রাজশাহী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৪, ০৪:০৪ পিএম | আপডেট: ২৫ আগস্ট ২০২৪, ০৪:০৫ পিএম
রাজশাহী জেলার ম্যাপ। ফাইল ছবি
রাজশাহীর পুঠিয়ায় ৭৮ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আওয়ামী লীগের আমলে নিয়োগকৃত শিক্ষক কর্মচারী এবং দলবাজরা ভীষণ আতঙ্ক উৎকন্ঠার ভিতরে রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ইতোমধ্যে উপজেলার দুইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রী ও এলাকাবাসী অভিভাবকরা মিলে আন্দোলন করছে। হয়তো তাদের আন্দোলনের মুখে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হতে পারে। এই আতঙ্কে অনেক শিক্ষক কর্মচারীদের রয়েছে।
অবশ্য যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি ও শিক্ষা বাণিজ্যে আ. লীগের দলবাজগিরি করেছেন তাদের মাঝে উৎকণ্ঠা বেশি কাজ করছে। তাই দুর্নীতিবাজদের চোখের ঘুম হারাম হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
আবার অনেকে ঠিক মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত থাকছেন না। অপরদিকে শিক্ষক-কর্মচারীদের অনেকের শিক্ষা সনদপত্র নকল বলে গুঞ্জন উঠেছে। অনেকে আবার বেসরকারি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের সনদপত্র দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে স্কুল কলেজে শিক্ষকতা করছেন। এদিকে ২০টি কলেজ রয়েছে সব বিষয়ে শিক্ষক আছে। কিন্তু ছাত্র-ছাত্রী নেই। তবুও শিক্ষকরা বেতন ভাতা উঠানোরও নজির রয়েছে।
আ. লীগ সরকার পরপর চার মেয়াদে প্রায় ১৫ বছরের বেশি ক্ষমতায় ছিল। এর মধ্যে রাজশাহী- ৫ পুঠিয়া-দুর্গাপুর আসনে দুইবার এমপি ছিলেন কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারা। এরপর ২০১৮ সালে ডা. মনসুর রহমান ৫ বছর এমপি ছিলেন। ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও নির্বাচিত হয়ে স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী হয়ে ছিলেন আবদুল ওয়াদুদ দারা।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং পুঠিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, স্বাধীনতার পর পুঠিয়া-দুর্গাপুর আসনে আবদুল ওয়াদুদ দারা মতো কেউ শিক্ষা বাণিজ্য করতে পারিনি। শুধু শিক্ষা খাত হতে তিনি কয়েক শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
অপর সাবেক এমপি ডা মনসুর রহমান ৫ বছরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে দুইশত কোটি টাকার অধিক লুটপাট করেছেন। এদের আইনের আওয়াতায় আনা উচিত।
এদিকে ২০ আগস্ট পুঠিয়া বিড়ালদহ সৈয়দ করম আলী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান ছাত্র-ছাত্রী, এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা মিলে আন্দোলনের মুখে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। তাকে সাবেক এমপি আব্দুল ওয়াদুদ দারা মোটা অংকের টাকা নিয়ে পাবনা জেলা হতে এনে মাদ্রাসায় নিয়োগ দিয়ে ছিলেন বলে জানা যায়।
গত ১৫ আগস্ট নন্দনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্র-ছাত্রীসহ এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা মিলে পদত্যাগের দাবিতে মানববন্ধন করেছে। ২৩ আগস্ট উপজেলার ধোপাপাড়া মোহনপুর আলিম মাদ্রাসার ছাত্ররা বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরে অবরুদ্ধ করে অধ্যক্ষকে।
এছাড়াও নিয়োগসহ নানা অনিয়মে জড়িত উপজেলার ভালুকগাছি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামুনুর রশিদ অবৈধভাবে আরো একটি নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যেকোনো মুহূর্তে ছাত্রছাত্রীসহ এলাকাবাসীরা ওই প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগের দাবীতে আন্দোলন শুরু করতে পারে বলেও শোনা যাচ্ছে।
আরো জানা যায় যে, ধোপাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ওবায়দুল বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষকের কাছে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ১০ লাখ টাকায় চাকরি দেওয়ার নাম করে পুরো টাকায় হাতিয়ে নেয় স্কুল সংশ্লিষ্টরা। পরে আবারও নিয়োগের সময় কর্তৃপক্ষরা আরও ৪ লাখ টাকা দাবী করে। এদিকে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করা হবে বলে কালক্ষেপণও করা হয়েছে। পরে নিয়োগ হয় ওবায়দুল নামের ওই ব্যক্তির। এবিষয়ে স্কুলটির প্রধান শিক্ষক সাংবাদিকদের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করারও চেষ্টা চালায়।
বিশেষ করে আ. লীগ সরকারের আমলে নিয়োগকৃত শিক্ষক কর্মচারীরা এবং যারা অনিয়ম দুর্নীতি ও শিক্ষা বাণিজ্যের সঙ্গে সরাসরি জড়িত শুধুমাত্র তারাই আতঙ্ক উৎকন্ঠার ভিতরে বেশি রয়েছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা লায়লা আখতার জাহান বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পূর্বের কোনো ব্যবস্থাপনা কমিটি এখন আর নেই। প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক কর্মচারী সমস্যা পড়লে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানাতে হবে। তিনি সবকিছুর সমাধান করে দেবেন।