বরিশাল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২৪, ০৫:২০ পিএম
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পুলিশের লাঠিচার্জ। ছবি: বরিশাল প্রতিনিধি
ছাত্র-জনতা হত্যার বিচার, গণগ্রেপ্তার বন্ধ, কেন্দ্রীয় সমন্বয়কসহ সারাদেশে শিক্ষার্থীদের মুক্তি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নয় দফা মেনে নেওয়ার দাবিতে বরিশালে শিক্ষার্থীদের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ।
এসময় পুলিশের লাঠিচার্জে সাংবাদিকসহ অন্তত ১০-১৫ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনার পর সড়ক থেকে আটক করা হয় দুই ছাত্রীসহ ১১ জনকে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার (৩১ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে নগরীর সদর রোড ও ফজলুল হক অ্যাভিনিউ এলাকায় দুই দফা লাঠিচার্জের এ ঘটনা ঘটে।
বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ বরিশাল জেলার সমন্বায়ক ডা. মনীষা চক্রবর্তী জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শান্তিপূর্ণ ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি ছিল বুধবার। সেখানে এসে পুলিশ হামলা করেছে। নারী শিক্ষার্থীদের আহত করেছেন। অর্ধশত শিক্ষার্থীদের আহত করেছে। অন্তত ১০-১৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলনে আসা শিক্ষক বিপ্লব দাস বলেন, শিক্ষার্থীরা ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালন করেছে। তারা বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে ডেকেছিলেন। সবাই আমার ছাত্র। সেই কারণে আমি এসে ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়েছি। শিক্ষার্থীরা সদর রোড থেকে আদালত পাড়ায় আসার সময় পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করেছে। অথচ শিক্ষার্থীরা কোনো ধরনের গোলযোগ করেনি।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, সকাল থেকে পুলিশ বাহিনী নগরীর প্রধান সড়কগুলো আটকে রাখে। নানা বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে তারা দাবি আদায়ে সুশৃঙ্খলভাবে নগরীর ফকিরবাড়ি রোড থেকে সদর রোডে উঠতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়।
বাধা উপেক্ষা করে তারা অশ্বিনী কুমার হলের সামনে চলে আসলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। পরে তারা আদালত পাড়ার সামনে ফজলুল হক এভিনিউ সড়কে গেলে সেখানেও পুলিশ দ্বিত্বয় দফায় বাধা দেয় এবং ১০-১২ জনকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়।
শিক্ষার্থীরা বলেন, তারা রাষ্ট্রবিরোধী বা কোনো ধরনের সংঘাতে ছিল না। তারপরও বিনা উসকানিতে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে এবং সহপাঠীদের ধরে নিয়ে গেছে।
ঘটনাস্থলে থাকা বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার এসএম তানভীর আরাফাত বলেন, বিরোধী ছাত্রসংগঠনের কিছু নেতা রাস্তা অবরোধ করেছিল। কোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এটার সামনেও অবরোধ করেছিল। তারা পুলিশের ওপর হামলার চেষ্টা করে, ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে, গাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টা করে। পরবর্তীতে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে তাদের উঠিয়ে দিয়েছি। বেশ কয়েকজনকে আটক করেছি। বর্তমানে পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে।
উপ-পুলিশ কমিশনারের দাবি এখানে বেশ কিছু শিবিরের ছাত্র ছিল, যাদের আটক করেছে তারা। তবে এতে ভিন্নমত জানিয়েছেন বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ বরিশাল জেলার সমন্বয়ক ডা. মনীষা চক্রবর্তী। তিনি বলেন, এটা সাধারণ শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি। এখানে সাধারণ শিক্ষার্থীরাই ছিল।
হামলার শিকার শিক্ষার্থী মৌসুমি জানিয়েছেন, পুলিশ নিজেদের দোষ ঢাকতে জামায়াত শিবিরের তকমা লাগানোর চেষ্টা করছে। পুরুষ পুলিশরা এসে আমাদের সবাইকে ইচ্ছেমতো পিটিয়েছে। কাউকে বাদ দেয়নি, চুল ধরে লাঠিপেটা করছে। শরীরে হাত দিয়েছে। যদিও কোতোয়ালি থানা পুলিশের সদস্যরা জানিয়েছেন-ঘটনাস্থলে নারী পুলিশ সদস্যরা ছিল, যারা নারীদের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বেলা ১১টার দিকে বরিশাল নগরীর ফকিরবাড়ী রোড থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করেন। তখন পুলিশ লাঠিপেটা করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে। ঘটনার ছবি ধারণ করতে যাওয়া দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার আলোকচিত্রি শামীম আহমেদ, যমুনা টিভির ক্যামেরা পার্সন হৃদয়, বার্তা ২৪ এর প্রতিনিধি এসএলটি তুহিনসহ অন্তত ৬ সাংবাদিক পুলিশি লাঠিপেটার শিকার হন। তাদের মধ্যে তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
লাঠিপেটার শিকার সাংবাদিকরা জানান, বিনা উসকানিতে উপ-কমিশনার এসএম তানভীর আরাফাতের নেতৃত্বে পুলিশ আন্দোলনকারীদের বাদ দিয়ে সাংবাদিকদের পিটিয়েছে। এমনকি পরে গিয়ে আহত হওয়া সাংবাদিক শামীম আহমেদও বাদ যায়নি লাঠিপেটা থেকে। ঘটনাস্থলে থাকা সাংবাদিকরা তাৎক্ষণিক এর প্রতিবাদ জানালে, তারা ঘটনা অস্বীকার করেন। পরে বিষয়টি পুলিশ কমিশনারকে জানানো হয়। তিনি নিজে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান।
এদিকে বিকেল সাড়ে ৩টায় থানা থেকে ছাড়া পেয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের সমন্বায়ক হুজাইফা রহমান জানান, একজন প্রতিবন্ধী পথচারীসহ পুলিশ ১১ জনকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করে। পরে প্রতিবন্ধীসহ পাঁচজনকে ছেড়ে দিয়েছে। বাকি ৬ শিক্ষার্থী এখনো পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।