ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০২৪, ১২:১৩ পিএম
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল কাদের। ছবি: ঢাবি প্রতিনিধি
দেশের ১১ জেলায় চলমান বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় অর্ধ কোটি মানুষ। পানি বন্দি এইসব মানুষের পাশে দাঁড়াতে গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) শুরু হয় বন্যাকবলিত জেলায় রেসকিউ অপারেশন এবং ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি। গত সাতদিনে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন তারা। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা এবং বয়সের মানুষ অংশ নেয় এই চলমান গণত্রাণ কর্মসূচিতে। পরবর্তীতে যুক্ত হয় চিকিৎসা সেবা এবং গণ রান্নার মতো কর্মসূচি। শুকনো খাবার থেকে শুরু করে ওষুধ-পোশাক সকল নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বন্যার্তের সরবরাহ করা হচ্ছে। গত সাতদিনে ইতোমধ্যে বন্যাদূর্গত এলাকায় ৮২টি ট্রাক ত্রাণ বোঝাই পাঠানো হয়েছে। ঢাবিতে চলমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণত্রাণ কর্মসূচিতে গত সাতদিনে এবং গতকাল বুধবার রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বমোট সংগ্রহ করা হয়েছে ৭ কোটির অধিক টাকা। এছাড়া এই সময়ে ত্রাণ কার্যক্রমে বিভিন্ন খাতে ব্যয় করা হয়েছে ৭১ লাখ ২০ হাজার ৬৪৪ টাকা।
গতকাল বুধবার (২৮ আগস্ট) রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল কাদের বলেন, গত ২১ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বন্যা এবং এর ফলে সৃষ্ট মানবিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বৈষমাবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গণত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচি ঘোষণা করে। ২২ আগস্ট তারিখ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে একটি বুথের মাধ্যমে নগদ টাকা এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ করা শুরু হয়। উক্ত কর্মসূচিতে অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়ার ফলে পর্যায়ক্রমে ডাকসু ক্যাফেটেরিয়া এবং সেন্ট্রাল ফিল্ড নিয়ে আমাদের কর্মসূচি চলমান রয়েছে।
সাতদিনে অর্থ সংগ্রহ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত ২২ আগস্ট থেকে ২৮ আগস্ট রাত ৯টা পর্যন্ত আমাদের নগদ অর্থ ৬ কোটি ৬৮ লাখ ৫০ হাজার ১০০ টাকা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়া একই তারিখে রাত ৯টা পর্যন্ত মোবাইল ব্যাংকিং মাধ্যমে ৮৩ লাখ ৮৮ হাজার ৩৮৮ টাকা সংগ্রহ করা হয়। এদিকে গত ২২ আগস্ট থেকে ২৮ আগস্ট রাত ৯টা পর্যন্ত ব্যাংকিং মাধ্যমে ২৬ লাখ ৩৭ হাজার ৭৯০ টাকা সংগ্রহ করা হয়। সবমিলিয়ে মোট সংগ্রহ করা হয়েছে ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৬ হাজার ২৭৮ টাকা।’
মোট সংগ্রহীত অর্থের মধ্যে ৫ কোটি ৮৪ লাখ ১৭ হাজার ১৪৭ টাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোনালী ব্যাংক শাখায় জমা দেওয়া হয়েছে, বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক লুৎফর রহমান।
এদিকে সংগ্রহীত অর্থ থেকে ত্রাণ সামগ্রী হিসেবে খেজুর, মুড়ি, বিস্কুট, গুড়, দড়ি, কার্টার, কলম, রিক্সাভাড়া, ভ্যানভাড়া, পলিথিন, বস্তা, চিনিসহ বিভিন্ন সামগ্রীতে মোট ব্যয় হিসেবে ৭১ লাখ ২০ হাজার ৬৪৪ টাকা খরচ হয়েছে বলে জানানো হয়।
চলমান ত্রাণ কার্যক্রম ও বুধবার থেকে গণ রান্না কর্মসূচি প্রসঙ্গে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টিএসসি থেকে সংগ্রহীত এবং ক্রয়কৃত সামগ্রী ব্যবহার করে একটি পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার এবং ওষুধের প্যাকেজ তৈরি করা হয়। এরকম ৮শ-১২শটি প্যাকেজ এবং ২০-৩০ কেস পানি ট্রাকে করে সরবরাহ করা হয়। এছাড়া বন্যাকবলিত এলাকায় ২২ আগস্ট থেকে ২৮ আগস্ট রাত ৯টা পর্যন্ত যে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচলনা করা হয় যেখানে ৮২টি ট্রাকের মাধ্যমে প্রায় ১ লাখের অধিক প্যাকেজ পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে ৪ হাজার প্যাকেজ হেলিকপ্টার যোগে বন্যা কবলিত দুর্গম অঞ্চলগুলোতে বণ্টন করা হয়েছে এবং ৫ লাখ ৯৬ হাজার ৫০০ টাকা নগদ সহায়তা দেয়া হয়েছে।
গণ রান্না কর্মসূচি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের গণ রান্না কর্মসূচি স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় কুমিল্লার ৪ উপজেলা ও খুলনার পাইকগাছা প্রায় ৫০ হাজার মানুষের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং বৃহস্পতিবার থেকে এটি অন্যান্য বন্যাকবলিত জেলায়ও একই রকম কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত বুধবার (২১ আগস্ট) রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে বন্যাকবলিত জেলায় রেসকিউ অপারেশন এবং ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি চালু এবং পাবলিক ফান্ড রেইজিং উদ্যোগ শুরুর কথা জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার। এরপরই বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয় ঢাবির টিএসসিতে গণত্রাণ সংগ্রহ। শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি কেন্দ্রিক ওই ত্রাণ সংগ্রহের কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে, পরবর্তীতে জায়গা সংকুলনের কারণে সেখান থেকে তার সরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে স্থানান্তর করা হয়। যদিও টিএসসিতে নগদ অর্থ ও ওষুধ এবং কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ত্রাণ সংগ্রহের কার্যক্রম সপ্তম দিনের মতো চলমান রয়েছে।