নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২৪, ১১:৩০ এএম
ফাইল ছবি
গত বুধবার (৩১ জুলাই) রাত ১টার দিকে বিএনপিপন্থি পেশাজীবী অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ-অ্যাবের সহসভাপতি প্রকৌশলী কামরুল হাসান উজ্জ্বলকে তার রাজধানীর বনশ্রীর বাসা থেকে সাদা পোশাকের লোকজন তুলে নিয়ে যায়। এ সময় একজন পুলিশের পোশাকে ছিলেন; বাকি সবাই হেলমেট ও মাস্ক পরা অবস্থায় ছিলেন বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এ সময় তারা তিনটি গাড়িতে করে ২০ থেকে ২২ জন এসেছিলেন এবং সবার হাতে ছিল লাঠি। তাদের কারও কারও চুল অনেক বড় ছিল। তারা পুলিশ, নাকি ডিবি তার সঠিক তথ্যও দেয়নি। প্রথমে বাড়িতে ঢুকেই সিসি ক্যামেরা ভেঙে ফেলে অভিযানকারীরা। বাড়ির মালিক অপরিচিত লোকজনকে দেখে স্থানীয় থানায় ফোন দিলে পুলিশ জানায়, তারা থানা থেকে কাউকে পাঠায়নি। পরে কামরুলের পরিবার এবং অ্যাবের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।
এদিকে সরকারি চাকুরিতে কোটা সংষ্কারের দাবিতে আন্দোলনে সহিংষতা ও সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা মামলাগুলোকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান চলছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার হওয়াদের বেশিরভাগ বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মী। এতে গ্রেপ্তার আতঙ্কে অনেকেই এখন ঘরছাড়া। আটককৃতদের এর মধ্যে একটি বড় অংশকে সাদা পোশাকের গোয়েন্দা সংস্থা আটক করছে বলে জানা গেছে।
গ্রেপ্তার হওয়া নেতাকর্মীদের স্বজনরা জানিয়েছেন, আটক বা গ্রেপ্তার অভিযানে যারা আসেন তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাদা পোষাকে আসেন। এতে তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গোয়েন্দা, নাকি অপহরণকারী– তা নিশ্চিত হওয়া যায় না। আর এ বিষয়ে পুলিশের কাছে গেলে তারাও কোনো বিষয় নিশ্চিত করতে পারেন না। ফলে আটকদের যতক্ষণ আদালতে সোপর্দ করা না হয়, ততক্ষণ তারা এক ধরনের আতঙ্কে থাকেন বলে অভিযোগ পরিবারের।
নেতাকর্মীর পরিবারের অভিযোগ, আটক অভিযান পরিচালনার সময়ে সাদা পোশাকে থাকা ব্যক্তিরা নিজেদের কোনো পরিচয় দেন না। তাদের কারও পরিচয় দৃশ্যমান থাকে না। যে গাড়িতে তারা আসেন, সেসবেরও কোনো পরিচয় বহন করেন না। ফলে কারা তাদের স্বজনকে নিয়ে যাচ্ছেন, তা কেউ বুঝতে পারেন না। কোনো অপরাধী চক্র এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে বলেও শঙ্কা তাদের।
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, গ্রেপ্তার নেতাকর্মীর বেশির ভাগকেই সাদা পোশাকে তুলে নেওয়া হচ্ছে। এর পর এক-দুই দিন পর আদালতে সোপর্দ করা হয়। এই সময়ে পরিবার, স্বজনসহ অন্যরা থাকেন ভয়ংকর এক আতঙ্কে। বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেন– তাদের স্বজনকে কোথায় নেওয়া হয়েছে; সে কেমন আছে। তাদের অনেকে সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি করতে চাইলেও থানা-পুলিশ সেই জিডি গ্রহণ করে না বলে তাদের অভিযোগ। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে যখন তারা জানতে পারেন আটক স্বজনকে আদালতে তোলা হচ্ছে বা তোলা হয়েছে তখন তাদের একটু স্বস্তি ফিরে আসে।
বিএনপি নেতাদের দাবি, গত এক সপ্তাহে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, জহিরউদ্দিন স্বপন, দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, দলের কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাত, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল হক বাবুল, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসিরউদ্দিন অসীম, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল আলম নিরব, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরীসহ দলের তিন হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিএনপি ছাড়াও বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদাসহ বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসকে আড়াল করতে বিএনপির নির্দোষ নেতাকর্মীর বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে। বাসায় না পেয়ে তাদের সন্তান অথবা পরিবারের সদস্যদের আটক ও অশালীন আচরণসহ আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হচ্ছে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার মিথ্যা অভিযোগে ঢালাওভাবে বিএনপি ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীর ওপর সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দোষারোপ করছে। তবে বিএনপির কোনো নেতাকর্মীই কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করেন তিনি।