নারী প্রেসিডেন্টের জন্য কতটা প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র

অরুন্ধতী সুরঞ্জনা

প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:০৮ পিএম

কমলা হ্যারিস। ছবি: সংগৃহীত

কমলা হ্যারিস। ছবি: সংগৃহীত

বিভিন্ন জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের জনতা এই মুহূর্তে কমলা হ্যারিসকে বেশি সমর্থন দিচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে নতুন এক জনমত জরিপে সাত পয়েন্টে এগিয়ে গেছেন ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির এই প্রার্থী। 

ফেয়ারলেগ ডিকিনসন ইউনিভার্সিটি থেকে ২৩ আগস্ট প্রকাশিত জরিপে দেখা গেছে, জরিপে অংশগ্রহণকারী ৫০ শতাংশ মার্কিন নাগরিক ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলাকে সমর্থন দিয়েছেন। অন্যদিকে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছেন ৪৩ শতাংশ মানুষ। অপর সাত শতাংশ বলছে, তারা এই দুজনের বাইরে অন্য কাউকে ভোট দেবেন। এই জরিপে অবশ্য দেখা গেছে, নিজ নিজ দলে সমান হারেই (৯৫%) সমর্থন পেয়েছেন ট্রাম্প ও কমলা। জরিপে বেশ পিছিয়ে পড়া ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, ১০ সেপ্টেম্বর যে বিতর্ক হওয়ার কথা ছিল এবিসি নিউজের সেটে, কমলার সঙ্গে সেই বিতর্কে তিনি অংশ না-ও নিতে পারেন। ট্রাম্প তার নিজের মালিকানাধীন সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘এবিসি ফেক নিউজ’-এর সেটে কেনই বা বিতর্ক করবেন তিনি। তার দাবি, এবিসি নিউজ পরিচালিত হয় কমলার প্রিয়তম বন্ধুর নেতৃত্বে। তার আশঙ্কা, বিতর্কের আগেই প্রশ্নমালা কমলাকে দিয়ে দিতে পারে এবিসি নিউজ।

এবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে ৫ নভেম্বর। এবারও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জয়ের জন্য ডেমোক্র্যাটদের আস্থার নাম ছিল বাইডেন। কিন্তু নির্বাচনী বিতর্কে অত্যন্ত খারাপ করার কারণে দলের দাতা ও নেতাদের অব্যাহত চাপের কাছে নতি স্বীকার করে তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিলে দৌড়ে নামেন কমলা। ভারতীয় বংশোদ্ভূত ৫৯ বছর বয়সী এই নেতা গত সপ্তাহে দলটির চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন। এর পরই জনমত জরিপের ফল প্রকাশ করে ফেয়ারলেগ ডিকিনসন ইউনিভার্সিটি। 

২০২০ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রার্থী হিসেবে ডেমোক্র্যাটরা ভরসা করেছিল বাইডেনের ওপর। বাইডেন সেই নির্বাচনে জয়ও পান। কিন্তু এখন অব্দি পরাজয় স্বীকার করেননি ট্রাম্প, উল্টো কোনো প্রমাণ ছাড়াই তার দাবি, ওই নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি হয়েছে। এবার প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত হওয়ার পর প্রথম বক্তব্যে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ক্ষমতায় এলে ভোট জালিয়াতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। আর কমলা সম্পর্কে বলতে গিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, বাইডেনের চেয়েও খারাপ নেতা হচ্ছেন কমলা, আর তাকে হারানো তার পক্ষে আরও সহজ হবে। জরিপের চিত্র তা বলে না। অবশ্য ২০১৬ সালে ৩০ লাখের বেশি জনপ্রিয় ভোট পেয়েও ইলেক্টোরাল কলেজের নিয়মে ধনকুবের ট্রাম্পের কাছে হেরে যান সাবেক ফার্স্ট লেডি ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। 

হিলারি পারেননি বলে কমলা পারবেন না, এমন কথা নেই। ট্রাম্পকে হারাতে পারলে তিনিই হবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। তিনি দেশটির প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট। প্রকৃত অর্থে একজন নারী প্রেসিডেন্টকে গ্রহণ করতে যুক্তরাষ্ট্রের সমাজ কতটা প্রস্তুত? যে যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রের মোড়কে দেশে দেশে গোলা ও গুলি বেচতে ব্যস্ত থাকে, সেই দেশের মানুষ কি প্রগতিশীল, উদারবাদী, সাম্যবাদী, নারীর অগ্রায়নে বিশ্বাসী সমাজ গড়নে বদ্ধপরিকর?

এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস আমার্স্টের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক তাতিসি তেতা, সহযোগী অধ্যাপক জেসে রোডস ও পিএইচডি গবেষক অ্যাডাম এইশেন ‘দ্য কনভারসেশনে’ প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবারের মতো নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার বাস্তব সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। তবে নারীবিদ্বেষ এখনো শক্ত শেকড় গেড়ে আছে মার্কিন সমাজে।’ সব যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও কেবল নারী হওয়ার জন্য ষোলোর নির্বাচনে এই বিদ্বেষের শিকার হয়েছিলেন হিলারি। তবে অনেকে আশা করছেন, সময় বদলেছে, সেই সঙ্গে নারী নেতৃত্বকে মেনে নেওয়ার প্রবণতাও বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। ভোটারদের মন কাড়তে কোনো বাধা হবে না কমলার লিঙ্গ। 

কিন্তু এরপরও রিপাবলিকান দলীয় সমর্থকরা মনে করছেন, কমলা যে নারী-এটাকেই হাতিয়ার করে তারা এবার নির্বাচনে জয় ছিনিয়ে নেবে। কমলাকে নিয়ে স্বয়ং ট্রাম্প স্বভাবসুলভ যে ভাষায় আক্রমণ করছেন, এতে নারীবিদ্বেষ আরও ছড়িয়ে পড়ছে। ট্রাম্প এর আগে কমলাকে ‘খেলনা’ ও ‘অবুদ্ধিদীপ্ত’ বলে মন্তব্য করেছেন। এখন তো তার চেহারা নিয়েও কুকথা বলছেন ট্রাম্প। মার্কিন গণমাধ্যমে এও শোনা গেছে যে, ব্যক্তিগত বলয়ে কোনো এক আলাপে কমলাকে ট্রাম্প, এমনকি ‘দুশ্চরিত্রা’ বলে অভিহিত করেছেন। 

বিয়ের আগে কমলার প্রেমের সম্পর্ক নিয়েও প্রচারসভায় কুৎসা ছড়িয়েছে ট্রাম্পের শিবির। ট্রাম্পকে সমর্থনকারী এক ভাষ্যকার ফক্স বিজনেস নিউজে কমলাকে ‘সত্যিকারের বাজপাখি মেয়ে’ বলে গালি দিয়েছেন। এই ধরনের গৎবাঁধা নারীবিদ্বেষকে জয় করে সত্যি কি জিততে পারবেন কমলা? 

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

Design & Developed By Root Soft Bangladesh