শাহেরীন আরাফাত
প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৩৬ পিএম
যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা। ফাইল ছবি
অর্থবর্ষের পর পর দুটি ত্রৈমাসিকে জিডিপি পতন হলে বিশেষজ্ঞ এবং অর্থনীতিবিদরা মন্দার আশঙ্কা করেন। ‘ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চ’ মন্দাকে কোনো দেশের অর্থনৈতিক কার্যকলাপের উল্লেখযোগ্য পতন হিসেবে ব্যাখ্যা করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারাল রিজার্ভের নীতিনির্ধারণী সংস্থা ‘ফেডারেল ওপেন মার্কেট কমিটি’ জুন মাসে অনুমান করেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে সে দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি হতে পারে মাত্র এক শতাংশ। ফোর্বসের মতে, ২০২২ সাল থেকে অন্তত একটি ইঙ্গিত যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন আর্থিক মন্দাকে নির্দেশ করছে। দাবির সমর্থনে ট্রেজারি নোটের বৃদ্ধির বিষয়টির দিকে ইঙ্গিত করেছে তারা।
বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রে আর্থিক মন্দার আশঙ্কা বাড়ছে। দেশটির শ্রম মন্ত্রণালয়ের নতুন প্রকাশিত পরিসংখ্যান অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা জোরদার করছে। বেকারত্বের হারের এই বৃদ্ধি বাজারের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। দেশটিতে বেকারত্বের হার ৪.৩ শতাংশে পৌঁছেছে। বিশ্লেষকদের মতে, বেকারত্বের এমন বৃদ্ধি আসন্ন মন্দার লক্ষণ।
মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাইয়ে বেকারত্বের হার ০.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪.৩ শতাংশে পৌঁছেছে। কোম্পানিগুলো তাদের নিয়োগের গতি মন্থর করে নিয়েছে এবং মাত্র ১ লাখ ১৪ হাজার নতুন চাকরি যোগ হয়েছে, যা অর্থনীতিবিদদের প্রত্যাশার তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। মজুরিও আগের মাসের তুলনায় ০.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও এর গতি ছিল ধীর।
আগস্টের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রসহ গোটা বিশ্বে একাধিক শেয়ারবাজারে পতন দেখা গেছে। জাপানের শেয়ারবাজারে ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি পয়েন্টে ধস নামতে দেখা গেছে ৫ আগস্ট। তখন ৬ শতাংশ পড়ে যায় দেশটির স্টক মার্কেট। একই দিনে বাজার খোলার সঙ্গে সঙ্গেই ধস দেখা গেছে সেনসেক্স এবং নিফটি৫০-এ। এ ছাড়া তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, হংকং, সাংহাইয়ে শেয়ারবাজার ধাক্কা খেয়েছে। বিশ্ব বাজারের পতনের এই প্রভাব পড়ে ভারতের শেয়ারবাজারেও। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তীব্র পতনের কারণে ভারতের শেয়ারবাজার সেদিন দরপতনের সঙ্গে খুলেছে।
মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক উচ্চ সুদের হার বজায় রেখে মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার চেষ্টা করছে। অনেক অর্থনীতিবিদ ও বিনিয়োগকারী আশা করছেন, শ্রমবাজার শান্ত হওয়ার লক্ষণ দেখা গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুখ্য সুদের হার কমিয়ে দেবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে মন্দা আশঙ্কার মাঝেও বেড়েছে খুচরা বিক্রি। পণ্যমূল্য ও সুদহার দুটিই বেশি হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি আরও দুর্বল হতে পারে বলে বিশ্লেষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। সম্প্রতি সে উদ্বেগ কিছুটা কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ জানিয়েছে, জুন-জুলাইয়ে দেশটির খুচরা খাতে বিক্রি ১ শতাংশ বেড়েছে, যা ২০২৩ সালের জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ। এ সময় গাড়ি, ইলেকট্রনিকস, সরঞ্জাম ও গ্রোসারি পণ্যের বিক্রি উল্লেখযোগ্য বেড়েছে। খুচরা বিক্রয়সংক্রান্ত জুলাইয়ের তথ্যে দেখা গেছে, উচ্চ সুদহারের চাপে কিছুটা মন্থর হলেও মার্কিন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এখনো স্থিতিশীল এবং দেশটির প্রবৃদ্ধির প্রধান চালিকাশক্তি ভোক্তারা এখনো খরচ করতে ইচ্ছুক।
নাগরিকরা বেশি খরচ করায় জিডিপিতে এর উল্লেখযোগ্য অবদান থাকবে বলে এক পূর্বাভাসে বলেছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান মরগ্যান স্ট্যানলির অর্থনীতিবিদরা। এ বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস সংশোধন করে বলেছেন, ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় জিডিপি বাড়বে ২.৩ শতাংশ। আগের পূর্বাভাসে তারা ২.১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা বলেছিলেন। তবে দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির সম্প্রসারণের হার ছিল ২.৮ শতাংশ।
সব মিলিয়ে সর্বশেষ তথ্য এমন এক অর্থনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা ‘সফট ল্যান্ডিংয়ের’ দিকে যাচ্ছে। সফট ল্যান্ডিং বলতে এমন পরিস্থিতিকে বোঝায় যেখানে মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য অর্থনীতির গতি যথেষ্ট ধীর হয় কিন্তু মন্দা দেখা দেয় না। যুক্তরাষ্ট্রেও ফেডারেল রিজার্ভ মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য সুদহার এমনভাবে বাড়িয়েছে যাতে মন্দা দেখা না দেয়।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, একের পর এক অর্থনীতি সংক্রান্ত জট মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে যুক্তরাষ্ট্রে। সরকার অর্থনীতি সামলাতে হোঁচট খাচ্ছে। এতে খুব শিগগিরই বিপদের আশঙ্কা না থাকলেও ভবিষ্যতের জন্য তা অশনি সংকেত হতে পারে।