বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের ঘোষণা আসছে!

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ দফার মধ্যেও ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি রয়েছে। গত ২০ জুলাই দেওয়া এসব দফার মধ্যে সপ্তম দফায় রয়েছে, ‘দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ও ছাত্র সংসদ চালু করতে হবে।’ এমতাবস্থায় আপাতত সরকারও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। 

কোটা আন্দোলন নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ছাত্ররাজনীতি ‘সাময়িক’ বন্ধ রাখার কথা ভাবছে সরকার। জানা গেছে, ছাত্র আন্দোলনকে একটি গোষ্ঠী ভিন্নখাতে প্রবাহিত করেছে। এতে করে সারাদেশে যে সহিংসতা আর সংঘর্ষ হয়েছে তাতে প্রায় দুই শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। সরকার  এমন ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ পরিস্থিতির পুরনরাবৃত্তি রোধ করতেই এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে।  এ ছাড়া শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য আরও কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিনে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং সরকারের বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে শিক্ষা প্রশাসনের বৈঠকে ছাত্ররাজনীতি সাময়িক বন্ধের পক্ষে মত আসে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ মতের বিষয়ে ইতিবাচক। এর পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি সাময়িক বন্ধ রাখার বিষয়ে চিন্তা শুরু হয়েছে। তবে তা এখনো চূড়ান্ত নয়। তবে এ বিষয়ে এখনও সরকারের দাত্বিশীলরা আনুষ্ঠানিকভাবে বক্তব্য দেননি। 

এর আগে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে গত ১৬ জুলাই সারা দেশের স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, পাবলিক ও বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। চলমান উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষাও আজ ১ আগস্ট পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে।

এদিকে গতকাল বুধবার (৩১ জুলাই) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ১২ সিটি করপোরেশন ও নরসিংদী পৌরসভা এলাকা ছাড়া সারাদেশের সরকারি সব প্রাথমিক বিদ্যালয় আগামী রোববার থেকে খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান কবে নাগাদ খুলবে, সে বিষয়ে এখনো কোনো আভাস নেই।  

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী গত মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেছেন, জননিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ধাপে ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলতে চান। এ মুহূর্তে তাঁরা নিরাপত্তা-ঝুঁকি নিরূপণ করছেন।

শিক্ষা প্রশাসনের সঙ্গে একটি বৈঠকে অংশ নেওয়া রাজধানী ঢাকার একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর কী ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে এবং করণীয় কী, তা নিয়ে বিস্তারিত আলাপ হয়েছে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি সাময়িক বন্ধসহ একাধিক পদক্ষেপ নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, ছাত্ররাজনীতি সাময়িক বন্ধ রাখা ও নিয়মানুযায়ী আবাসিক হলে সিট বরাদ্দ, মাস্টার্স শেষ হলে সিট বাতিলসহ বিভিন্ন বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে শিক্ষা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।

উল্লেখ্য,  এখন পর্যন্ত দেশের ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ২৯ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর বাইরে চারটি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আর্থিক ক্ষতি না হলেও এগুলোর কিছু শিক্ষার্থী হতাহত হয়েছেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে মোট ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৫ কোটি টাকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৫ কোটি এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়—এই পাঁচ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সব মিলিয়ে প্রায় ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।