ে তাদের আন্দোলনকে হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা চালায়।
তিনি আরো বলেন, আমরা মনে করি গত দেড় দশক ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকার সমর্থক ছাত্রসংগঠনের সন্ত্রাসীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর যে নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে, এগুলো ছিল এর প্রতিক্রিয়ায় পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।
বৈষম্যবিরোধী চলমান ছাত্র আন্দোলনে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে প্রসঙ্গে অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, আমরা অত্যন্ত ক্ষোভের সাথে লক্ষ্য করছি যে, শিক্ষার্থীদের এই যৌক্তিক আন্দোলন মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে সরকার ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, তৃতীয় পক্ষের ইন্ধন ইত্যাদি বয়ান তৈরি করে ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
লিখিত বক্তব্যে সাদা দলের আহবায়ক চলমান এই আন্দোলনকে জনসাধারণের দীর্ঘদিনের দ্রোহের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে উল্লেখ করেন। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সারাদেশে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে ঢাবি সাদা দলের যুগ্ম আহবায়ক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান খান, অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আবুল কালাম সরকার, প্রকাশনা সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
দাবিগুলো হলো—
১. গত ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর ছাত্র নামধারী ও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের হামলা এবং পরবর্তী সময়ে ক্যাম্পাসে সংঘটিত সব ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
২. সন্ত্রাসীদের হামলা থেকে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পদত্যাগ।
৩. অবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা।
৪. কারফিউ সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে জনজীবন স্বাভাবিক করা।
৫. জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আন্তর্জাতিক তদন্তের ব্যবস্থা করে গত ১৬ জুলাই থেকে আন্দোলন দমনের নামে শিক্ষার্থীসহ শত শত মানুষ হত্যায় জড়িত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য ও সরকার সমর্থক সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনা এবং নিহতদের পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ ও একই সঙ্গে এ হামলায় আহত সবার সুচিকিৎসার যথাযথ ব্যবস্থা করা।
৬. আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় স্থাপনা ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি সাধনের ঘটনা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নিরপেক্ষ ও নির্মোহ তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত দুষ্কৃতিকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা।
৭. বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের ডিবি হেফাজত থেকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর এবং গ্রেপ্তার হওয়া সব শিক্ষার্থীকে অবিলম্বে মুক্তি প্রদান।
৮. শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহার এবং তাদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি না করা।
৯. বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সর্বশেষ ৮ দফা দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন করে সংকটের সমাধান করা। তদন্ত ছাড়াই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পেশাজীবীসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী-সমর্থকদের গণগ্রেপ্তার বন্ধ।
১০. রিমান্ডে নিয়ে বর্বরোচিত নির্যাতন বন্ধ করা এবং গ্রেপ্তার হওয়াদের অবিলম্বে মুক্তি প্রদান করা।
১১. জনদাবি মেনে নিয়ে সরকারের পদত্যাগ এবং একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা।