সময় ১৮ দিন, অপশন ২টি, কী করবেন শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:১৮ পিএম | আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩২ পিএম

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত

গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন ভারতে অবস্থান করছেন। তার কাঁধে ঝুলছে হত্যা ও দুর্নীতির শতাধিক মামলা, বাতিল হয়েছে কূটনৈতিক পাসপোটও (লাল পাসপোর্ট)। প্রস্তুতি চলছে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দায়েরের। এমন অবস্থায়, তার ভারতের বাইরে যাওয়া অনেকটাই মুশকিল হয়ে পড়েছে। 

ভারতের আইন অনুযায়ী বিনা ভিসায় শেখ হাসিনা সে দেশে ৪৫ দিন থাকতে পারবেন। এর মধ্যে কেটে গেছে ২৭ দিন, হাতে আছে আর ১৮ দিন। এই অবস্থায় বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে দুটি পথ খোলা রয়েছে। হয় তিনি ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইবেন, নয়তো দেশে ফিরে আসবেন। এই মুহূর্তে আর কোনো অপশন নেই ৭৭ বছর বয়সী এই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর হাতে।

এদিকে এমন পরিস্থিতি নিয়ে বেশ চাপে পড়েছে মোদি সরকার। ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আবারও কি তারা শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে আরও কিছু প্রশ্ন সামনে চলে আসে, শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বৈরি সম্পর্ক তৈরি করবে? 

শেখ হাসিনাকে নিজের দেশে আশ্রয় দিয়ে এর মধ্যেই বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক এখন অনেক তিক্ততায় পরিণত হয়েছে! শেখ হাসিনাবিরোধী দলের মুখে ভারতবিরোধী সেন্টিমেন্ট আগের থেকে অনেক জোরালো। বহির্বিশ্বেও ভারতের সাম্প্রতিক তৎপরতা নিয়ে নানা প্রশ্ন দানা বেঁধেছে।

এদিকে পাসপোর্ট বাতিল হয়ে যাওয়ায় শেখ হাসিনা এখন উদ্বাস্তু। অন্য কোনো দেশে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও তা খুবই কঠিন। এমন পরিস্থিতিতে ভারত কি শেখ হাসিনাকে দীর্ঘ মেয়াদি ঠাঁই দেবে? 

দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর হাসিনার ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো স্পষ্ট ধারণা দেননি। এই অবস্থায় হাসিনা যদি ভারতের রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে বসেন তখন তাদের নীতি কী হবে তা নিয়ে উভয় সংকটে প্রশাসন। রাজনৈতিক পণ্ডিতরা দ্বিধাবিভক্ত। হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে চাপ বাড়বে ভারতের উপর। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এরকমই একটা ইঙ্গিত দিয়েছেন।

অন্যদিকে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর আনুযায়ী, ভারতের উদ্বেগ সেভেন সিস্টার নিয়ে। হাসিনার জমানায় স্বস্তি এসেছে। প্রতি বিপ্লবের পথে গিয়ে যেটুকু অর্জন তা হারিয়ে যেতে পারে। এই আশঙ্কাও তাদের মধ্যে রয়েছে। তাদের ভয়, হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ দেখাতে গিয়ে চীনের আগমন ঘটে কিনা! সে নিয়েও তাদের মধ্যে সংশয় রয়েছে। তাছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেকটা নীরবেই তাদের অবস্থান সুসংহত করেছে। ঢাকার রাষ্ট্রক্ষমতায় এখন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। যার সঙ্গে রয়েছে পৃথিবীর অধিকাংশ রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানের সরাসরি যোগাযোগ। তিনি চাইলে অন্তত একশ’টি দেশের সরকারপ্রধানের সঙ্গে যখন তখন কথা বলতে পারেন। এ কারণে ভারত সতর্ক পা ফেলছে।

কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা নরেন্দ্র মোদির সরকারকে আবেগতাড়িত না হয়ে বাস্তব সিদ্ধান্তের পক্ষে মত দিয়েছেন। পরিবর্তিত এই অবস্থায় হাসিনার দেশে ফেরা ছাড়া আর কী বিকল্প রয়েছে? গণহত্যার অভিযোগে তিনি অভিযুক্ত হতে চলেছেন। পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক দেশ তাকে গ্রহণ করতে চাইবে না। সময় যত গড়াচ্ছে বাংলাদেশ নিয়ে ভারতীয়দের মনোভাবেও পরিবর্তন আসছে। দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশের সঙ্গেই ভারতের সুসম্পর্ক নেই। যেটুকু ছিল বাংলাদেশের সঙ্গেই। ভুল নীতি কৌশল গ্রহণ করে সেটুকু হারাতে চায় না ভারত। কোটা বিরোধী আন্দোলন হাসিনার ভবিষ্যৎ যেমন ফিকে করে দিয়েছে তেমনি বাংলাদেশে ভারতের অবস্থান অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ করে দেয়।

সাম্প্রতিক বন্যা নিয়ে বাংলাদেশিদের প্রতিক্রিয়া দেখে ভারতের নেতৃত্ব বেশ চিন্তিত বলেই মনে হচ্ছে। উত্তরে চীন, পশ্চিমে পাকিস্তান। পূর্বে আরেকটি নিরাপত্তা ফ্রন্ট ভারত খুলবে কি-না তা নিয়ে হিসাবনিকাশ চলছে। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা যদি করা হয় তা হবে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের গভীর নজর রয়েছে সর্বশেষ ঘটনাবলির উপর।

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh