এম ডি হোসাইন
প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২৪, ০৪:৫২ পিএম
কেরানীগঞ্জের লাল মসজিদ। ছবি- লেখক
এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর শ্রেষ্ঠ কাজগুলোকে প্রতিবছর স্বীকৃতি দেয় ইউনেস্কো। এ পুরস্কারের নাম ‘এশিয়া প্যাসিফিক অ্যাওয়ার্ডস ফর কালাচারাল হেরিটেজ কনজারভেশন’। ২০২১ সালে ছয়টি দেশের নয়টি স্থাপনাকে স্বীকৃতি দেয় তারা। এর মধ্যে অ্যাওয়ার্ড অব মেরিট ক্যাটাগরিতে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো দোলেশ্বর হানাফিয়া জামে মসজিদ বা লাল মসজিদ জাতিসংঘের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা বা ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পায়।
এর মাত্র কিছুদিনের ব্যবধানে ‘আবদুল লতিফ ফৌজান আন্তর্জাতিক মসজিদ স্থাপত্যশিল্প’ বিষয়ক অ্যাওয়ার্ডে গোটা মুসলিম বিশ্ব থেকে সাতটি মসজিদ স্থাপত্যশিল্পের অনন্য নিদর্শন হিসেবে নির্বাচিত হয়। মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নান্দনিক নিদর্শন হিসেবে বিজয়ী হয় কেরানীগঞ্জের লাল মসজিদটি।
ইউনেসকো ও সৌদি আরবের স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা ও থানা পর্যায় থেকে এ মসজিদটিকে একনজর দেখতে ও জুমার নামাজ আদায় করতে শত শত মুসল্লি প্রতি শুক্রবার ছুটে আসে কেরানীগঞ্জের দোলেশ্বর এলাকায়।
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের দোলেশ্বর ইউনিয়নে এই মসজিদটি অবস্থিত। ১৮৬৮ সালে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। তখনকার জনসংখ্যার বিবেচনায় এটি ছোট আকারে নির্মাণ করা হয়েছিল। এরপর মসজিদটি একাধিকবার সম্প্রসারণ করা হয়েছিল। কিন্তু কালের পরিক্রমায় মসজিদের অবকাঠামো ক্ষয়িষ্ণু হয়ে যাচ্ছিল। কয়েক বছর আগে মসজিদটিকে সংস্কার করে পুরনো রূপ দেওয়ার উদ্যোগ নেন সেখানকার সংসদ সদস্য ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। ২০১৮ সালে স্থপতি আবু সাঈদ এম আহমেদের নেতৃত্বে মসজিদটির সংস্কার কাজ শেষ হয়। পুরনো মসজিদের পাশেই নির্মাণ করা হয় নতুন আরেকটি মসজিদ। পুরনো মসজিদটি এখন লাইব্রেরি এবং মক্তবে রূপান্তর হয়েছে।
স্থপতি আবু সাঈদ এম আহমেদ জানান, পুরনো স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে ব্যক্তি এবং বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগকে উৎসাহ দেয় ইউনেস্কো। সেজন্য ২০০০ সাল থেকে এ পুরস্কার চালু করেছে ইউনেস্কো। দোলেশ্বর হানাফিয়া মসজিদ ইউনেস্কোর মানদণ্ড পূরণ করতে পেরেছে। সাধারণত বাংলাদেশে পুরনো মসজিদ ভেঙে নতুন মসজিদ নির্মাণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে পুরনোটা রেখে নতুনটা তৈরি করা হয়েছে এবং পুরনোটাকে একেবারে আদি অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
১৮৬৮ সালে কেরানীগঞ্জের দোলেশ্বর এলাকার বাসিন্দা ও পুলিশের সাবেক দারোগা আমিন উদ্দিন আহমদ দুই গম্বুজ বিশিষ্ট একতলা এ মসজিদটি নির্মাণ করেছিল। এরপর থেকে এলাকায় নাম প্রচলন হয় দারোগা বাড়ি মসজিদ। আমিন উদ্দিনের ছেলে মইজ উদ্দিন আহম্মদ ছিলেন মসজিদের প্রথম মোতাওয়াল্লি। বংশ পরম্পরায় এই মসজিদের নির্মাণ ও সংস্কারকাজে নিয়োজিত ছিলেন খিদির বকশ ও কাদের বকশ নামের দুই সহোদর এবং মইজ উদ্দিনের পরিবার। কাদের বকশের নাতি সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক হামিদুর রহমান ১৯৬৮ সালে মিনারসহ মসজিদের বর্ধিতাংশ নির্মাণ করেন। পারিবারিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় এবং মূল অবকাঠামো অক্ষুণ্ণ রেখে মসজিদের ব্যাপক সংস্কার করেন হামিদুর রহমানের ছেলে ঢাকা-৩ আসনের সংসদ সদস্য এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।
ইউনেস্কো এক বিবৃতিতে জানায়, ‘এসব স্থাপনার মাধ্যমে ঐতিহ্যের যে বৈচিত্র্য ধরে রাখা হয়েছে সেটি সত্যিই প্রশংসার বিষয়। যেসব স্থাপনা পুরস্কার পেয়েছে সেগুলোতে টেকসই উন্নয়নের নানা দিক রয়েছে।’ দোলেশ্বর হানাফিয়া জামে মসজিদটিকে সংস্কারের মাধ্যমে পুরনো রূপে ফিরিয়ে এনে অক্ষুণ্ণ রাখা হয়েছে এর ঐতিহ্য।