নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২৪, ০২:৪৪ পিএম
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়েছে বিপুল পরিমান অর্থ। ফাইল ছবি
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়েছে বিপুল পরিমান অর্থ। এসব অর্থ পাচারে জড়িত ছিল সাবেক সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী, এমপি, নেতারা ছাড়াও সরকার ঘনিষ্ট লোকজন। আর এসব অর্থপাচারের পথ সুগম করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু অসাধু কর্মকর্তা। এছাড়া দেশের অর্থপাচার ঠেকানোর দায়িত্বে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)-এর শীর্ষ কর্মকর্তাও ছিলেন এই যোগসাজশে।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) সংস্থাটির শীর্ষ কর্মকর্তা মাসুদ বিশ্বাস থেকে শুরু করে অন্তত একডজন কর্মকর্তা এস আলম, সালমান এফ রহমানসহ শীর্ষ ব্যবসায়ীদের দ্বারা সুবিধাভোগী। তাদের থেকে সুবিধা দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েকশ কোটি টাকা। তাদের বিরুদ্ধে উঠেছে অর্থ পাচারে সহায়তা ও ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ। এমনকি পাচার ঠেকানোর দায়িত্বে থাকা সংস্থাটির কর্মকর্তারা উল্টো অর্থ পাচারে সহায়তা করেছেন বলেও অভিযোগ আছে। বেক্সিমকো, নাসাসহ রাজনৈতিকভাবে বিভিন্ন প্রভাবশালী গ্রুপের অর্থ পাচারের সময় সম্পূর্ণ চুপ ছিল বিএফআইইউ। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে দেওয়া লিখিত অভিযোগপত্রে এসব তুলে ধরা হয়েছে
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে দেওয়া লিখিত অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, সালমান এফ রহমানের বেক্সিমকো গ্রুপ এবং নজরুল ইসলাম মজুমদারের নাসা গ্রুপের সন্দেহজনক লেনদেন কখনো তদন্ত করা হয়নি। একজন অতিরিক্ত পরিচালক এবং বিএফআইইউ প্রধান তারা নিজেরাই গ্রুপ দুটির লেনদেন দেখভাল করতেন। সে কারণে এসব কেস কেউ তদন্ত করার সাহস পেতেন না। অর্থাৎ বেক্সিমকো এবং নাসা গ্রুপের অর্থ পাচারে বিএফআইইউর নীরব সায় ছিল। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী কোনো ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের অর্থ পাচার ঠেকানো তো দূরে থাক; ন্যূনতম চেষ্টাও করেনি বিএফআইইউ। বরং দেখা গেছে উল্টো চিত্র।
অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, বিএফআইইউর তিনজন অতিরিক্ত পরিচালক, দুজন যুগ্ম পরিচালক এবং একজন উপপরিচালক বিভিন্ন সময়ে শীর্ষ দুর্নীতিবাজদের থেকে ঘুষের মাধ্যমে অনিয়মে সহায়তা করেছেন। সহায়তা করেছেন অর্থ পাচারেও। পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভুয়া তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করে হয়রানিসহ ঘুষ দাবি করেছেন। ঘুষ না দিলে দুদকে অভিযোগ পাঠানোসহ নানাভাবে হেনস্তার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
এদিকে এস আলম, সালমান এফ রহমানসহ বড় গ্রুপগুলো শুধু গভর্নরকেই কিনে নেননি। এই কাজে সহায়তার জন্য তারা নিয়োগ দিয়েছেন একের পর এক ডেপুটি গভর্নর ও নির্বাহী পরিচালক। ডেপুটি গভর্নরদের তালিকায় আছেন সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরী, এস এম মনিরুজ্জামান, আহমেদ জামাল, কাজী ছাইদুর রহমান, আবু ফারাহ নাসের ও খুরশিদ আলম। এদের মধ্যে এস কে সুর চৌধুরী এবং মনিরুজ্জামান এরই মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত। এ ছাড়া ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা কাজী ছাইদুর রহমান, আবু ফারাহ নাসের ও খুরশিদ আলমকে পদত্যাগে বাধ্য করেছেন।
শুধু ডেপুটি গভর্নররাই নন, এই তালিকায় রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান অন্তত অর্ধশত নির্বাহী পরিচালক। ভয়াবহ লুটপাট, স্বেচ্ছাচারিতা আর জাতীয় নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রীয় স্বার্থবিরোধী কাজে জড়িয়ে পড়ায় সম্প্রতি ডেপুটি গর্ভনরের খুঁজে গঠিত সার্চ কমিটির কাছে অভিযোগ করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। তারা হলেন নির্বাহী পরিচালক দেবদুলাল রায়, মেজবাউল হক ও আনোয়ারুল ইসলাম। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বর্তমান নির্বাহী পরিচালকদের অন্তত অর্ধডজন কর্মকর্তা এস আলম ও সালমান এফ রহমানকে সহায়তা দিতে কাজ করেছেন।