অদ্বৈত মারুত
প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৪, ০৯:৫০ পিএম
প্রতীকী ছবি
শরতের পরতে পরতে এখন দারুণ আনন্দ বইছে, যেন ‘তোমার আনন্দ ওই এলো দ্বারে’। চারপাশে হাস্নাহেনার ঘ্রাণ, চাঁদনি রাত, আকুল করা প্রাণ-উথলে উঠছে, কী যে চনমনে সে! অপরূপ ছন্দে দোলে, ঢেউ খেলে যায় বালিকাদের নরম চুলে, কাশের পাতায়, শিউলি ফুলে! এই এলো রে শরৎ যে আজ নূপুর পায়ে বাজিয়ে ঘুঙুর হেঁটে হেঁটে-মাতিয়ে দিতে শান্ত দুপুর।
শুধু কি তাই? ‘স্থলে জলে আর গগনে গগনে/বাঁশি বাজে যেন মধুর লগনে/আসে দলে দলে তব দ্বারতলে/দিশি দিশি হতে তরণী।/আকাশ করেছ সুনীল অমল,/স্নিগ্ধশীতল ধরণী।’ শরৎ যেন দোয়েল, কোয়েল, ময়না, টিয়ের জমিয়ে বসা গানের আসর, আকাশজুড়ে থোকা থোকা মেঘের বাসর, শ্বেত-নীলের ঝকমকে রোদ, হেসে হেসে দূর্বাঘাসে শিশির মাখিয়ে এই যে এলো। প্রকৃতিজুড়ে মৃদুমন্দ বাতাসের কর্পূর মাখিয়ে শরৎ এলো চণ্ডীদাসের কবিতার মতোই স্নিগ্ধ হয়ে-‘ভাদর মাঁসে অহোনিশি অন্ধকারে।/শিখি ভেক ডাহুক করে কোলাহলে/তাওনা দেখিবো যঁবে কাঞ্চির মুখ/চিন্তিতে চিন্তিতে মোর ফুটি জায়ির বুক।’
আহা, শরৎ এলো অগ্নিমশাল হাতে প্রকৃতি পুড়িয়ে দেওয়া গ্রীষ্ম, মুষলধারায় বৃষ্টিতে হাবুডুবু খাওয়া বর্ষার পর, যখন আকাশজুড়ে এক নতুন দৃশ্যপট। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়-‘আজি কি তোমার মধুর মুরতি/হেরিনু শারদ প্রভাতে!/হে মাত বঙ্গ, শ্যামল অঙ্গ/ঝলিছে অমল শোভাতে...।’
আহা, শরৎ মানেই বর্ষাজলে ধরণীতলে আনন্দ আর আনন্দ; রঙধনুর সাতরঙ খেলা। বেলা কাটে শ্যামলিমায় বিবর্ণ-বিধুর-নিঃসঙ্গতায়। নায়ে পাল তুলে মাঝি গায় ভাটিয়ালি গান আর নদী, বিল, পুকুর ও হাওরের স্বচ্ছ পানির বুকে শ্বেত শাপলার এতটুকু থাকে না অভিমান; শাপলা দোলে, নাচে, বীণার তারে সুর ওঠে গাছে। বাংলার বুকে শরৎ আসে জীবনানন্দে; যেমন এই যে এসেছে-‘সন্ধ্যার অন্ধকারে ধানখেতে, আমবনে, অস্পষ্ট শাখায়/কোকিলের ডাক শুনে চোখে তার ফুটেছিল কুয়াশা কেবল।’