৯ বছরে পাল্টে গেছে বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীদের জীবনমান

এসকে সাহেদ, লালমনিরহাট

প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০২৪, ০২:৫১ পিএম

বন্দীদশা থেকে মুক্তি পাওয়া বিলুপ্ত ছিটমহল। ছবি: লালমনিরহাট প্রতিনিধি

বন্দীদশা থেকে মুক্তি পাওয়া বিলুপ্ত ছিটমহল। ছবি: লালমনিরহাট প্রতিনিধি

দীর্ঘ ৬৮ বছরের বন্দীদশা থেকে মুক্তি পাওয়া বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করা হয়েছে। তাদের দেশের মূলধারায় আসতে সকল নাগরিক সুবিধার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। গত ৯ বছরে পাল্টে গেছে বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীদের জীবনমান। 

দেশের অন্যান্য নাগরিকদের ন্যায় বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীদের সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিতের জন্য রাস্তা ঘাট নির্মাণ, স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত, শিক্ষা লাভের সুযোগ, সব ধরণের উন্নয়নমূলক কাজ চলমান রেখেছেন সরকার।

এদিকে বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) দিনব্যাপী নানা আয়োজনে লালমনিরহাটের বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোতে বর্ষপূর্তি উদযাপন করেছেন বিলুপ্ত ছিটমহলবাসী। জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বিলুপ্ত ছিটমহল মুজিব-ইন্দিরা নগরে ৪ জেলার বিলুপ্ত ছিটমহল আন্দোলন নেতৃবৃন্দের অংশ গ্রহণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিলুপ্ত ছিটমহল সমন্বয়  আন্দোলন কমিটির সভাপতি গোলাম মতিন রুমির সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় স্থানীয় সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেনসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা অনুষ্ঠানে লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারী জেলার বিলুপ্ত ছিটমহলের নেতারা বক্তব্য দেন। এসময় বক্তারা ১ আগস্টকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ছিটমহলমুক্ত দিবস ঘোষণার দাবি জানান।

জানা গেছে, বিলুপ্ত বাংলাদেশের ১১১টি ছিটমহলের ৪১ হাজার নাগরিক দীর্ঘদিন থেকে মৌলিক অধিকার বঞ্চিত ছিল। ১৭ হাজার ১৫৮ একর আয়তনের এসব ছিটমহলের অধিবাসীদের জন্য ছিল না কোন নির্দিষ্ট দেশ ও পরিচয়। ফলে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছিলেন। রাষ্ট্রীয় কোন সুযোগ সুবিধা তো দূরের কথা ন্যূনতম কোন পরিচয়েও চলতে পারেনি তারা। তাদের সন্তানদের ভিন্ন পরিচয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করতেন তারা।

অবশেষে বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের সরকারের যৌথ প্রচেষ্টায় তারা মুক্তির স্বাদ পায়। গত ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে মোমবাতি প্রজ্বলন এবং ১ আগস্ট সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে বিলুপ্ত হয় অভিশপ্ত সেই ছিটমহল নামটি। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পায় এসব মানুষ।

স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বিলুপ্ত এসব ছিটমহলের মানুষের উন্নয়নে সরকার ব্যাপক কাজ শুরু করেছে। দীর্ঘ সময় পিছিয়ে থাকা এসব মানুষের জীবন মান উন্নয়নে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন, আশ্রয়ণ প্রকল্প, মসজিদ, মন্দির, কমিউনিটি ক্লিনিক, রাস্তাঘাট নির্মাণ, বিদ্যুৎ সংযোগ, কৃষি ঋণ প্রদানসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ চলছে।

বিলুপ্ত ছিটমহলবাসী ষাটোর্ধ আব্দুল হামিদ জানান, জেল হাজতের চেয়েও খারাপ অবস্থায় ছিলাম আমরা। আমাদের কোন পরিচয় ছিল না। দেশের মানুষ আমাদের সাথে আত্মীয় করতে চাইতো না। নিজের সন্তানদের অন্য পরিচয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাতে হতো। নানা প্রতিবন্ধকতায় সন্তানদের উচ্চ শিক্ষা অর্জন করাতে পারিনি। 

ছিটমহল আন্দোলন নেতা হারুন অর রশীদ জানান, দীর্ঘ সময় আন্দোলন সংগ্রামের পর আমরা ৬৮ বছরের বন্দী দশা থেকে মুক্তি পেয়েছি। পেয়েছি জাতীয় পরিচয়পত্র। এখন আমরা গর্ব করে বলতে পারি আমরা বাংলাদেশি। 

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ জানান, ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে মোমবাতি প্রজ্বলন এবং ১ আগস্ট সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে মুছে যায় ছিটমহল নাম। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পায় এখানকার বাসিন্দারা। স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বিলুপ্ত এসব ছিটমহলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সবধরনের উন্নয়ন করেছেন সরকার।

উল্লেখ্য, দেশের ৪টি জেলায় (লালমনিরহাট-৫৯, কুড়িগ্রাম-১২, নীলফামারী-৪ পঞ্চগড়-৩৬) ১১১টি বিলুপ্ত ছিটমহল রয়েছে। 

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh