অণুগল্প
খলিলুর রহমান
প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৩৫ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
আমরা তখন প্রাইমারী স্কুলে পড়ি। জীবন বলতে তখন শুধু বুঝি শৈশবের দুরন্তপনা।
বনে-বাদাড়ে ঘুরে বেড়ানো,দল বেঁধে পুকুরে সাঁতার কাটা আর প্রতিবেশীর ফলগাছে হানা দেয়া।
এসব করে মহানন্দে দিন কাটতো আামাদের। স্কুলে যাওয়ার চেয়ে স্কুল পালানোর পরিমাণই বেশি
ছিল।
আমাদের বিকেলের সময়টা একটু ভিন্নরকম ছিল। কাকতালীয়ভাবে আমার শৈশবের
সমবয়সী বন্ধুদের প্রায় সবার সঙ্গীতের প্রতি তীব্র আকর্ষণ ছিল। বিকেলবেলায় আমরা শীল
বাড়ির পুকুরপাড়ে বিশাল আমগাছের নিচে বসে মুগ্ধ হয়ে ময়নাল ভাইয়ের বাঁশির সুর শুনতাম।
ময়নাল ভাই বয়সে আমাদের অনেক বড়। কিন্তু আমাদের সাথে বন্ধুর মতোই মিশতেন। ময়নাল ভাই
আমগাছের নিচে বাঁশি নিয়ে বসতেন। আমরা সবাই তার সামনে গোল হয়ে চুপচাপ বসতাম। তিনি
দূর দিগন্তের দিকে উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছুক্ষণ কী যেন ভাবতেন। তারপর চোখ বন্ধ করে
ঠোঁটে বাঁশি লাগিয়ে করুণ সুর তুলতেন। আহ! মন কাতর করা সেই সুর। আমরা মন্ত্রমুগ্ধের
মতো তার বাঁশির সুরের তালে মাথা দোলাতাম।
ময়নাল ভাই ছিলেন মনির খানের গানের চরম ভক্ত। তিনি বাঁশি বাজানো শুরু
করতেন মনির খানের গান দিয়ে এবং শেষও করতেন তার গান দিয়েই। ভাই যখন বাঁশিতে 'খড়কুটার
এক বাসা বাঁধলাম বাবুই পাখির মতো' গানটার সুর তুলতেন, আমরা নিজেদের অজান্তেই সুরের
তালে তালে মিনমিন করে গাইতাম। মাঝে মাঝে বাঁশি বাজানো থামিয়ে দিয়ে খালি গলায় গাইতেন।
তার খালি গলার গানও চমৎকার। আমাদের শৈশবের বিকেলবেলার আনন্দের একটা বড় উৎস ছিল ময়নাল
ভাইয়ের মধুময় বাঁশির সুর।
আমাদের শৈশবে দেখা সুরের রাজা সেই ময়নাল ভাই এখন মানসিক ভারসাম্যহীন। সবসময় হাসি-খুশি, আনন্দ-উল্লাসে মেতে থাকা ময়নাল ভাই এখন ভীষণ চুপচাপ। সারাদিন শুয়ে থাকেন বিছানায়। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বিছানা ছেড়ে উঠেন না। কারো সাথে কোন কথা বলেন না। পাড়াপড়শি অনেকে বলাবলি করে তাকে নাকি কেউ তাবিজ করেছে। অনেক ডাক্তার দেখানো হয়েছে। তবে আর্থিক অসঙ্গতির কারণে উচ্চ-চিকিৎসা করা সম্ভব হয় নি। ভালো চিকিৎসা পেলে হয়তো ময়নাল ভাই সুস্থ হয়ে উঠতেন। আমরা ফিরে পেতাম সেই প্রিয় গান, প্রিয় সুর।