অরুন্ধতী সুরঞ্জনা
প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৪, ০৫:০০ পিএম
ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
প্রায় নিশ্চিত করে বলা যায়, এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে অন্য যে কারও চেয়ে খুঁটিনাটি দৃষ্টি রাখছেন ভলোদিমির জেলেনস্কি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। প্রথম নারী হিসেবে যেমন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়ে ইতিহাস গড়েছেন কমলা হ্যারিস, তেমনি নভেম্বরের নির্বাচনে জিতে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হলে নিশ্চিতভাবেই তিনি জো বাইডেনের নীতি অনুসরণ করবেন।
অন্যথা হলে? মানে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি আবার ক্ষমতায় আসেন? ইউক্রেনের জন্য মার্কিন সামরিক সহায়তায় কাটছাঁট, এমনকি পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে পারেন এই রিপাবলিকান নেতা। ফলে যুদ্ধে রাশিয়াকে প্রতিহত করার মতো যথেষ্ট অস্ত্র ইউক্রেনের হাতে থাকবে না।
আবার ট্রাম্প এর আগে প্রকাশ্যে দাবি করেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ইউক্রেন যুদ্ধ থামিয়ে দিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার সখ্য সম্পর্কের ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। রিপাবলিকান দলের জাতীয় কনভেনশনে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার দিন দেওয়া বক্তৃতায় ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের কথা জোর দিয়ে বলেন। তার পরদিনই জেলেনস্কির সঙ্গে তার ফোনে আলাপ হয়। ফোনালাপে তিনি জেলেনস্কিকে বলেন, তিনি ‘শুধু শান্তি’ চান। কিন্তু কিয়েভের মনে ভয় আছে, পাছে দখলখকৃত ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডের স্বীকৃত নিয়ন্ত্রণ নিতে রাশিয়াকে সুযোগ করে দেন ট্রাম্প। ভয় আরও আছে, পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদ পেতে ইউক্রেনের সম্ভাবনা না ফুরিয়ে যায়।
সম্প্রতি ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের পর হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) জানিয়েছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ‘সুনির্দিষ্ট ও বিশ্বাসযোগ্য’ পরিকল্পনা রয়েছে ট্রাম্পের। তিনি নির্বাচনে জয় পেলে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবেই হবে।
ট্রাম্প মনে করেন, ইউক্রেনকে অর্থ ও অস্ত্র দেওয়ার কোনো মানে হয় না। এতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো জাতীয় স্বার্থ রক্ষা হয় না। তাহলে কোটি কোটি ডলার যুদ্ধের জন্য বিলিয়ে দেওয়া কেন, যে যুদ্ধে কোনোদিনও জিততে পারবে না কিয়েভ, প্রশ্ন তার। বরং এসব অর্থ দেশের ভেতর গুরুত্বপূর্ণ কাজে এবং বিশ্বে যেখানে মার্কিন স্বার্থ হুমকিতে পড়ে সেখানে ব্যবহার করা উচিত। তিনি রাশিয়াকে হুমকি মনে করেন না। বরং তিনি হুমকি মনে করেন চীনকে। ফলে তিনি নির্বাচনে জিতলে চীন নিয়েই বেশি মাথা ঘামাবেন বলে মনে হয়।
ধনকুবের ট্রাম্প মূলধারার গণমাধ্যম ও ওয়াশিংটনের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের থেকে সব সময় একশ গজ দূরে থাকার চেষ্টা করেন। তিনি মনে করেন, এদের কারণেই যুক্তরাষ্ট্র চিরদিনের জন্য যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে, রক্ত ও ধনসম্পদ দিয়ে যার খেসারত গুনছেন মার্কিন কর্মঠ নাগরিকরা। জনগণের অভিমতকে অবশ্য বেশ পাত্তা দেন ট্রাম্প। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে তার অবস্থান জনগণের আহ্বানে তিনি বদলাবেন বলে মনে হয় না।
তবে ট্রাম্প নির্বাচনে জিতলে এবং কিয়েভকে সহায়তা দেওয়া বন্ধ করে দিলেই যে ইউক্রেনের প্রতিরোধ যুদ্ধ হুট করেই থেমে যাবে, তা নয়। কারণ ইউক্রেন যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য বদ্ধপরিকর। এ ছাড়া আরও কয়েক মাস যুদ্ধ করার মতো অস্ত্র তাদের হাতে রয়েছে। এ ছাড়া ইউরোপীয় দেশগুলো তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করবে বলে মনে হয় না।
‘কিন্তু এ কথা সত্যি যে, টাইম সাময়িকীকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলছেন একজন ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা, ‘২০২৫ সালের প্রথম আট মাস, বা ১০ মাস, কিংবা পুরো বছরটাই [কিয়েভের জন্য] খুব কঠিন হবে।’ নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘সময় যত গড়াবে, ট্রাম্প বুঝতে পারবেন, পুতিনকে বিশ্বাস করা যায় না। ট্রাম্পের নীতি ও চাওয়াকে যে পুতিন পাত্তা দেন না, তাও বুঝতে পারবেন ট্রাম্প। আর তখনই আমরা ট্রাম্পের কাছ থেকে গুরুত্ব পাওয়া শুরু করব। ট্রাম্প আর যা-ই হোক, পুতিনের খেলনা পুতুল হতে চাইবেন না।’
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালিয়ে আসছে রাশিয়া। জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ায় আগাম আত্মরক্ষার অংশ হিসেবে প্রেসিডেন্ট পুতিন ওই অভিযানের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই যুদ্ধে রুশবাহিনী মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বেসামরিকদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে বলে অভিযোগ আছে। এ ধরনের অভিযোগের ভিত্তিতে পুতিনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে।